ঐতিহ্যের ঝিনাইদহ
রুপসী বাংলা ডেস্ক
🕐 ৩:১০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের তীর্থভূমি ঝিনাইদহ। এই জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে নলডাঙ্গা রাজবাড়ী, সাতগাছিয়া মসজিদ, বারোবাজারের প্রাচীন মসজিদ, গাজী-কালু-চম্পাবতীর মাজার, শৈলকূপা জমিদার বাড়ি, খালিশপুর নীলকুঠি, গলাকাটা মসজিদ, জোড় বাংলা মসজিদ, পায়রা দূয়াহ্, শাহী মসজিদ, শিব মন্দির, ঢোল সমুদ্র দীঘি, মিয়ার দালান, পাঞ্জু শাহ’র মাজার, কেপি বসুর বাড়ি, বলুদেওয়ানের মাজার পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ জেলা নিয়ে আজকের প্রতিবেদন
জনবহুল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ও জেলা সমূহের মধ্যে অন্যতম ঝিনাইদহ। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের দ্যুতিতে বর্ণময় এ জেলা। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও অফুরান সম্পদে সমৃদ্ধ এ জনপদ ঝিনাইদহ। ঝিনাইদহকে আঞ্চলিক ভাষায় এখনও ঝিনেদা বলা হয়। ঝেনিদা, ঝিনেদা আর ঝিনাইদহ যাই বলা হোক না কেন ঝিনাইদহ নামের উৎপত্তি যে ঝিনুক থেকে তা এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য। ঝিনাইদহে রয়েছে অসংখ্য গুণী মানুষের নাম-মরমী কবি লালন শাহ্, পাগলা কানাই, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, বীরপ্রতীক সিরাজুল ইসলাম, বিপ্লবী বীর বাঘাযতীন, গণিত শাস্ত্রবিদ কে.পি.বসু, কবি গোলাম মোস্তফা, বারো আউলিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট বারোবাজার, গাজী-কালূ-চম্পাবতীর উপাখ্যান। এছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিবেষ্টিত ঝিনাইদহের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর মধ্যে গড়াই, কপোতাক্ষ, ভৈরব, নবগঙ্গা, কুমার, চিত্রা এবং বেগবতী নদী আর খেজুর গুড়, কলা-পানের প্রাচুর্য মন্ডিত ঝিনাইদহের রয়েছে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। প্রকৃতির সজীবতা এবং প্রান জুড়ানো আবহাওয়া ছাড়াও এই জেলায় রয়েছে চমৎকার প্রাচীন মসজিদ, মন্দির এবং প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর বিভিন্ন ভবন। প্রাচীনকালে নির্মিত এসব স্থাপনায় রয়েছে চমৎকার শৈল্পিক কারুকাজ। ১৯৮৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলায় উন্নীত হয়। দীর্ঘ পরিক্রমায় শহরের কলেবর বেড়েছে। নির্মিত হয়েছে নতুন পরিকাঠামো। বর্তমানে জেলার আয়তন ১ হাজার ৯৪১ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ১৮ লাখের বেশি। এ জেলাতে ব্রিটিশ আমলে ১৮৬৯ সালে মহেশপুর এবং ১৮৮৪ সালে কোটচাঁদপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়। কোটচাঁদপুর তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে এখন ছোট্ট উপজেলা শহর। বর্তমানে শৈলকুপা, কালীগঞ্জ ও হরিণাকুণ্ডুতেও পৌরসভা স্থাপন করা হয়েছে। ঝিনাইদহ পৌরসভা স্থাপিত হয় ১৯৫৮ সালে। জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। অধিকাংশ হাট-বাজার, গ্রোথ সেন্টারের সঙ্গে পাকা সড়ক যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। এসব সড়কে বাস, ট্রাক ও টেম্পোসহ হাজারো মাইক্রোবাস চলাচল করে। বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই জেলার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানকার বিভিন্ন কৃষি খামারগুলো হতে পারে ঘুরে দেখার জন্য আদর্শ স্থান। খেজুরের গুড়ের জন্য এই জেলার রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। এছাড়া ঝিনাইদহ জেলায় প্রচুর কলা এবং পান উৎপাদিত হয়ে থাকে।
ঢোল সমুদ্র দীঘি
ঝিনাইদহবাসীর অন্যতম বিনোদনের স্থান হিসেবে খ্যাত ঢোল সমুদ্র দীঘি। দীঘির পাড়ে অসংখ্য সারি সারি গাছ দীঘির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রায় ৫২ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত দীঘিটি শহর থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। একজন পরাক্রমশালী রাজার রাজকীয় স্থাপনা সমূহের একটি স্মৃতি হিসেবে আজও টিকে আছে।
