ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিজয়ের দিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৭:০০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯

মহান বিজয় দিবস আজ। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। সবুজের মাঝে খোদিত হয় লাল টকটকে এক সূর্য, লাল-সবুজের এ আবহই বাংলাদেশের প্রাণের পতাকা। এ পতাকা অর্জনে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রম হারিয়েছেন ২ লাখ মা-বোন। নতুন প্রজন্মসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ আজ শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ছেয়ে যাবে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার ফুলে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। যাদের অবদানে মুক্ত এ দেশ, যারা দিয়েছেন স্বাধীন একটি ভূখণ্ড, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার- আবালবৃদ্ধবনিতা বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবেন তাদের অবদান।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চে রাজধানীর রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠ নিঃসৃত অজর কবিতায় মুক্তিপাগল জাতি পেয়েছিল স্বাধীনতার দিশা। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ভাষণে ছিল সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে এ দেশের নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত মানুষের ওপর।

পাল্টা আঘাত দিতে ঘুরে দাঁড়ায় বীর বাঙালি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির বজ্রনিনাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। মায়ের সম্মান বাঁচাতে মুষ্টিবদ্ধ হাতে ঘরের বাইর হয়েছিলেন কিশোর তরুণ যুবারা। বীর সন্তানদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আসে ১৬ ডিসেম্বর, ধরা দেয় কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ৪৮ বছর করে আজ ৪৯ বছরে পদার্পণ করছে বাংলাদেশ। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায় অশ্রু আর রক্ত মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পর, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে যখন এক ভিন্ন লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন এ জাতির প্রাণপুরুষের বিরুদ্ধে চলে নানান ষড়যন্ত্র। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতে সপরিবারে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধু। এরপর দীর্ঘদিন অনেকটাই আড়াল করে রাখা হয় বাঙালির মহান মুক্তিসংগ্রামের সব গৌরবগাথা।

তবে সব ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত নস্যাৎ করে শেষাবধি বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে শুধু অন্ধকার থেকে আলোর পথেই যাত্রা শুরু করেনি দেশ, উন্নতির শিখরেও আরোহণ করছে।

ইতোমধ্যে উন্নয়নমূলক বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দৃষ্টি কেড়েছেন দেশ-বিদেশের বোদ্ধাদের। মোটা দাগে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে-
পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জ : পদ্মা নদীর বুক চিরে জেগে উঠছে একটি সেতু। স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে।

ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে বহুল আলোচিত সেতুটি। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করে। পরে কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয় এ অভিযোগ ছিল মিথ্যা। নেপথ্যে ছিল বাংলাদেশকে হেয়প্রতিপন্ন করার পাঁয়তারা। বিশ্বব্যাংক মুখ ঘুরিয়ে নিলেও শেখ হাসিনা নিজস্ব উদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তখন সেটাকে অনেকে অসম্ভব হিসেবে আখ্যায়িত করলেও, আজ পদ্মা সেতু এক বাস্তবতা। বাংলাদেশের উন্নয়নের এক সোপানের নাম পদ্মা সেতু।

মেট্রোরেলে যানজট মুক্তির স্বপ্ন : ঢাকাকে ঘিরে মেগা উদ্যোগ মেট্রোরেল দৃশ্যমান হতে শুরু হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০২১ সালের মধ্যে চালু হবে রাজধানী অভ্যন্তরীণ এ পরিবহন। বর্তমানে দুর্ভোগ পোহালেও মেট্রোরেলে মিলবে কাক্সিক্ষত সুফল। অনাকাঙ্ক্ষিত যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে অনেক কর্মঘণ্টা।

এর প্রভাব পড়ছে কারখানায়, অফিস আদালতে এবং ব্যক্তিজীবনে। আর্থিক মূল্যমানে কোটি কোটি টাকা গ্রাস করে নিচ্ছে যানজট। এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যানজটের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেলে জাতি এগিয়ে যাবে আরও। রাজধানী এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাবে। এতে জনজীবনে যেমন স্বস্তি আসবে, অর্থনীতিতে সৃষ্টি হবে প্রাণচাঞ্চল্য।

