ঐতিহাসিক স্থিরচিত্র
বিবিধ ডেস্ক
🕐 ২:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
স্থিরচিত্র বা আলোকচিত্রের কাজ হচ্ছে মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দি করা। বিশ্বের প্রথম ছবিটি ১৮২৬ সালে তোলা হয়েছিল বলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। এরপর থেকে প্রায় দুইশ’ বছরে কোটি কোটি ছবি তোলা হয়েছে। কিন্তু কিছু ছবি পাল্টে দিতে পেরেছে মানুষের চিন্তার জগৎ। স্থান করে নিয়েছে মানুষের ইতিহাসে। বর্তমান লাইভ ভিডিওর যুগে স্থিরচিত্র খানিকটা আবেদন হারালেও এর অপরিহার্যতা কমেনি কোনো মতেই। বিভিন্ন সময়ে ধারণ করা দুনিয়া কাঁপানো কিছু ছবি নিয়ে আজকের আয়োজন।
ভূপালের গ্যাস ট্র্যাজেডি
১৯৮৪
১৯৮৪ সালের ২ থেকে ৩ ডিসেম্বরের রাতে ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভূপাল শহরে ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডের কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে হাজার-হাজার মানুষ হতাহত হন। এটি ছিল বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা। কীটনাশক তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটলে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানাইড গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫ জন মানুষ আহত হন, নিহত হন প্রায় ১৫ হাজারের মতো মানুষ। ফটো সাংবাদিক পাবলো বার্থোলোমিউ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ ছবিটি তারই তোলা, যা দুর্ঘটনায় নিহত শিশুটিকে মাটিতে সমাহিত করার আগমুহূর্তে তোলা হয়।
মার্কিন ইউনিয়ন কার্বাইড করপোরেশনের ভারতীয় শাখা ইউসিল দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত কারখানায় সেভিন নামধারী কীটনাশকটি উৎপাদন করা হতো যে প্রক্রিয়ায়, তাতে মাঝপথে মিথাইল আইসো-সায়ানেট বা এমআইসি নামক অতিশয় বিষাক্ত গ্যাসটি উৎপন্ন হয়। দুর্ঘটনার রাতে একটি এমআইসি ট্যাঙ্কে পানি ঢুকে গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাস এবং অপরাপর কমবেশি বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নির্গত হয়ে কারখানার কাছের বস্তিগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিষাক্ত গ্যাসের প্রকোপে পড়েন পাঁচ থেকে সাত লাখের বেশি মানুষ।
সার্ফিং হিপ্পোজ
২০০০
কঙ্গো থেকে গ্যাবন পর্যন্ত ২০০০ মাইলের লম্বা ভ্রমণের সময় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ফটোগ্রাফার মাইকেল নিকোলস ২০০০ সালে এই অভূতপূর্ব ছবিটি তোলেন। জলহস্তীর বাস পানিতে হলেও প্রায় সবসময়ই তাদেরকে দেখা যায় নদীর পানিতে কিংবা গভীর জঙ্গলের জলাশয়ে। কিন্তু এই ছবিতে দেখা যায়, বিশালাকৃতির এক জলহস্তী আটলান্টিক সমুদ্রের মাঝখানে সাঁতার কাটছে।
সমুদ্রের ঢেউ খেলানো পানি থেকে চোখ এবং শুঁড় দিয়ে উঁকি দেওয়া জলহস্তীর এই ছবিটি এমনিতেই সুন্দর। কিন্তু এর প্রভাবের গল্পটি আরও চমৎকার। গ্যাবনের প্রেসিডেন্ট ওমার বোঙ্গো এই ছবিটি দেখে এত মুগ্ধ হন যে, তিনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য দেশ জুড়ে ন্যাশনাল পার্কের বিশাল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এই ন্যাশনাল পার্কগুলো বর্তমানে দেশটির ১১% স্থান দখল করে আছে।
শকুনের খাদ্য
১৯৯৩
ছবিটিতে দেখা যায় একটা জ্যান্ত বাচ্চার দিকে শকুন এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন তাকে খেয়ে ফেলবে। বিশ^বিখ্যাত ও প্রবল সমালোচিত এ ছবিটি ১৯৯৩ সালে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আলোকচিত্রী কেভিন কার্টারের তোলা এ ছবিটি ১৯৯৪ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নেয়। ছবিটি মূলত সুদানের দুর্ভিক্ষের সময় তোলা। এতে দেখা যায়, দুর্ভিক্ষে খেতে না পেয়ে জীর্ণ-শীর্ণ একটি শিশু মাটিতে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে, আর খুব কাছেই একটি শকুন বসে আছে। যেন কখন শিশুটি মারা যাবে এবং শিশুটিকে খেয়ে ফেলতে পারবে তারই অপেক্ষা। ছবিটি ভয়াবহ বিতর্ক তৈরি করে। কথা ওঠে যে, ছবি তুলে শিশুটিকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা কেভিন করেছিলেন কি-না? কেভিনের নিজেরও মনে হতে শুরু করে যে, তিনি হয়তো চাইলে শিশুটিকে বাঁচাতে পারতেন। তীব্র মানসিক যন্ত্রণা থেকে ১৯৯৪ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন। যদিও শিশুটি সে সময় মারা যায়নি, আরও বেশ কিছুদিন বেঁচে ছিল। নিয়ং কং নামের ছবির শিশুটি মারা যায় ২০০৭ সালে।
