ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পাকুন্দিয়া প্রথম কাশ্মীরি আপেল কুল চাষে বাম্পার ফলন

হুমায়ুন কবির কিশোরগঞ্জ (পাকুন্দিয়া) প্রতিনিধি
🕐 ৫:৩১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের খামা গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম রুবেল নামের এক পুলিশ সদস্য ইন্টারনেট থেকে একটি ভিডিও দেখে শখ করে তার বন্ধু একই এলাকার আংগিয়াদি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হামিমুল হক সোহাগের পরামর্শে ১৫ শতক জমিতে কাশ্মীরি কুলের বাগান করেছেন।

পাবনা এলাকা থেকে তিনি ১৬০টি গাছের চারা এনে অনাবাদী জমিতে রোপণ করেছিলেন। কিন্তু শখের এ কাশ্মীরি কুল চাষে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। হালকা গোলাপি, সবুজ ও হালকা হলুদের মাঝের অংশজুড়ে লালচে বর্ণ। দেখতে অনেকটা মাঝারি আকৃতির আপেলের মতো। বড় কুলের ওজন প্রায় ১০০ গ্রামের মতো খেতে সুস্বাদু।

এ কুলের রং যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। প্রতিদিন আশপাশসহ অন্যান্য এলাকার উৎসুক জনতা কাশ্মীরি কুল দেখতে ওই বাগানে ভিড় করছেন। আবার অনেকে পরামর্শ নিয়ে চাষও শুরু করছেন।

জানা যায়, এ জাতের কুল কাশ্মীরে চাষাবাদ হয়ে থাকে। বছরখানেক আগে বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায়ও চাষ শুরু হয় কাশ্মীরি জাতের কুল। আকর্ষণীয় বর্ণের, খেতে সুস্বাদু ও আকারে বড় হওয়ায় এর কদর অনেক বেশি। এ জাতের কুল চাষ করে অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তাই অনেক সৌখিন চাষিই বাণিজ্যিকভাবে কাশ্মীরি জাতের কুল চাষে ঝুঁকছেন।

সরজমিন উপজেলার খামা গ্রামের ওই কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের চারপাশসহ উপরের অংশেও মশারি আকৃতির জালে আবৃত করে রাখা হয়েছে। পাখি, ইঁদুর, বাদুর ও গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষা পেতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এজন্য কুল নষ্টের পরিমাণ কমে গেছে। বাগানের কাছে গেলেই চোখে পড়ে লালচে বর্ণের কাশ্মীরি আপেল কুলের। ৫ থেকে ৮ ফুট উচ্চতার গাছগুলোর অংশ জুড়েই থোকায় থোকায় কুল আর কুল। প্রতিটি গাছে ব্যাপক পরিমাণে কুল ধরেছে। কুলের আকৃতিও বেশ বড়।

১৫ শতক জমির বাগানে ১৬০টি গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি করে কুল পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাজার দরও বেশ ভালো। প্রতি কেজি কাশ্মীরি কুল ১০০ থেকে ১২০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ওই বাগানের মালিক আনোয়ারুল ইসলাম রুবেল জানান, তিনি পুলিশে চাকরি করেন। বর্তমানে ঢাকা স্পেশাল ব্র্যাঞ্চে কর্মরত। প্রথম বছরেই গাছে কুল ধরেছে। এতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

ইতিমধ্যে অনেক পাইকার তার কাশ্মীর কুল বাগান থেকে এসে কিনে নিচ্ছেন। তাছাড়া প্রতিদিন উৎসুক লোকজন বাগান দেখতে আসছেন। অনেকে আবার পরামর্শ ও চাষাবাদ পদ্ধতি জেনে নিয়ে চাষও শুরু করেছেন।

শখ থেকে বাগান করলেও এখন তা বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। এতে তিনি বেশ লাভবান হবেন বলে জানান।

আংগিয়াদী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক সোহাগ জানান, কৃষি অধিদফতর কতৃক মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রত্যেক উপজেলায় একটি গ্রামকে ফল গ্রাম ঘোষনা করা হয়েছে, এরই ধারাবাহিকতায় পাকুন্দিয়া উপজেলার খামা গ্রামকে ফলগ্রাম হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। খামা গ্রামের মধ্যে অন্যান্য ফল বাগানের মধ্যে আনোয়ারুল ইসলাম রুবেলের কাশ্মীর কুল বাগানটি অন্যতম।

যে বাগাটি স্হাপন করা হয়েছে আট মাস আগে এখন ফল বিক্রয় শুরু হয়েছে এই জমিতে অন্যান্য ফসল আবাদ করিলে সর্বোচ্চ চার থেকে পাচঁ হাজার টাকা আয় হত, এখন এই ১৫ শতক জমিতে কাশ্মীর কুল চাষ করে আট নয় মাসে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা বিক্রয় করে কৃষক লাভবান হয়েছে যা দেখে অন্য কৃষকরা এই কাশ্মীর আপেল কুল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন কৃষি অফিস সব সময় কৃষকদের কাছে নতুন কিছু বা উচ্চমূল্যের ফসল পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা থাকে। যার মাধ্যমে কৃষক লাভবান হতে পারেন। এই কারণে কৃষকেরা কুল চাষে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আগামীতে এ এলাকায় ব্যাপক পরিসরে কাশ্মীরি কুল চাষ হবে বলেও তিনি জানান।

শিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, চাকরির পিছনে না ঘুরে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে গতানুগতিক ফসল চাষ না করে বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফলনশীল ফল চাষ করুন যা দেশের পুষ্টি চাহিদা পুরণ করিবে পাশাপাশি বেকারত্ব গুছাতে এই ফল বাগান একটি উত্তম পন্থা হবে যদি দুই বিঘা জমিতে কাশ্মীর কুল চাষ করে তাহলে প্রতি বছর চার পাচঁ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

 

 
Electronic Paper