জানা যায়, ঝিনাইদহে রাজা মুকুট রায় নামে একজন প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। তিনি ১৬ হল্কা হাতি, ২০ হল্কা অশ^ ও ২২০০ কোড়দার না নিয়ে বের হতেন না। খাঁন জাহান আলী (রা.) এর মতো তিনিও জলাশয় প্রতিষ্ঠায় যত্নবান ছিলেন। রাস্তা নির্মাণ ও জলাশয় নির্মাণ করতে অগ্রসর হতেন। তার এমনই এক নিদর্শন হচ্ছে পাগলা কানাই ইউনিয়নের ঢোল সমুদ্র দীঘি। এই ঢোল সমুদ্র দীঘি নিয়ে লোকশ্রুতি আছে, রাজা মুকুট রায়ের রাজত্বকালে একবার জলকষ্ট দেখা দেয়।
উপায় না পেয়ে রাজা দীঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। অগণিত লোকের দিনরাত পরিশ্রমে দীঘি গভীর হতে গভীরতর এবং চতুর্দিকে প্রশস্ত হতে লাগল। কিন্তু দীঘিতে কোনো জল উঠল না। হতাশ রাজা একদিন স্বপ্ন দেখেন রাণী যদি দীঘিতে নেমে পূজা দেন, তবেই দীঘিতে জল উঠবে। এ কথা জেনে প্রজাহিতৈষী রাণী পূজার নৈবেদ্য নিয়ে পুকুরে নামলেন।
কালীপদ বসুর বাড়ি
জগদ্বিখ্যাত গণিতবিদ অধ্যাপক কালীপদ বসু (কে. পি.)। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে ১৮৬৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। কে. পি. বসুর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় নিজ গ্রামের পাঠশালায় মেধাবী শিক্ষক নছিমউদ্দিন মন্ডলের কাছে। কে. পি. বসুর গণিতমনস্কতা সৃষ্টিতে তার ভূমিকা অপরিসীম। তিনি ১৮৯২ সালে ঢাকা কলেজে গণিত শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং আমৃত্য ঐ কলেজের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অসংখ্য নতুন অংক উদ্ভাবন করে এ শাস্ত্রের কলেবর বৃদ্ধি ও উৎকর্ষ সাধন করেছেন।
অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ্যালজাবরা ও জ্যামিতি শাস্ত্রের ওপর গবেষণা চালিয়ে যান। তাঁর ঐকান্তিক সাধনায় ‘এ্যালজাবরা মেড ইজি’ ‘মডার্ণ জিওমেট্রি’ ‘ইন্টারমিডিয়েট সলিড জিওমেট্রি’ প্রভৃতি গ্রন্থপ্রণীত হয়। ১৯০৭ সালে তিনি নবগঙ্গা নদীর তীরে এক একর জমির ওপর ১৭ কক্ষ বিশিষ্ট এক প্রাসাদোপম দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। বাড়ীটি এখনও বসবাসযোগ্য এবং সুদৃশ্যই বলা যায়। ঝিনাইদহ শহরে তার নামে একটি সড়কও রয়েছে।
গোড়ার মসজিদ
ইসলামী ঐতিহ্যের এক অনুপম নিদর্শন বারোবাজারের গোড়ার মসজিদ। মসজিদের পূর্বদিকে একটি পুকুর আছে। মসজিদ থেকে পুকুরে যাওয়ার জন্য বাঁধানো ঘাট ছিল। ভাঙা ইটের উপস্থিতি ও স্থানে স্থানে প্রথিত ইটের চিহ্ন তা প্রমাণ করে। বারান্দাসহ এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি বর্গাকৃতি। বৃত্তাকার ও উপুড় করা পেয়ালার মতো দেখতে গম্বুজটি অত্যন্ত মনোরম।
মসজিদের পাশে একটি কবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এটি গোরাই নামের এক দরবেশের মাজার বলে অনেকের ধারণা। তার নামানুসারে এ মসজিদকে গোড়ার মসজিদ বলা হয়। বর্তমানে এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়া হয়। এ মসজিদের বাইরের দেয়াল সম্পূর্ণটাই পোড়ামাটির কারুকার্য দ্বারা চমৎকারভাবে অলংকৃত।
জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্ক
জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্ক অ্যান্ড রিসোর্ট ঝিনাইদহের বিপুল জনপ্রিয় একটি বিনোদন কেন্দ্র। মনোরম ছায়া ঘেরা জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্কে বিনোদনের জন্য রয়েছে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা। শিশুদের জন্য আছে কেইভ ট্রেন, জেট কোষ্টার, মেরি গো রাউন্ড, প্যাডেল বোট/ওয়াটার রিক্সা, ফানি এ্যাডভেঞ্চার, সুইং চেয়ার, নাগরদোলা এবং কিডস জোন।
ঝিনাইদহ সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টটি অবস্থিত। প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত রিসোর্টে বিভিন্ন আউটডোর এক্টিভিটি বা খোলাধুলার জন্য রয়েছে একটি বিশাল মাঠ। এছাড়া রাত্রি যাপনের জন্য জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্ক এন্ড রিসোর্টে রয়েছে বিভিন্ন মানের রিসোর্টে আবাসন সুবিধা।
গলাকাটা মসজিদ
গলাকাটা মসজিদটি বারোবাজার তাহেরপুর রাস্তার পাশের্^ অবস্থিত। চারটি ৬ কোণাকৃতি বড় মোটা পিলারের ওপর বর্গাকৃতি মূল মসজিদটি দন্ডায়মান এবং প্রত্যেক বাহু ২৫ ফুট লম্বা ও দেয়াল ৫ ফুট চওড়া। এতে ৩টি প্রবেশদ্বার আছে।
জোড়বাংলা মসজিদ
বারোবাজার মৌজায় এ মসজিদটি অবস্থিত। ১৯৯২-৯৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক খননের ফলে আবিস্কৃত হয়েছে এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি। এর পাশে কয়েকটি কবর আছে। ছোট ছোট সুন্দর পাতলা ইটে গাঁথা এ মসজিদটি ১০/১১ ফুট উঁচু প্লাটফর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
মিয়ার দালান
ঝিনাইদহের সদর থানায় অবস্থিত একটি পুরনো জমিদার বাড়ী ঐতিহ্যবাহী একটি দর্শনীয় স্থান। বাড়িটি নবগঙ্গা নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত। শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মুরারীদহ গ্রামে অবস্থিত মিয়ার দালানটি বর্তমানে ভগ্নপ্রায়। ১২৩৬ বঙ্গাব্দে জমিদার কর্তৃক নির্মিত মিয়ার দালানটি ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় সেলিম চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তাই স্থানীয়ভাবে অনেকের কাছেই এটি সেলিম চৌধুরীর বাড়ি হিসাবেও পরিচিত। এছাড়া মিয়ার দালানকে বিশেষভাবে পরিচিত করেছিল এখানে থাকা একটি খেজুর গাছ। আর এই খেজুর গাছের ১২টির বেশি চূড়া ছিল, যার প্রতিটি চূড়া থেকেই রস আহরণ করা যেত।
ক্যাডেট কলেজ
দেশের শিক্ষাঙ্গনে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ একটি সুপরিচিত নাম। ঝিনাইদহ শহরের প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে এক প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে প্রায় একশত তিন একর জমির ওপর কলেজটি অবস্থিত। ১৯৬৩ সালের ১৮ অক্টোবর এই কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আব্দুল মোনায়েম খান। প্রকৃতপক্ষে কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬৪ সালের জুলাই মাস থেকে।
প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নাম ছিল লে. কর্ণেল এনডি হাসান, এ, ই, সি। ক্যাডেট কলেজ স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল সেনাবাহিনী বা অন্যান্য দেশরক্ষা বাহিনীতে নেতৃত্ব গ্রহণ করার উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং পরবর্তী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার নিমিত্তে ছাত্রদের উপযুক্ত মানসিকতা ও গুণাবলীর বিকাশ সাধন।
কলেজটিতে প্রথম ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত খোলা হয়। ১৯৬৮ সাল থেকে অত্র কলেজে এসএসসি এবং ১৯৭০ সাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। কলেজের ক্যাডেটদের বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল অত্যন্ত চমকপ্রদ ও সর্বজনবিদিত। এক্ষেত্রে কলেজটি আপন মহিমায় সমুজ্জল।
গাজী-কালু-চম্পাবতীর মাজার
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নে বাদুরগাছা মৌজার গাজী-কালু ও চম্পাবতীর মাজার অবস্থিত। বারোবাজার বাসস্ট্যান্ড হতে পূর্বদিকে ২ কিলোমিটার দূরে পাথর বাঁধাইকৃত কবর তিনটি পাশাপাশি অবস্থিত। এখানে কোন শিলালিপি আবিস্কৃত হয়নি। স্থানীয়ভাবে কবর তিনটি গাজী, কালু ও চম্পাবতীর বলে জনশ্রুতি আছে। অপেক্ষাকৃত বড় কবরটি গাজীর, পশ্চিম দিকেরটি কালুর এবং পূর্ব দিকের কবরটি চম্পাবতীর বলে পরিচিত। গাজীর আসল পরিচয় সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতদ্বৈততা আছে। গাজী-কালু ও চম্পাবতীর মাজার সব সম্প্রদায়ের লোকের নিকট একটি পবিত্র পীঠস্থান স্বরুপ।