সেই চাহনি
১৯৮৫
এই ছবিটি প্রকৃতির নির্মমতার ভয়াবহতম সাক্ষী। ছবিটি ১৯৮৫ সালের। সে বছর ১৩ নভেম্বর কলম্বিয়াতে আরমেরো নামে ছোট গ্রামের পাশেই নেভাদো দেল রুইজ নামক আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়।
আর আগ্নেয়গিরির লাভা নদীর পানি, বরফ সবকিছুর সঙ্গে মিশে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়। চারদিকে সৃষ্টি হয় ভূমিধস। ফলে আরমেরোসহ আশপাশের ১৩টি গ্রামের প্রায় ২৩ হাজার মানুষের নির্মম মৃত্যু ঘটে এই অগ্ন্যুৎপাতে। ওপরের ছবিটি ভয়াবহতম সেই অগ্ন্যুৎপাতেরই একটি স্থিরচিত্র। ছবির এই মেয়েটির নাম অমায়রা সানচেজ।
১৩ বছর বয়সী মেয়েটি একটি বিধ্বস্ত ভবনের নিচে আটকা পড়ে। আর আস্তে আস্তে আগ্নেয়গিরির লাভা তাকে ঘিরে ফেলে। উদ্ধারকর্মীরা সানচেজকে উদ্ধারের নানা চেষ্টা করে। এভাবে টানা ৬০ ঘণ্টা চলে লড়াই। আস্তে আস্তে সবাই আশা হারাতে থাকে। সানচেজের চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে তখন সব আশা শেষ। ফ্র্যাঙ্ক ফমিয়ার এই ছবিটি তুলেছেন। টানা ৬০ ঘণ্টা আটকে থাকার পর ১৬ নভেম্বর ১৯৮৫ সানচেজ মারা যায়।
দ্য হুডেড ম্যান
২০০৩
ইরাক যুদ্ধ কভার করার জন্য শত শত প্রফেশনাল ফটোসাংবাদিক সে দেশে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইরাক যুদ্ধ বললেই মানুষের চোখের সামনে যে ছবিটি ভেসে ওঠে, সেটি কোনও ফটোসাংবাদিক তোলেননি, সেটি তুলেছিলেন ইভান ফ্রেডেরিক নামের এক আর্মি স্টাফ সার্জেন্ট। শুরু থেকেই ইরাক যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড সমালোচিত হয়ে আসছিল, কিন্তু আবু গারিব কারাগারে ইরাকী বন্দীদের ওপর আমেরিকানদের নির্যাতনের এই ছবিটি ইরাক যুদ্ধকে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ইভান ফ্রেডেরিক নিজেও ছিলেন বন্দীদেরকে নির্যাতনকারীদের মধ্যে একজন। তারা যে শুধুমাত্র বন্দীদেরকে অবর্ণনীয় ভাষায় নির্যাতন করতেন, সেটাই না, তারা সেসব ঘটনার ছবি তুলে সেগুলো নিয়েও মজা করতেন। আবু গারিবের নির্যাতনের ঘটনার শত শত ছবি ফাঁস হয়েছিল, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে এই ছবিটিই সবচেয়ে বেশি প্রচারিত হয়। এর একটি কারণ, এটি ছিল ঐ ঘটনার সবচেয়ে সহনীয় ছবি। এছাড়াও ছবিতে বন্দী ইরাকির দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিটি অনেকটাই যীশুখ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ ছবির মতো।
কফিন ভ্যান
২০০৩
সালের মার্চ থেকে ২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ইরাক যুদ্ধে প্রায় ৭০০ মার্কিন সেনা নিহত হয়। কিন্তু এই নিহত সৈন্যদের লাশ কিংবা কফিনের ছবি কখনই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। ১৯৯১ সাল থেকেই মার্কিন সরকার নিজেদের সৈন্যদের লাশের ছবি প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছিল। তাদের অযুহাত ছিল, এতে মৃত সৈন্যদের অবমাননা করা হয় এবং তাদের পরিবারের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হয়, যদিও সমালোচকদের মতে এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মধ্যে যেন যুদ্ধবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করা।
২০০৪ সালের ৭ এপ্রিল ইরাকে নিহত ২০ মার্কিন সেনার লাশের কফিন যখন কুয়েতের মধ্য দিয়ে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন মার্কিন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি কার্গো কোম্পানির এক নারী কর্মী, তামি সিলিসিও তার ক্যামেরা দিয়ে কফিনগুলোর একটি ছবি তুলে ফেলেন। এরপর তিনি ই-মেইল করে ছবিটি পাঠিয়ে দেন সিয়াটল টাইমসের ফটো এডিটরের কাছে। ১৮ এপ্রিল ছবিটি প্রকাশিত হলে তা পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। প্রতিক্রিয়ায় সিলিসিওকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ২০০৯ সালে আমেরিকা সৈন্যদের কফিনের ছবি প্রকাশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।
