ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বড় প্রাপ্তি টপ অর্ডার

ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২০

শেষ হলো প্রায় দেড় মাসব্যাপী বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই টুর্নামেন্টের রোমাঞ্চ শেষ হলো কাল রাতে। যেখানে বিপিএল পেয়েছে নতুন চ্যাম্পিয়ন দলকে। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই পাকিস্তান সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রস্তুতি হয়ে গেল বাংলাদেশ দলের।

এবারের প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় হলো পারফর্ম করেছেন জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। তবে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি টপ অর্ডার। বিশেষ করে ওপেনিংয়ে। এতদিন তামিম ইকবালের সঙ্গী খুঁজতে হাপিত্যেশ করতে হতো নির্বাচকদের। অথচ এবারের বঙ্গবন্ধু টুর্নামেন্ট থেকে অনেকটাই নির্ভার হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

এখন শুধু তামিমের সঙ্গী নির্বাচন নয়, তার বিকল্প কয়েকজনও পেয়েছেন নির্বাচকরা। নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, লিটন দাস- তাদের প্রায়সবাই রানের মধ্যে ছিলেন। প্রথমজনের স্ট্রাইক রেট ছিল সর্বোচ্চ। ব্যাট হাতে রানের ফোয়ার ছড়িয়েছেন খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও।

তার তার ভাবনার নাম স্ট্রাইক রেট। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের মধ্যে মুশির স্ট্রাইক রেটই একটু কম। ঢাকা প্লাটুন ওপেনার তামিম ইকবালের অবস্থা আরো বাজে। রানের মধ্যে বাঁ-হাতি ওপেনার থাকলেও কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ব্যাট করতে দেখা যায়নি তাকে।

তবু নির্ভার নির্বাচকরা। পাকিস্তান সফরের জন্য দল নির্বাচন করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না তাদের। তবে সবাই ফর্মে থাকায় চূড়ান্ত দল দিতে কিছুটা হলেও মধুর সমস্যা পড়তে হবে নান্নু-বাশারদের। কিন্তু অভিজ্ঞদের তুলনায় আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন শান্ত ও মিরাজ। পরশু খুলনা টাইগার্সের অনুশীলনে দুজনকে দেখা গেল দারুণ প্রাণবন্ত। ফাইনালের আগের দিন রাজশাহী রয়্যালসের অনুশীলন ছিল না। নিজের তাগিদে তবু ব্যাটিং করতে এসেছিলেন লিটন দাস। একাডেমি মাঠে দেখা হলো তাদের, একচোট আড্ডাও জমল তিনজনের। শুধু আফিফই ছিলেন না ওখানে। সদ্য সমাপ্তি আসরে তরুণদের মধ্যে এই চারজনই সবচেয়ে আলোচিত।

চারজনই দারুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার। তাদের ব্যাটিং নিয়ে আছে কম-বেশি হতাশার জায়গাও। তবে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে মিলেছে তাদেরকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস। জুটি বেঁধে তাদের ব্যাটিং উপহার দিয়েছে আনন্দময় বিস্ময়। এবারের আসর থেকে দেশের ক্রিকেটের বড় প্রাপ্তি সম্ভবত খুলনা ও রাজশাহীর শুরুর জুটিতে এই চারজনের পারফরম্যান্স।

লিটন ও আফিফের যুগলবন্দী নিঃসন্দেহে এবারের বিপিএলের সেরা উদ্বোধনী জুটি। ধারাবাহিকতা, ব্যাটিংয়ের ধরন, দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব, সবকিছু মিলিয়ে রাজশাহীর ফাইনালের পথে এগিয়ে যাওয়ায় বড় ভূমিকা এই উদ্বোধনী জুটির। আসরের দ্বিতীয় ভাগে কোনো অংশে কম যায়নি শান্ত ও মিরাজ জুটিও। এই জুটির সূচনা টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি থেকে। ফাইনালের পথে খুলনার এগিয়ে চলা মসৃণ হয়েছে চমক জাগানিয়া এই জুটির সৌজন্যে। চমকের কারণ, দুজনের পারফরম্যান্স ও প্রেক্ষাপট।

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে যিনি ছিলেন ‘জেনুইন’ অলরাউন্ডার, ব্যাটিং-বোলিংয়ে দক্ষতা ছিল সমান, জাতীয় দলে আসার পর সেই মিরাজ অনেকটাই হয়ে গিয়েছিলেন বোলার। ব্যাটিংয়ে ঝলক মাঝেমধ্যে দেখিয়েছেন বটে, তবে ছিল ধারাবাহিকতার অভাব।

এবার সেই মিরাজের রান ফাইনালের আগ পর্যন্ত ২৮৮, গড় ৩৬। সবচেয়ে নজরকাড়া তার স্ট্রাইক রেট, ১৩২.১১! তবে এই পরিসংখ্যানের চেয়েও বিস্ময়কর তার ব্যাটিং পজিশন। টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে নেমে মিরাজ কার্যকর হতে পারেন, এই বিপিএলের আগে কে ভাবতে পেরেছিল! অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক, দুই কাছের বন্ধু মিরাজ ও শান্ত মিলে গড়ে তুলেছেন দারুণ কার্যকর উদ্বোধনী জুটি।

দীর্ঘ হতাশার খোলস ভেঙে শান্ত অবশেষে বেরিয়ে এসেছেন এই বিপিএলের শেষ দিকে। এবারও শুরুটা তার ছিল যথারীতি ব্যর্থতায় মোড়ানো। প্রথম চার ম্যাচ মিলিয়ে করতে পেরেছিলেন কেবল ৬ রান। একবার বাদ পড়েছেন, একবার বাইরে গেছেন চোটের কারণে। এরপর ধীরে ধীরে খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে। সবশেষ দুই ম্যাচে জ্বলে উঠেছেন চোখধাঁধানো ব্যাটিংয়ে। এবারের আসরে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে করেছেন সেঞ্চুরি। সেই ম্যাচে ৫৭ বলে অপরাজিত ১১৫ রানের ইনিংসের পর কোয়ালিফায়ারে ৫৭ বলে অপরাজিত ৭৮ রান করেন শান্ত।

খুলনার ষষ্ঠ ম্যাচে প্রথমবার একসঙ্গে ইনিংস শুরু করেন শান্ত ও মিরাজ। ১.৫ ওভারের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৩ রান। সেদিন যা ছিল ইঙ্গিত, পরের ম্যাচে তা পায় পূর্ণতা। ১১৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে অবাক করে দেন দুজন। এরপর চলতে থাকে ধারা। আরও তিন ম্যাচে এই দুজনের উদ্বোধনী জুটি ছাড়িয়েছে ৭০। দুজন রানও তুলেছেন যথেষ্ট দ্রুততায়। রাইলি রুশো, মুশফিকুর রহিমদের জন্য গড়ে দিয়েছেন মঞ্চ।

 
Electronic Paper