ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সর্দি হাঁচি-কাশি শ্বাসকষ্ট জ্বরকে অবহেলা নয়

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১:২২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২০

সর্দি, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা ও জ্বরকে অবেহলা করা যাবে না। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগের কারণ হওয়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণেরও লক্ষণ হতে পারে এসব। করোনা ভাইরাস এমন একটি ভাইরাস - যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। এটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়াতে পারে এবং গত সোমবারই বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে এ ভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে।

ভাইরাসটি মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এক জন থেকে আরেক জনে ছড়ায়। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। করোনা ভাইরাস, একটি নতুন প্রজাতির ভাইরাস। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো ইতিমধ্যেই ‘মিউটেট করছে’ অর্থাৎ নিজে থেকেই জিনগত গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে - যার ফলে এটি আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এই ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে বাংলাদেশ।

চীন থেকে আসা যাত্রীদের তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে বিমানবন্দরে। এক দশক আগে সার্স নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য চিকিৎসক প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, সর্দি, হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা ও জ্বর হলে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। একই সঙ্গে এসব উপসর্গ দেখা দিলে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাইরে হাঁচি-কাশি দেওয়া যাবে না। এসব উপসর্গের চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। তবে অবহেলা করলে এই উপসর্গ প্রাণঘাতী হওয়ার আশঙ্ক রয়েছে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনা ভাইরাসে এখনো পর্যন্ত দেশে কেউ আক্রান্ত হয়নি। দেশকে এই ভাইরাসমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করছে। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করছি।

এদিকে করোনা ভাইরাস ঠেকানোর প্রচেষ্টা জোরদার করেছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো। ভাইরাসটিকে ২০১৯-এনসিওভি নামে ডাকা হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত চীনে ৪৪০ জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে বেইজিং। থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকাসহ বিশ্বের কিছু দেশেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। ডব্লিউএইচও তাদের এক বিবৃতিতে বিশ্বের সব দেশকে এ ব্যাপারে প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

গতকাল চীনের স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে। সরকারি হিসাবে সোমবার পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২৩ জন। দুই দিনের মাথায় এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণে দাঁড়িয়েছে (৪৪০)। সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ চিকিৎসাকর্মী রয়েছেন। রাজধানী বেইজিং ও সাংহাই-এর মতো শহরেও আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

গত ২০ বছরে চীন এবং বাকি বিশ্বের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট যোগাযোগ দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে। উহানের ১ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দা এখন সরাসরি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গন্তব্য ছাড়াও বাড়ির কাছের সিউল, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরের মতো শহরে যেতে পারে। এ কারণেই ভাইরাসটি চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ম্যাকাও এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসটির উপস্থিতির খবর জানা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একজন মুখপাত্র কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে পাঠানো এক বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘ভ্রমণের ধরন বাড়তে থাকায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চীনের অন্য এলাকা এবং বিদেশে আরো অনেক মানুষ ২০১৯-এনসিওভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবে’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব দেশকে প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ানোয় উত্সাহ দিচ্ছে।

২০০২-০৩ সালে সেভার একিউট রিসপাইরেটরি সিনড্রোমের (সার্স) প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় এশিয়া। ওই ভাইরাসটিও চীন থেকে ছড়ায়। ফলে এবারের ভাইরাস নিয়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না কর্তৃপক্ষ। ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর প্রচেষ্টা হিসেবে বিমানবন্দরে থারমাল পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব পরীক্ষায় উহান থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। নিউ সাউথ ওয়েলসের কিরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবনিরাপত্তা কর্মসূচির প্রধান রাইনা ম্যাকিনটায়ার বলেন, উহান থেকে এবং ওই সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে যেসব দেশে নিয়মিত যাত্রীরা যাতায়াত করে থাকে, সেসব দেশের সবারই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। রক্ষা পাওয়ার উপায়

যেহেতু করোনা ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো নেই এবং এমন কোনো চিকিৎসা নেই যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে বা এ ভাইরাস বহন করছে—তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। এছাড়া ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েছেন বারবার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা।

 
Electronic Paper