বালুচরে সবুজের সমারোহ
সুশান্ত ভৌমিক, রংপুর
🕐 ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
রংপুরের তিস্তাসহ প্রধান প্রধান নদীবিধৌত চরাঞ্চলে মিষ্টি কুমড়াসহ দানাদার ফসল চাষের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিস্তা, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে জেগে উঠেছে তিন লাখ হেক্টরের বেশি চরাঞ্চল। আর এই চরাঞ্চলে উৎকৃষ্ট ফসল মিষ্টি কুমড়াসহ দানাদার অন্যান্য ফসল চাষে দেখা দিয়েছে অপার সম্ভাবনা। জানা গেছে, শুধু তিস্তা ব্যারেজ থেকে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু পর্যন্ত প্রতি বছর এক লাখ ৮০ হাজার হেক্টর চর জেগে ওঠে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা- এই বিস্তীর্র্ণ চরাঞ্চলে মাত্র ৪-৫ মাসে শুধু মিষ্টি কুমড়া ও স্কোয়াশ চাষ করে আয় হতে পারে ৪০০ কোটি টাকা। এতে তিস্তা অববাহিকার ভূমিহীন অতি দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
দেশে প্রতি বছর অকৃষি, বাসস্থান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্প কারখানায় শতকরা একভাগ হারে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমি কমছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে খাদ্য চাহিদা পূরণে প্রয়োজন কৃষি উৎপাদনশীলতা। এজন্য চরাঞ্চলের জমি ব্যবহারে মনোযোগী হচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা।
এক সময়ে যে তিস্তায় জেগে ওঠা বিশাল এলাকায় ছিল শুধু বালুচর, এখন সেই তপ্ত বালুতে সবুজের সমারোহ। বিস্তীর্ণ দুর্গম অনাবাদি চরাঞ্চলের যেদিকে চোখ যায় এখন শুধুই মিষ্টি কুমড়া। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে আশ্রিত ভূমিহীনরা তিস্তার বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি হয়েছেন সচ্ছল। নদী সব কেড়ে নিলেও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে হতদরিদ্র পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।
রংপুরের কাউনিয়ার তিস্তার ধু ধু বালুচর তালুক শাহবাজ। মাত্র ১০ বছরে এই এলাকার ভূমিহীন হতদরিদ্ররা উন্নত জাতের মিষ্টি কুমড়া স্কোয়াশের বীজ, পরিচর্যার টাকা, সেচ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তি সহায়তায় কর্মসংস্থান এবং অভাবী সংসারে সচ্ছলতার মুখ দেখছে। ঘরে ঘরে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
রংপুরের কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নির্মল চন্দ্র ব্যাপারী জানান, তিস্তার চরে ২ হাজার হেক্টরে মিষ্টি কুমড়া ও স্কোয়াশ চাষ হয়েছে ৮০ হাজার মেট্রিক টন। ১০ বছরে এতে ২১ কোটি টাকা খরচ হলেও লাভ হয়েছে তার দ্বিগুণ ৪২ কোটি টাকা। আর দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১৫ হাজার প্রান্তিক মানুষ।
এই কুমড়া চাষের সফলতা দেখতে তালুক শাহবাজ চরে আসেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভূমিহীন চাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জানান, জেগে ওঠা চরের অপার সম্ভাবনার কথা। সেই সঙ্গে কৃষি ও কৃষক যাতে ক্ষতির শিকার না হয় এবং শস্য বহুমুখী ও বিপণন ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য বিভিন্ন কৌশলের কথা জানিয়েছেন তারা।
শুধু তিস্তার চরেই নয়, দেশের সব নদী অববাহিকার চরে উপযোগী ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ ক্ষেত্রে জেগে ওঠা চরে ভূমিহীনদের অংশীদারিত্ব সমস্যা নিরসন এবং তাদের প্রণোদনা দিতে আরও এগিয়ে আসতে হবে কৃষি বিভাগকে।