দ্য সিচুয়েশন রুম
২০১৩
হোয়াইট হাউজের অফিশিয়াল ফটোগ্রাফাররা সবসময়ই প্রেসিডেন্টদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি, মিটিংয়ের ছবি, ফোনালাপের ছবি ধারণ করেন। কিন্তু খুব কম ছবিই ২০১১ সালের ১১ মে, হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে ধারণ করা পিট সুজার এই ছবিটির মত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
দীর্ঘ এক দশকের অনুসন্ধানের পর সেদিন মার্কিন বিশেষ বাহিনী যখন আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে গ্রেফতার করার জন্য পাকিস্তানে অভিযান চালাচ্ছিল, তখন সিচুয়েশন রুমে বসে তা নজরদারি করছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের কয়েকজন।
অপারেশনের কিংবা বিন লাদেনের লাশের কোনও ছবি প্রকাশ না করায় সিচুয়েশন রুমের এই ছবিটিই হয়ে ওঠে এই অপারেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবি।
কয়েক হাজার মাইল দূরে থেকে অপারেশনের সাফল্য নিয়ে প্রেসিডেন্টের উৎকণ্ঠা এই ছবিতে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়। ছবিটি আমেরিকার সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সবচেয়ে বড় বিজয়ের মুহূর্তকে ধারণ করা একমাত্র আলোচিত ছবি।
১৯৮৫
বিশ্ববিদ্যালয় গণহত্যা
এই ছবিটি ১৯৭৬ সালের। ছবিটি সারাবিশ্বে থাইল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় গণহত্যার ছবি হিসেবে পরিচিত। থাইল্যান্ডের নির্বাসিত স্বৈরশাসক ফিল্ড মার্শাল থামম কিটিকাচর্নের দেশে ফিরে আসার কথা শুনে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো থাইল্যান্ড। থামাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। ছাত্র আন্দোলন যখন আস্তে আস্তে তীব্র আকার ধারণ করতে শুরু করে তখনই তাদের দমন করার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর গণহত্যা চালানো হয় ১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর। বহু ছাত্রকে গুলি করে, পিটিয়ে বা আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। সে রকমই একটি ঘটনার ছবি তুলেছেন নিল ইউলেভিচ, যা ১৯৭৭ সালে পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করে।
অ্যালান কুর্দি
২০১৫
আলান কুর্দির পরিবার সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে চেয়েছিল, কিন্তু সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তুরস্ক থেকে গ্রিসে যাওয়ার পথে তাদেরকে করুণ মৃত্যুবরণ করতে হয়। সমুদ্রপথে হাজার হাজার শরণার্থীর মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু আলান কুর্দির নিষ্পাপ ফুটফুটে চেহারা, বিশাল সমুদ্রের সামনে তার অসহায়ত্ব, ছবির রঙ- সবকিছু দোগান নিউজ এজেন্সির নিলুফার দেমিরের তোলা ছবিটিকে মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল করে দেয়।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পেছনে পশ্চিমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূমিকা থাকলেও সেই যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অভিবাসীদের ভার তারা নিতে রাজি হচ্ছিল না। এই ছবিটি তাদেরকে বাধ্য করে নিজেদের অবস্থান কিছুটা হলেও পরিবর্তন করতে। ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জার্মানিসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র অভিবাসীদেরকে আশ্রয় দিতে শুরু করে। ফলে রক্ষা পেয়ে যায় আলানের মত আরও অনেকের প্রাণ।
গরিলা দ্য কঙ্গো
২০০৭
বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় পার্বত্য গরিলার অর্ধেকেরও বেশি বাস করে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে। ২০০৭ সালে অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এক ভয়াবহ সংঘর্ষে সেনকেউকে নামের এই গরিলাটি মৃত্যুবরণ করে। স্থানীয় জনগণ প্রায় ২৫০ কেজি ওজনের গরিলাটির লাশ বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় এই চিত্রটি ধারণ করেন গেটি ইমেজের ফটোগ্রাফার ব্রেন্ট স্টার্টন।
সেনকেউকের মৃত্যু আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আফ্রিকার যুদ্ধে এবং সংঘর্ষে শুধু মানুষেরই মৃত্যু হয় না, একইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানকার অমূল্য বনজ এবং প্রাণীজ সম্পদ। নিউজ উইকে এই ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার তিন মাস পর কঙ্গোসহ নয়টি আফ্রিকান রাষ্ট্র ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের গরিলাকে রক্ষা করার জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
ফলিং ম্যান
২০০১
৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলা এবং তার প্রতিক্রিয়ায় শুরু হওয়া সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এটি ছিল ঐ ঘটনার প্রথম আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছবি, যেখানে কারও মৃত্যুর দৃশ্য ফ্রেমবন্দী হয়েছে। ৯/১১ এর সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি হচ্ছে টুইন টাওয়ার ধ্বংস হওয়ার ছবিটি। কিন্তু সেটা হচ্ছে নিছক জড়বস্তুর ছবি। তার বিপরীতে এপির ফটোগ্রাফার রিচার্ড ড্রিউর তোলা ফলিং ম্যান নামের এই ছবিটিতে পরিচয়হীন দালানের বিপরীতে প্রথম রক্তমাংসের মানুষের দুর্দশার চিত্রটি ফুটে ওঠে। ফলিং ম্যানের পরিচয় শেষ পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হয়, তিনি হয়তো উইন্ডোজ অন দ্য ওয়ার্ল্ড রেস্টুরেন্টের একজন কর্মী ছিলেন। কিন্তু এই ছবিটির বিশেষত্ব হচ্ছে, ফলিং ম্যানের বাস্তব পরিচয়কে ছাপিয়ে এটি তাকে পরিণত করে অনিশ্চিত, দীর্ঘমেয়াদি এক যুদ্ধের প্রথম নাম না জানা সৈনিকে।
গার্ল অ্যাট চেকপয়েন্ট
২০০৫
২০০৫ সালে ইরাকে দখলদার মার্কিন বাহিনীর সাথে সুন্নী বিদ্রোহীদের যুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন একদিন তাল আফারের একটি চেকপয়েন্ট পার হওয়ার সময় মার্কিন সেনারা শুধুমাত্র সন্দেহের বশে গুলি করে হত্যা করে এক দম্পতিকে। মুহূর্তেই এতিম হয়ে পড়ে কিছুক্ষণ আগেও গাড়ির পেছনের সিটে বসে বাবা-মায়ের সাথে হাসি মুখে গল্প করতে থাকা ছোট কিশোরী কন্যা সামার হাসান। সন্দেহের বশে বেসামরিক জনগণকে হত্যা করার এ ধরনের ঘটনা সে সময় প্রায়ই ঘটত। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই সেগুলো ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ত না। সেদিন মার্কিন সেনাদের সাথে ছিলেন গেটি ইমেজের ফটোসাংবাদিক ক্রিস হনড্রস। তার তোলা ক্রন্দনরত এতিম সামার হাসানের ছবি পরদিন প্রকাশিত হয় বিশ্বের প্রায় সবগুলো প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে। ছবিটি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সচেতন আমেরিকানরা ইরাকে তাদের সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। ফটোগ্রাফার ক্রিস হনড্রস পরবর্তীতে ২০১১ সালে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধের চিত্রধারণ করতে গিয়ে নিহত হন।
কেনেডির মৃত্যু
১৯৬৩
আমেরিকার ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর ডালাসে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। পরপর ৩টি গুলি করা হয় তাকে। ঘাতক হলো লি হারভে অসওয়াল্ড। তাকে ধরাও হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরই ঘাতককে আদালত প্রাঙ্গণে সবার সামনে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
ধারণা করা হয়, এটাও আমেরিকার নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং উচ্চ পর্যায়ের লোকদের কাজ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার ছবিটিও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
কেনেডি তখন গাড়িতে। হঠাৎ আততায়ীর গুলি। মাথায় লেগেছিল গুলি। আব্রাহাম জ্যাপারডার তুলেছিলেন এই ছবিটি।