ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রার্থীদের শিক্ষার হার কমেছে বেড়েছে ব্যবসায়ী

সিটি ভোট নিয়ে সুজনের প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২০

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদপ্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়লেও কাউন্সিলরসহ মোট প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আগের চেয়ে কমেছে। তবে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীর সংখ্যা গতবারের তুলনায় বেশি। নির্বাচনি রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের যুক্ত হওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দক্ষিণের মেয়র প্রার্থীদের দুজনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ও তিন জনের বিরুদ্ধে আগে মামলা ছিল।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর প্রাক-নির্বাচনি প্রার্থী বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য নিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সামনে এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা না থাকলেও দক্ষিণের মেয়র প্রার্থীদের দুজনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ও তিন জনের বিরুদ্ধে আগে মামলা ছিল।

সুজনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা উত্তরের ছয় জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিন জন (৫০ শতাংশ) ব্যবসায়ী। তারা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপি’র তাবিথ আউয়াল ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের প্রার্থী শাহীন খান।

অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হক চিকিৎসক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রার্থী শেখ ফজলে বারী মাসউদ শিক্ষক এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান সমাজসেবক।

২৪৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর চার পঞ্চমাংশেরও অধিকের (২০৩ জন বা ৮১.৮৫ শতাংশ) পেশা ব্যবসা। এছাড়াও ৯ জন (৩.৬৩ শতাংশ) তাদের পেশার কথা উল্লেখ করেননি।

উত্তর সিটির বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীর হার বৃদ্ধি পেয়েছে (গতবারের ৬৭.২০ শতাংশের স্থলে এবার ৭২.৮১ শতাংশ)।

দক্ষিণ সিটির বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীর হার বৃদ্ধি পেয়েছে (৭১.২৮ শতাংশের এর স্থলে এবার ৩.৫৯ শতাংশ)।
এ সময় বলা হয়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে নির্বাচন করার প্রবণতা বাড়ছে, যা একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার রূপান্তর ঘটাতে পারে; যার ফলাফল অবশ্যই নেতিবাচক।

এদিকে ঢাকা উত্তরের ছয় জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ জনই (৮৩.৩৩ শতাংশ) উচ্চশিক্ষিত। এদের মধ্যে দুজনের (৩৩.৩৩ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও তিন জনের (৫০ শতাংশ) স্নাতক। তবে একজন (১৬.৬৭ শতাংশ) প্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তিনি প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের প্রার্থী শাহীন খান।

ঢাকা উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডের ২৪৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশ প্রার্থীর (১৫৬ জন বা ৬২.৯০ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। শুধু এসএসসসি’র নিচেই রয়েছেন ১২৩ জন (৪৯.৫০ শতাংশ)।

ঢাকা উত্তরের সর্বমোট ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২০৩ জন বা ৬১.৩২ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। শুধু এসএসসি’র নিচে ১৫৬ জন (৪৭.১৩ শতাংশ)।

ঢাকা উত্তরে ২০১৫ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার বেড়েছে (৫৯.৪০ শতাংশের স্থলে ৬১.৩২ শতাংশ) এবার উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর হার হ্রাস পেয়েছে (২৭.৪১ শতাংশের স্থলে ২৫.২৭ শতাংশ)।

ঢাকা দক্ষিণের সাত জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিন জন (৪২.৮৬ শতাংশ) উচ্চশিক্ষিত। এদের মধ্যে দুজনের (২৮.৫৭ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও একজন (১৪.২৯ শতাংশ) স্নাতক। তবে তিন জন (৪২.৮৬ শতাংশ) প্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

ঢাকা দক্ষিণের সর্বমোট ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২৬৬ জন বা ৬৫.০৩ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিতের হার সমান (৪২.৮৬ শতাংশ) হলেও, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে স্বল্পশিক্ষিতের হার অনেক বেশি।

২০১৫ সালের নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে, স্বল্পশিক্ষিতের হার সমান রয়েছে (৬৬.৭৪ শতাংশ)। উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর ক্ষেত্রে সামান্য কিছু অবনতি হয়েছে (১৯.৮৩ শতাংশের এর হলে বর্তমানে ১৯.৩১ শতাংশ)।

প্রার্থীদের মামলা:
ঢাকা উত্তরের ছয় জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শুধু বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হকের বিরুদ্ধে অতীতে একটি মামলা ছিল, যা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। আর কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে কখনও মামলা দায়ের হয়নি।

এছাড়াও উত্তরের মোট ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৯ জনের (২৯.৯১ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৪৪ জনের (১৩.২৯ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল।

ঢাকা দক্ষিণের সাত জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দুই জনের (২৮.৫৭ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, তিন জনের (৪২.৮৬ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল।

দক্ষিণের সর্বমোট ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০৯ জনের (২৬.৬৫ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে ও ৫০ জনের (১২.২২ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল।
আচরণবিধির বিষয়ে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, মনোনয়ন দাখিলের দিন থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মেয়র প্রার্থীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করে আসছেন। তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে মিছিল করে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

পরবর্তীতে কোনও কোনও মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিছিল করা, নির্ধারিত সময়ে আগে বা পরে শব্দযন্ত্র ব্যবহার, ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রচার, গাড়িবহর ব্যবহার, মোটর সাইকেলের বহুল ব্যবহার, রাতের আধারে ক্যাম্প ভেঙ্গে দেওয়া, নির্বাচনি প্রচারণাকালে অন্য দলের প্রার্থীর ওপর হামলা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে।

নির্বাচন কমিশনকেও এ বাপারে কঠোর অবস্থানে দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের ব্যাপারে কঠোর হতে না পারলে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে এবং তেমন কিছু ঘটলে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে ব্যাহত করবে।

ইভিএমের ব্যবহার প্রসঙ্গে সুজন জানায়, সব রাজনৈতিক দল একমত না হলেও এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ইডিএম ব্যবহারে বদ্ধ পরিকর। আমরা মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম বাধা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা। নির্বাচন কমিশনের ওপর যদি ভোটারদের আস্থা থাকত, তবে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠত না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার দিলীপ কুমার সরকার। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সহ-সভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী এবং সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।

 
Electronic Paper