ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হাবিবুর ফিরলেন ৪৮ বছর পর

দিপু সিদ্দিকী, সিলেট
🕐 ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২০

বয়সে ৩০ বছরের যুবক। ছিলেন ব্যবসায়ী। প্রায় ৪৮ বছর আগে ব্যবসার কাজে সিলেট থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। কেটে গেছে ৪৮টি বছর। এত দিন তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন মাজারে-মাজারে। পরিবারের লোকজন হন্যে হয়ে খুঁজেছেন। তারা অনেকটা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য বলে কথা! ফেসবুকের বদৌলতে ৭৮ বছর বয়সে আপনজনের কাছে ফিরে এলেন মো. হাবিবুর রহমান। তার বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের বেজগ্রামে। বর্তমানে তার পরিবারের লোকজন বিয়ানীবাজারের পৌর এলাকার কসবা গ্রামে বসবাস করেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমান রড-সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। ১৯৭২ সালের প্রথমদিকে তিনি বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে বের হন ব্যবসায়িক কাজে। কিন্তু এরপর তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি।

পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজার পর তার সন্ধান না পেয়ে হতাশায় কেটেছে ৪৮ বছর। হাবিবুর রহমানের চার ছেলের মধ্যে দুজন থাকেন লন্ডনে। ছেলেরা বাবাকে ফিরে পাওয়ার আশায় বিভিন্নভাবে খুঁজতে থাকেন। অবশেষে ফেসবুকে এক ভিডিও ভাইরালের মাধ্যমে গত শুক্রবার বিকালে হাবিবুর রহমানকে ফিরে পান তারা।

জানা গেছে, প্রায় ২৫ বছর ধরে হাবিবুর রহমান মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিন মাজার এলাকায় বসবাস করেছেন। মানসিকভাবে তিনি অনেকটা ভারসাম্যহীন ছিলেন। আর ১২ বছর থেকে মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিন মাজারের পাশের রায়েশ্রী গ্রামের রাজিয়া বেগম নামের (৫০) এক মহিলা বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে দেখাশোনা করতেন। রাজিয়া জানান, তিনি ওই লোকের খেদমত করতেন সব সময়। কয়েক দিন আগে বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের হাত ভেঙে যায়। প্রথমে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান রাজিয়া বেগম। পরে সেখান থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ১২ বছর থেকে যে মানুষের খেদমত করে আসছেন রাজিয়া, এ বয়সে হাসপাতালে কীভাবে ফেলে যাবেন তাকে, কিংবা একা একা কীভাবে দেখাশোনা করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। পাশের বেডের রোগীর স্বজনদের সঙ্গে গল্প করছিলেন রাজিয়া, এই বৃদ্ধের বিগত দিনের জীবন নিয়ে। তাদের বাড়িও ছিল বিয়ানীবাজার উপজেলায়। ওই ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন। ওই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হতে থাকে। ভিডিওতে দেওয়া হাবিবুর রহমানের ছবি এবং জীবনের অনেক গল্পের মিল দেখে আমেরিকা থেকে বিয়ানীবাজারের এক ব্যক্তি ওই ভিডিও হাবিবুর রহমানের পরিবারের কাছে পাঠান গত বৃহস্পতিবার রাতে।

হাবিবুর রহমানের ছবি এবং ভিডিওর মিল দেখে তার ছেলেরা গত শুক্রবার সিলেট ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে চিনতে পারেন তাদের হারানো বাবাকে। হাবিবুর রহমান তিনিও তার বাড়ির ঠিকানা বলেন তখন। বাবাকে পেয়ে আবেগঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তারা ওসমানী হাসপাতাল থেকে বাবাকে নিয়ে আসেন নগরীর আল-হারামাইন হাসপাতালে। ভর্তি করানো হয় ৬১২ নাম্বার কক্ষে। সঙ্গে নিয়ে আসা হয় বাবাকে খেদমত করা রাজিয়া বেগমকেও। তাকেও হাবিবুর রহমানের সন্তানরা চিকিৎসা করাচ্ছেন। বাবার সঙ্গে আদর-যত্ন করছেন রাজিয়া বেগমকেও।

হাবিবুর রহমানের নাতি কেফায়েত হোসেন দাদাকে পেয়ে অত্যন্ত খুশি। তিনি জানান, ছোটকাল থেকে দাদার গল্প শুনছিলেন বাবা-চাচাদের কাছ থেকে। মনে আশা ছিল দাদাকে একদিন ফিরে পাবে তারা।

 
Electronic Paper