ক্রীড়ায় রূপকথা : বাংলাদেশের লাখো মানুষ ক্রীড়ামোদি। নির্দোষ বিনোদন ক্রীড়া জাতিকে দিচ্ছে একচিলতে বিনোদন। ক্রীড়ায় বর্তমানে বহির্বিশ্বেও সুনাম কুড়াচ্ছে বাংলাদেশের সোনার ছেলেমেয়েরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সুনাম সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশ এতদিন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেশ হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলায়ও পরিচিতি পাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাই বহির্বিশ্বে টাইগার হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন। নারীও ক্রীড়ায় যে নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছেন তাতে বাংলাদেশ নানাভাবেই প্রশংসিত হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ক্রীড়ায়ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ। এখন যে রূপকথা বাস্তবে দেখা দিয়েছে, একসময় বাংলাদেশের বাস্তবতাই বহির্বিশ্বে রূপকথা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে!

নারীর প্রগতি : নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে বিশ্বে রোল মডেল। বর্তমানে পৃথিবীতে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রীও নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী, এছাড়াও অনেক সংসদ সদস্যও নারী। নারীরা সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যেমন হচ্ছেন, হচ্ছেন বিচারপতিও। ঘরে-বাইরে নারীর জয়জয়কার। রপ্তানিতে বাংলাদেশের সর্বাধিক মুনাফা অর্জনকারী খাত পোশাক শিল্প। এ শিল্পে কাজ করছেন কয়েক লাখ নারী। এ নারীদের তৈরি পোশাক যখন বহির্বিশ্বের মানুষের গায়ে ওঠে, পোশাকে ট্যাগ দেওয়া ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ আলো ছড়ায় বিদেশ-বিভূঁইয়েও! এ ছড়িয়ে পড়ছে দেশে-বিদেশে।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে দৃষ্টান্ত : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে এ দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার। পরে আলবদর, রাজাকাররা খোলস পাল্টে ফেলে। ধীরে ধীরে তারা যে প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জন করেছিল তাতে তাদের বিচার করাকে অসম্ভব বলেই মনে হতো একসময়। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দুঃসাহসী নেতৃত্ব দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। কঠিন সব পদক্ষেপ নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতেও সমর্থ হন অবশেষে। জাতি রক্ষা পায় অবিচারের সংস্কৃতির কলঙ্ক থেকে।

তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার : বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় বদ্ধপরিকর। এর সুফল মিলতে শুরু করেছে। নানা ক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারে বাংলাদেশে সূচিত হচ্ছে ইতিবাচক সব পরিবর্তন। কোটি কোটি মানুষের হাতে উঠে এসেছে মোবাইল ফোন। এসব ফোন সহজলভ্য হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত। কেন্দ্রের মানুষ আর প্রান্তের মানুষের মধ্যে বড় ধরনের বিভেদও থাকছে না।

বিজয় দিবসের ঠিক আগেরই দিন সরকারিভাবে প্রকাশিত হলো রাজাকারদের তালিকা। এটাকেও বিজয় দিবসের বড় অনুষঙ্গ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এভাবে বর্তমান সরকার ধাপে ধাপে উড়িয়ে যাচ্ছে বিজয়বার্তা। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে পরিপূর্ণতা দানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০২১’, ‘ভিশন ২০৪১’ এবং শতবর্ষ মেয়াদি ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ গ্রহণ করেছেন। জাতিসংঘ ঘোষিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০’ অর্জনসহ ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করাই এসব মহাপরিকল্পনার উদ্দেশ্য।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগাপ্রকল্প এবং মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অভিজাত স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য। আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে সাড়ম্বরে। এ দুটি অনুষ্ঠান হবে ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক।
আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

কর্মসূচি : ঢাকায় আজ প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরস্থ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

আওয়ামী লীগের দুদিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে আরও রয়েছে- দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন আগামীকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 
Electronic Paper