মল্লিকপুরের বটগাছ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহর হতে ১০ কি.মি. পূর্বে মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী মৌজায় অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম এবং প্রাচীন বটগাছ। বটগাছটি বর্তমানে ১১ একর জমি জুড়ে বিদ্যমান। সুইতলা-মল্লিকপুরের বটগাছ নামে এটি বিশেষভাবে পরিচিত। বিবিসির জরিপে মল্লিকপুরের বটগাছটি ১৯৮৪ সালে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছের খ্যাতি অর্জন করে। বটগাছের সৌন্দর্য, বটগাছকে ঘিরে চারপাশের শান্ত পরিবেশ, পাখির কলরব আগত দর্শনার্থীদের তৃপ্ত করে। বট গাছটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে ১৯৯০ সালে সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে একটি রেষ্ট হাউজ। ২০০৯ সাল থেকে সামাজিক বন বিভাগ মল্লিকপুরের এই বটগাছটির রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছে। বহু দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে আসে।
বারোবাজার
ঝিনাইদহ শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক বারোবাজারের (Barobazar) অবস্থান। বারো আউলিয়া, খানজাহান আলী, গাজী কালু চম্পাবতী, গঙ্গারিডিসহ ইতিহাসের সব নিগুঢ় রহস্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এখানে। হোসেন উদ্দীন হোসেনের লেখা ‘যশোরাদ্য দেশ’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বারোটি বাজার নিয়ে প্রসিদ্ধ ছিল ৭শ বছরের প্রাচীন বারোবাজার নগরী। এ নগরের পরিধি ছিল ১০ বর্গমাইল। খোশালপুর, পিরোজপুর, বাঁদুরগাছা, সাদেকপুর, দৌলতপুর, সাতগাছিয়া, এনায়েতপুর, মুরাদগড়, রহমতপুর, মোল্লাডাঙ্গা, বাদেডিহি প্রভৃতি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছিল এ নগরী। ১৯৯৩ সাল থেকে খনন করে এ পর্যন্ত ওই নিদর্শনগুলো মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নিদর্শনের এ স্থানটির নাম দিয়েছে ‘শহর মোহাম্মদাবাদ’। তবে ৭শ বছরের প্রাচীন এসব প্রত্নতত্ত্বর সন্ধান মিললেও এখানে কোনো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে ঝিনাইদহ। ১৯৭১ সালে এ জেলার অধিবাসীগণ বারুদের স্তুপের মতো একযোগে বিস্ফোরিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিশিখা জে¦লেছিল রণাঙ্গনে, শহরে-বন্দরে, গ্রাম-গঞ্জে। ঝিনাইদহের গর্ব সিপাহী শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান বাংলার ইতিহাসে চির আহ্বান হয়ে রয়েছেন। জেলায় খেতাবপ্রাপ্ত আরও একজন মুক্তিযোদ্ধা হলেন বীরপ্রতীক সিরাজুল ইসলাম।
৬ ডিসেম্বর, ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত দিবস। ৩ ডিসেম্বর মহেশপুর, ৪ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর, ৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ এবং সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বর শৈলকুপা উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে একাত্তরের এই দিনে পাক হানাদার ও এদেশে তাদের দোসরদের হটিয়ে ঝিনাইদহকে শত্রুমুক্ত করে মুক্তিকামী মানুষ। অসহযোগ প্রস্তুতিপর্ব, প্রতিরোধ, গেরিলা আক্রমণ ও শেষে সম্মুখ সমরে বিজয় অর্জন- ১৯৭১ সালের এই চারটি পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝিনাইদহের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সম্মুখ যুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি গেরিলা যুদ্ধ ও অভিযান চালানো হয়।
১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে ঝিনাইদহ পাকহানাদারদের দখলে যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সম্মুখ সমর ঝিনাইদহের বিষয়খালীর যুদ্ধ। ১ এপ্রিল ১৯৭১ সাল, যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারী কামান ও মেশিনগানে সজ্জিত হয়ে পাকবাহিনী বারোবাজার ও কালীগঞ্জ দখল করে এগিয়ে আসে ঝিনাইদহ শহরের দিকে। পাকবাহিনীকে বাধা দেওয়া হলো বিষয়খালীর কাছে বেগবতী নদীর দক্ষিণ তীরে। বেলা ১টার দিকে উভয় পক্ষে যুদ্ধ হয় সামনা-সামনি।
এ সম্মুখ যুদ্ধে ভারী অস্ত্র বা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা না থাকলেও অসীম সাহসের কাছে হানাদার বাহিনীর কামানের গোলা ব্যর্থ হয়ে যায়। তারা বাধ্য হয়ে পিছু হঁটে ফিরে যায় ক্যান্টনমেন্টে। ১ থেকে ১৬ এপ্রিল বিষয়খালী যুদ্ধে ৩৫ জন শহীদ হন। ঝিনাইদহের অমিত তেজী দামাল তরুণদল দেশের ইতিহাসে যুদ্ধ বিজয়ের গৌরবে প্রথম মাইল ফলক স্থাপন করছিলো বিষয়খালীর যুদ্ধে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228