ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সৈয়দপুর রেলওয়ে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

এম এ মোমেন, সৈয়দপুর
🕐 ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ০৯, ২০২০

নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। তিনি রক্ষক হয়েও ভক্ষকে পরিণত হয়েছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রেলওয়ে কারখানার শ্রমিকদের বসবাসের জন্য নির্মিত কোয়ার্টার কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা শ্রমিকরা না পেলেও বসবাস করছে বহিরাগতরা। বসবাসের অযোগ্য (ড্যামেজ) ঘোষণা করা হলেও তা বহিরাগতদের দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের নামে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তাতে বসবাস করছেন অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মচারীসহ বহিরাগতরা। অথচ অর্থ কর্তন করা হচ্ছে বরাদ্দপ্রাপ্ত শ্রমিকের বেতন থেকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক শ্রমিক। তারা এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়েও সুরাহা পাচ্ছেন না দীর্ঘদিন থেকে।

ভুক্তভোগী এমন একজন রেলওয়ে কর্মচারী জানান, তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ এলাকায় একটি কোয়ার্টার বরাদ্দ দেয় কর্তৃপক্ষ। যার নম্বর এল-৪৩। কিন্তু কোয়ার্টারটি পছন্দ না হওয়ায় বরাদ্দ বাতিল করার জন্য বলেন। এ সময় কর্তৃপক্ষ জানায় তাৎক্ষণিক এটি বাতিল করা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে কোয়ার্টারটি একই কারখানার ওয়েল্ডিং শপের কর্মচারী আব্দুল সালাম খন্দকারকে ভাড়া দেন। ওই সময় তিনি অবসরকালীন ছুটিতে (এলপিআর) ছিলেন। এ কারণে তার নামে কোয়ার্টারটি বরাদ্দ প্রদান করা সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় ওই বছরের শেষ দিকে আব্দুস সালাম খন্দকারের এলপিআর শেষ হলে তিনি পূর্ণাঙ্গভাবে অবসরে যান।

ভুক্তভোগী কর্মকর্তা আরও বলেন, এ সময় আবারও আমার নামের বরাদ্দ বাতিলের আবেদন করি। এতে কারখানার ব্যারাক মাস্টার সাইফুল ইসলাম কোয়ার্টার বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে বলে জানালেও দীর্ঘদিনেও এ সংক্রান্ত কোনও ক্লিয়ারেন্স না দেওয়ায় এখনো আমার বেতন থেকে কোয়ার্টার বাবদ ৬শ’ টাকা কর্তন করা হচ্ছে। অথচ কোয়ার্টারটি আমি ব্যবহার বা ভাড়া দিতেও পারছি না। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

এদিকে ওই কর্মচারী অভিযোগ করেন, ব্যারাক মাস্টার ও স্থানীয় রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (আইওডব্লিউ) তহিদুল ইসলাম ওই কোয়ার্টারটিকে বসবাসের অনুপযোগী (ড্যামেজ) দেখিয়ে তাতে ভাড়াটিয়া আব্দুস সালাম খন্দকারকেই বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে অর্থের লেনদেন হয়েছে।

এ ব্যাপারে আব্দুস সালাম খন্দকারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, শুধু আমিই এখানে এভাবে বসবাস করছি না। বরং এখানকার প্রায় ১২টি কোয়ার্টারের প্রত্যেকটিতেই মানুষ বসবাস করছে। প্রত্যেকেই আইওডব্লিউ ও ব্যারাক মাস্টারকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই রয়েছে। তারা কোয়ার্টারগুলোকে ড্যামেজ হিসেবে দেখিয়ে কর্তৃপক্ষকে সে ধরনের প্রতিবেদন দিয়েছে। ফলে এখানে বহিরাগতরা বসবাস করলেও এ ব্যাপারে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো সমস্যা করছে না।

একটি সূত্র মতে, সৈয়দপুর শহরের প্রায় সিংহভাগ রেলওয়ে কোয়ার্টার এভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশেই বহিরাগতরা দীর্ঘদিন থেকে দখল করে বসবাস করে চলেছেন। কারখানায় বর্তমানে মাত্র ৯ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই নিজস্ব বাসাবাড়িতে থাকে। অথচ এ শহরে কোয়ার্টার রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫ শতাধিক। ফলে অধিকাংশ কোয়াটারই বরাদ্দের বাইরে থাকে। এ সুযোগে বহিরাগতদের দিয়ে তা থেকে পকেট মানি হাতিয়ে নিচ্ছেন অভিযুক্ত কর্মকর্তারা। ফলে রক্ষকই ভক্ষকে পরিণত হয়েছেন বলে ব্যাপক প্রচারণা রয়েছে সৈয়দপুরে।

বিষয়টি নিয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ব্যারাক মাস্টার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার কার্যালয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোনও তথ্য দিতে পারব না। রেলওয়ে হাউজিং সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি রেলওয়ে কারখানার ওয়ার্কস ম্যানেজার (ডব্লিউএম) ভালো বলতে পারবেন। অথবা এ ব্যাপারে রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার (আইওডব্লিউ) সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

সৈয়দপুর রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (আইওডব্লিউ) তহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কোনও শ্রমিকের নামে বরাদ্দকৃত কোয়ার্টার বাতিল হয়ে থাকলে তার বেতন থেকে টাকা কাটার কথা নয়। তারপরও যদি এমনটি হয়ে থাকে তা ওই শ্রমিকের ব্যর্থতায় আমাদের কোনও দায়িত্ব নেই। তবে তিনি যদি আমার কাছে এসে তার বরাদ্দ বাতিলে কাগজপত্র দেখাতে পারেন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যিনি বর্তমানে ওই কোয়ার্টারে বসবাস করছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল কিন্তু একজন শ্রমিক নেতার কারণে তা করতে পারিনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ওয়ার্কস ম্যানেজার (ডব্লিউএম) শেখ হাসিনুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, কারখানার কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়মের কোনও অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখা হবে। অপরাধ নিশ্চিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমি এখানে নতুন। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

 
Electronic Paper