ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশ্বনেতা শেখ মুজিব

ইসমাইল মাহমুদ
🕐 ৯:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২০

বিশ্বের অনেক কিংবদন্তি নেতা বাঙালি জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্বনেতার মর্যাদা দিয়েছেন। কারণ, তিনি একটি দল বা একটি দেশের নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন সারা বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত গণমানুষের নেতা।

তিনি শুধু একজন ব্যক্তি ছিলেন না, ছিলেন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। সমগ্র বাঙালি জাতি এবং বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অসীম সাহসী এবং পাহাড়ের মতো দৃঢ়প্রত্যয়ী।

শোষণ-বঞ্চনাপীড়িত মানুষের জন্য তার হৃদয় সদা-সর্বদা কাঁদত। তিনি তার জীবদ্দশায় প্রতিটি মুহূর্তে বা সদা সর্বদা দেশের জনগণকে আপন ভেবেছেন। অন্যায়, অবিচার ও অপশাসনের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠস্বর ছিল সবসময়ই স্বোচ্চার। কোনো ধরনের মৃত্যুভয়ও তাকে কখনোই কুণ্ঠিত করতে পারেনি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুধু বাংলাদেশের নেতৃত্ব নয়, বিশ্ব নেতৃত্বও যেন তার হাতের মুঠোয় চলে আসে।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেখ মুজিবুর রহমানকে দমাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালায়। তার জীবনে জেল-জুলুম নিপীড়ন ছিল নিত্যসঙ্গী। শেখ মুজিবুর রহমান অসীম ত্যাগ স্বীকার করেন দেশের মানুষের মুক্তির জন্য। তার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হবে- এমন ধারণা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাত কোটি বাঙালির মতো অসংখ্য বিদেশি নেতা, বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক বিশ্বাস করতেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা সাহিত্যিক এলেন্স গিন্সবার্গ একাত্তরে তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘অনডিউটি ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘এমন একজন মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে যে অনগ্রসর বাঙালি জাতিকে মুক্তির আস্বাদ দিবে। সেই নেতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব ভাষণ যেন একজন শক্তিমান কবির নিজস্ব চিন্তাশক্তি, অনুপম চিত্রকল্প ও অকল্পনীয় শব্দচয়ন। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ওই সময়ে প্রায় রাজনীতির কবি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মার্কিন পত্রিকা ‘নিউজ উইক’-এ বঙ্গবন্ধুকে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ নামে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ডেভিট ফ্রস্ট প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার শক্তি কোথায়? বঙ্গবন্ধু এ প্রশ্নের জবাবে দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন- ‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি।’ ডেভিট ফ্রস্ট পুনরায় প্রশ্ন করেন- ‘আপনার দুর্বল দিকটা কী?’ সে উত্তরেও বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাত বলেছিলেন, ‘আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় হলো মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, কর্মচিন্তা নিয়ে আজও বাঙালি জাতি উজ্জীবিত। তিনি এমন এক মহানায়ক, যা অন্তরে লালন করতেন- কর্মে তা দেখাতেন এবং বিশ্বের বুকে উচ্চারণ করতেন। বঙ্গবন্ধুকে যারা পরবর্তী নেতাদের সঙ্গে তুলনা করেন তারা বাঙালি জাতির জন্য অভিশাপ। বঙ্গবন্ধু কত বড় নেতা ছিলেন তা বিশ্বের বাঘা বাঘা নেতাদের বক্তব্য থেকেই প্রতীয়মান।

এমনকি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পাক শাসকগোষ্ঠী মহান মুক্তিযুদ্ধের পর তাদের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থে’ উল্লেখ করেছে, শেখ মুজিব ১৯৪৮ সাল থেকে ১০ বছর পাকিস্তানের জেলহাজতে বন্দি ছিলেন। তিনি দেশদ্রোহী নন তিনি দেশপ্রেমিক। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির দূত। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু ‘জুলিও কোরি’ পুরস্কার পান। ওই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা শেখ মুজিবকে ‘বিশ্ববন্ধু’ বলে সম্মান প্রদর্শন করেন।

শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন ১৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধীকে জিজ্ঞাসা করলেন এদিন কেন? ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক্সসেলেন্সি, এ দিন বিশেষ দিন। এদিন আপনার শুভ জন্মদিন। তাই আমি এ দিনে আমাদের ভারতীয় সৈন্য আপনার স্বাধীন দেশ থেকে প্রত্যাহার করে আপনাকে উইশ করতে চাই।’ ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছিলেন, আমি হিমালয় দেখিনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তি ও সাহসে এ মানুষটি হিমালয়ের সমতুল্য।

মানবতাবাদী মনীষী লর্ড ফেনার ব্রকওয়ে বলেছিলেন, জর্জ ওয়াশিংটন, মহাত্মা গান্ধী, ডি ভ্যালেরার চেয়েও শেখ মুজিব বড় নেতা। শেখ মুজিবের সাহসিকতা ও ব্যক্তিত্ব কেবল দক্ষিণ এশিয়া নয়, সারা বিশ্বে বিরল। বঙ্গবন্ধুর মত ও মতামত মানুষ হিসেবে তিনি আর সব নেতাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ কারণেই তিনি বিশ্বনেতা। ঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলেও তার আদর্শ এখনো মনে প্রাণে লালন ও ধারণ করে বাঙালি জাতি। তাই বলা যায় ঘাতকরা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে তবে তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধু আজ শুধু বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা কোনো দলের নয়; তিনি সমগ্র বাঙালি জাতির মুক্তির আদর্শিক কাণ্ডারি হিসেবে পরিগণিত। বঙ্গবন্ধু আজ একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। যার কারণে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের নেতা হিসেবে বেঁচে আছেন মুক্তিকামী বিশ্ববাসীর মনে এটাই চূড়ান্ত বাস্তবতা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যে উক্তি আলোচিত ছিল তা হলো-

নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট : মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।

ফিদেল ক্যাস্ট্রো : শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।

ইয়াসির আরাফাত : আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম-কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।
ইন্দিরা গান্ধী : শেখ মুজিব নিহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।

সাদ্দাম হোসেন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।
কেনেথা কাউন্ট : শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামী জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

ইংলিশ এমপি জেমস লামন্ড : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।
পশ্চিম জার্মানি পত্রিকা : শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুইয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। জনগণ তার কাছে এত প্রিয় ছিল যে লুইয়ের মত তিনি এ দাবি করতে পারেন আমিই রাষ্ট্র।’

হেনরি কিসিঞ্জার : আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।

বিবিসি, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ : শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে, অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানিরা সংকোচবোধ করেছে।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান : শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।

ভারতীয় বেতার আকাশবাণী : ‘যিশু মারা গেছেন। এখন লক্ষ লক্ষ লোক ক্রস ধারণ করে তাকে স্মরণ করছে। মূলত একদিন মুজিবই হবেন যিশুর মতো।’

ব্রিটিশ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে : শেখ মুজিব জর্জ ওয়াশিংটন, মহাত্মা গান্ধী এবং দ্য ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা ছিলেন।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সা’দাত : তোমরা আমারই দেওয়া ট্যাংক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করলে! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।’

[তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট]

ইসমাইল মাহমুদ : গণমাধ্যমকর্মী ও কলামিস্ট
[email protected]

 
Electronic Paper