সীমান্ত হত্যা বন্ধ হোক
সাঈদ চৌধুরী
🕐 ৯:২৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২০
সীমান্তে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিনে সীমান্তে সাতজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন বাংলাদেশির মৃতদেহ ভারত নিয়ে গেছে! ভারতে কোনো বাংলাদেশি ঢুকে পড়লে তাকে ধরে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা হত্যা করে চলছে একের পর এক! এ হত্যাগুলোর কি কোনো জবাবদিহি নেই?
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালে সীমান্তে হত্যা হয়েছে ১০ জন, ২০১৯ সালে হত্যা করা হয়েছে ৩৭ জন আর এ বছর তেইশ দিনেই দশজন!
গত তেইশ দিনে দশজন বাংলাদেশির মৃত্যু আমাদের ভালো থাকতে দিচ্ছে না। আমরা ব্যস্ত নগরে থেকে প্রতিটি মৃত্যুর পেছনের আহাজারিগুলো দেখি না। আমরা যেটুকু জানি তাতেই শেষ নয়। প্রতিটি মৃত মানুষের জীবিত কিছু মুখ থাকে, অবুঝ কিছু অপেক্ষারত শিশু থাকে, অর্থের বিনিময়ে ওষুধ কিনে আনার পর শ্বাসকষ্টের মতো রোগের নিবারণ করার মতো মা-বাবা থাকে!
তারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। চিৎকার দিয়ে ছোট্ট শিশুটি বাবার জন্য কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে কাশি শুরু করে দিয়ে বমি করে ফেলছে! এ শিশুর ভবিষ্যৎ কী? সকালে নতুন ঘ্রাণওয়ালা পত্রিকায় মৃত্যুর খবরগুলো যখন দেখি কেন জানি অসহায় মুখগুলোর কথা মনে হয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। আমরা এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। মৃত্যুগুলোর পর পতাকা বৈঠক হয়, দুঃখ প্রকাশ হয় কিন্তু যারা তাদের জীবনকে অযথাই দিতে বাধ্য হচ্ছে তাদের পরিবারগুলোর কী হবে?
বিজিবি থেকে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে যাতে ভারতের ভেতরে বাংলাদেশিরা অনুপ্রবেশ না করে। কিন্তু যারা ভারতে প্রবেশ করছে তাদেরই গুলি করতে হবে, মেরে ফেলতে হবে? এ হত্যাগুলোর বিচার কারা চাইবে? ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এখনও কাঁটাতার দেখলে সে দৃশ্য ভেসে ওঠে চোখের সামনে।
সীমান্তে হত্যায় দু’দেশের আরও কাজ করার আছে বলে মনে করি। তার আগে বিএসএফের গুলি চালানোর ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন সেদেশের। সীমান্তে ঢুকে পড়লেই গুলি চালানো কেন? ভারতীয়রাও আমাদের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে অনেক সময়। দু-দেশের সম্পর্ক এবং মানবীয় দিক বিবেচনায় দু-দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যেও আলোচনা বাড়ানো প্রয়োজন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বিনীত অনুরোধ, যে অধিকার নিয়ে আমরা বলি ভারত আমাদের বন্ধু সে অধিকারের মর্যাদার জন্য হলেও যাতে তারা হত্যা বন্ধ করেন! মানুষগুলোর কথা চিন্তা করুন। সীমান্তে হত্যা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিন। প্রয়োজনে দু’দেশের মধ্যে এ বিষয়ে আরও আলোচনা বাড়িয়ে হলেও সীমান্তে হত্যা বন্ধে আরও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আন্তরিক আহ্বান, সীমন্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যে অপরাধে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে সে অপরাধের অন্য শাস্তি দেওয়ার বিধান রেখে নতুনভাবে আইন ও আইনের প্রয়োগের বিষয়ে দু’দেশই যাতে ভাবে সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন। আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মহল এ ব্যাপারে গতিশীল পদক্ষেপ নেবে।
সাঈদ চৌধুরী : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর