ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিজিএমইএ ভবন ভাঙা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:১৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজধানীর হাতিরঝিলে অবস্থিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়। আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ সম্পন্ন করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। এ তথ্য জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের ওপর অপরিকল্পিত ও বেআইনিভাবে বিজিএমইএ ভবন গড়ে উঠেছিল। চমৎকার ঢাকার ওপর বিষফোঁড়ার মতো এই ভবন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এটি অপসারণের জন্য আমরা পরিকল্পনা নেই। পরিকল্পনায় আইনগত কোনো ত্রুটি যাতে না থাকে সেজন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়।

টেকনিক্যাল কারণে তারা অপারগতা প্রকাশ করায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে ভবনটি অপসারণে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ছয় মাসের ভেতর ভবনটি অপসারণ করবে। এ কার্যক্রম সার্বক্ষণিক দেখভাল করার জন্য বুয়েট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধিসহ নগরও ইমারত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টিম করা হয়েছে।

এ ছাড়া রাজউকের নিজস্ব একটি টিমও এ কাজ নিয়মিত দেখভাল করবে। মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে পরিবেশ দূষণসহ সব পারিপাশির্^ক ক্ষতিকর পরিস্থিতি বিবেচনা করে যান্ত্রিক উপায়ে এ ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবনের প্রতিটি স্তর ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙা অংশ দ্রুত সরিয়ে নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় রাখা হবে যাতে কোনোভাবেই প্রাণহানি না ঘটে। ভবন ভাঙার কাজে যেন পরিবেশ বিপন্ন না হয়, সেজন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সুন্দর ঢাকা গড়া শুধু রাজউক বা গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।

গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতা নিয়ে হাতিরঝিলের মূল গভীরতার সঙ্গে মিল রেখে এ ভবন তুলে ফেলা হবে, যাতে পানির গতি বাধাপ্রাপ্ত না হয়। মন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নির্বিঘ্নে যাতে ব্যবসা করতে পারে, সেজন্য ভবন ভাঙার বহু আগে প্রস্তুতির পরও বিজিএমইএকে তাদের নিজস্ব মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পোশাক শিল্পের রপ্তানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত। সরকারের দায়িত্ব জনগণের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য কাজ করা। ভবন ভাঙতে রাষ্ট্রের কোনো টাকা ব্যয় হচ্ছে না। যারা ভবনটি ভাঙছেন তারা নিজেদের খরচে ভবন ভেঙে রাষ্ট্রকে টাকা দিচ্ছেন। ফলে রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না বা বিজিএমইএর জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। বরং দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলকে আরও পরিবেশসম্মত ও সুন্দর করা হচ্ছে। আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

হাতিরঝিলের পানিতে দুর্গন্ধ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের অনুরোধ করব হাতিরঝিল ঘুরে দেখার জন্য। এখন পানিতে সেরকম দুর্গন্ধ নেই। অস্ট্রেলিয়ান প্রযুক্তি দিয়ে প্রতিদিন এখানকার পানি বিশুদ্ধ করা হবে। পানিতে যেন ময়লা আবর্জনা না আসে সে ব্যবস্থা করা হবে। পানির আবর্জনা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিনাশ করা হবে। তবে আমাদেরও নাগরিক দায়িত্ব আছে, আমরা যাতে নিজেদের পয়োবর্জ্য হাতিরঝিলে ফেলার মতো দায়িত্বহীন কাজ না করি। হাতিরঝিলের অনুমোদিত এলাকার ভেতরে ন্যূনতম কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকবে না। পর্যায়ক্রমে সব স্থাপনা আমরা সরিয়ে দেব। অবৈধভাবে ভবন নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আমরা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে বড় করে দেখি রোগ সারানোকে। রোগের কারণ নিয়ে অবশ্যই রিসার্চ করতে হবে, কিন্তু রোগ সারাতে হবে। দুর্নীতি ও অনিয়ম বিরোধী প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স কার্যক্রম বাস্তবায়নে গৃহায়ণে ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে আমরা অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেখানে যে অনিয়ম আছে, সে অনিয়মের সঙ্গে যারাই জড়িত, কাউকেই ছাড় দেব না। উল্লেখ্য, রাজউকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ সম্পন্ন করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। এক্সকেভেটর, বুলডোজার, কংক্রিট জ্যাকহামার, দীর্ঘ ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেন, ওয়েল্ডিং মেশিন, ড্রাম ট্রাক, গ্যাস কাটারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে ভবনের ওপর অংশ থেকে নিচের অংশ ধারাবাহিকভাবে অপসারণের জন্য আলোচ্য প্রতিষ্ঠানকে চুক্তির শর্ত দিয়েছে রাজউক। এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, নিয়ম তান্ত্রিকভাবে ভবনভাঙার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ভবন ভাঙা শেষ হলে হাতিরঝিল দৃষ্টিনন্দন হবে।

এ বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. সাঈদ নূও আলম দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, সরকার সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে হাতিরঝিল ভবন ভাঙার কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময়মতো ভাঙার কাজ শেষ করবে।

হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালকও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, দ্রুতগতিকে হাতিরঝিল বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শেষ করা হবে। আর ঝিলের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

 
Electronic Paper