করোনা রোধে দেশে প্রস্তুতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২০
প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টিকারী করোনা ভাইরাস ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা জানান, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন এবং আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে রোগের ওপর নজরদারি কার্যক্রম।
ইতোমধ্যেই ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং স্থল বন্দরে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ (স্ক্রিনিং) কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। নতুন এ ভাইরাস সম্পর্কে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে এবং ভাইরাসটি প্রতিরোধের জন্য এ সংক্রান্ত প্রচার কার্যক্রমও নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সাতটি প্রবেশপথে ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে আক্রান্ত দেশ থেকে আগত রোগীদের স্পর্শ না করে অসুস্থতা পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। সেজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিমানবন্দরের কোয়ারেন্টাইন (আক্রান্তকে আলাদাকরণ) ওয়ার্ড। পাশাপাশি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে রেফারেল হাসপাতাল হিসেবে নির্দিষ্ট রেখে সেখানে সঙ্গনিরোধ ওয়ার্ডও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ রোগ প্রতিরোধী পোশাক মজুদ রাখা হয়েছে। প্লেনে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত সনাক্তকরণের জন্য ক্রুদের মাধ্যমে যাত্রীদের মধ্যে হেলথ ডিক্লারেশন ফরম ও প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফরম বিতরণ করা হচ্ছে। ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া ও জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত গাইডলাইনও প্রস্তুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দ্রুত যোগাযোগের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিডিসি ও আইইডিসিআরের (রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) চারটি হটলাইন।
করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে সরকারের সতর্কতামূলক কার্যক্রম তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা জানান, গত তিন দিন ধরে চীন থেকে বাংলাদেশে আগত চারটি ফ্লাইটের (চায়না সাউদার্ন, চায়না ইস্টার্ন, ড্রাগন এয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলা) যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং করা হয়। এদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে (জ্বর, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সাথে কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি) এমন আটজনের রিপোর্ট আসে। এদের মধ্যে দুইজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস ধরা পড়েনি, ধরা পড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাস।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এ ভাইরাসের বাংলাদেশে প্রবেশ করার আশঙ্কা আছে। তাই এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি জানান, করোনা ভাইরাস যাতে দেশে আসতে না পারে সে লক্ষ্যে ব্রাহ্মবাড়িয়ার সিভিল সার্জন কার্যালয় আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে হেলথ ডেস্ক বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সোমবার থেকে হেলথ ডেস্কের কাজ শুরু হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম বলেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমরাও সতর্কতা অবলম্বন করছি। গত বুধবার স্বাস্থ্য দফতর থেকে এ সম্পর্কিত নির্দেশনার একটি চিঠি আমাদের কাছে এসেছে। সে অনুযায়ী সোমবার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে আমাদের হেলথ ডেস্ক বসানো হবে। আশুগঞ্জ নৌবন্দরেও এই সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।