বিশেষ কলাম
বায়ুদূষণের প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন
সাঈদ চৌধুরী
🕐 ৯:১৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুতে বাংলাদেশ পাঁচ নম্বরে ছিল গত কিছুদিন আগেও! এখন ঢাকার বাতাস প্রতিদিনই দূষিত এবং প্রায় দিনই বিশ্বে দূষণের দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে! দূষণ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ওষুধের ওপর বাঁচার প্রবণতা কতটা কাজে দেবে এটা নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বাজারে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের ওষুধ বিক্রির হারের ওপরও বোঝা যায় আমাদের বায়ুদূষণের অবস্থা।
বাতাস দূষিত হওয়ার নির্দিষ্ট মাত্রাকে এখন আর সামনে আনার প্রয়োজনীয়তাই নেই, কারণ কিছু রাস্তা এমন আছে সেখানে বাতাসে ভারি পার্টিকেল সব ধরনের স্ট্যান্ডার্ডকে অতিক্রম করতে পারবে। ধুয়ার অবস্থাও কিন্তু খুব আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
গত কয়েকদিন আগে একটি পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী ‘আটানব্বই শতাংশ ইটভাটা পরিবেশ বিধ্বংসী নয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া, মিল ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত ধোঁয়া, কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি থেকে বর্জ্য পানি যেখান থেকে অবমুক্ত হওয়া সালফারের গন্ধ মিশ্রিত বাতাস, বিভিন্ন যানবাহন ও আবাস, অফিস থেকে এসির নির্গত গ্যাস, মোবাইল টাওয়ারের তরঙ্গ, পোলট্রি ও ট্যানারি শিল্প এবং আবর্জনার ভাগাড় থেকে অবমুক্ত অ্যামোনিয়ার দুর্গন্ধ- সব উপাদান মিলে বাতাস আজ নিঃশ্বাসের অনুপযোগী প্রায়। যেগুলোর নাম এসেছে এর বাইরের বায়ুদূষক রয়েছে এবং সেগুলোও মারাত্মক ঝুঁকির কারণ।
বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯ (এসওজিএ) শীর্ষক প্রতিবেদন এ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুর হারের দিক থেকে পৃথিবীতে পঞ্চম! এখন ঢাকার বাতাস যখন প্রতিদিন তার দূষণকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে তখনই কেবল আমরা দূষণের কথা বলছি!
অনেক বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে সামনের দিনগুলোতে। তবে দুঃখজনক ব্যাপার, রাস্তায় ধুলোজনিত যে পার্টিকেলগুলো বাড়ছে তা রাস্তা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করার কারণেই। অনেক সময়ই দেখা যায় যারা রাস্তা পরিষ্কার করছে তারা রাস্তার ডিভাইডার ঘেঁষে ধুলোগুলো রেখে চলে যাচ্ছে! এর ফলে কিছুক্ষণ পর রাস্তার ধুলো রাস্তায়ই ফিরে আসছে। এখানে সিটি করপোরেশনের অনেক কাজ করা আছে। রাস্তা মেরামত দীর্ঘস্থায়ী হওয়াতেও এ প্রভাব পড়ছে। মূলত রাস্তার ধুলোর জন্য বায়ুদূষণের হার অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে চলাচলকারী শিশুদের ওপর!
উন্নত বিশ্বের মতো স্ট্যাক ইমিশন কমিয়ে আনার জন্য মেশিন সঠিকভাবে মেইনটেন্যান্স করা, সঠিক উচ্চতায় চুল্লী স্থাপন করা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফিল্টারিং সিস্টেম করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক কোম্পানির এক্সোস্ট বের করার জন্য যে চিমনি তা সরাসরি রাস্তা অভিমুখে দেওয়া। যখন বিদ্যুৎ যাচ্ছে এবং জেনারেটর চালু হচ্ছে তখনই কালো ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে রাস্তা! এগুলো শিল্পায়নের কোনো নিয়ম হতে পারে না। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহগামী মহাসড়কেই দেখা যাবে এমনটা। আঞ্চলিক সড়কে তো কথাই নেই!
এসিগুলোতে সিএফসি ফ্রি গ্যাস ব্যবহারের কথা জানে কত জন মানুষ। এসি চলছে, ঠাণ্ডা হচ্ছে তাতেই যেন শান্তি। কিন্তু আমি পরিবেশের কী ক্ষতি করছি এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। এ বিষয়গুলো সামনের দিনগুলোতে ভাবতে হবেই।
একদিকে দূষণ অন্যদিকে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে আমরা পতিত হচ্ছি সর্দি জ্বরের কারণেই মৃত্যুর হুমকির দিকে! তাই এখনই ভাবুন দূষণ কমানো নিয়ে আর সবুজ প্রকৃতি নিশ্চিতে কাজ করুন একাগ্র চিত্তে।
সাঈদ চৌধুরী : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর