ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শতভাগ মৃত্যুঝুঁকি নিপায়

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯

প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। মৃত্যুও বাড়ে। বাদুড়ের মাধ্যমে খেজুরের কাঁচা রসে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। নিপাহ এতটাই মারাত্মক যে, তেমন কোনো প্রতিরোধের আগেই আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এতে মৃত্যুঝুঁকি শতভাগ।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কোনো ওষুধ না থাকায় সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। তারা শীতকালে খেজুরের কাঁচা রস পান করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

চলতি মার্চে মাসে ঠাকুরগাঁয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় অজ্ঞাত রোগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। হঠাৎ এই মৃত্যুর পর পরীক্ষা চালিয়ে মৃত ব্যক্তিদের একজনের দেহে নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সংস্থাটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মৃতদের সবার জ্বর, মাথাব্যথা, বমি ও মস্তিষ্কে ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল।

চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, নিপাহ এমন একটি ভাইরাস যা পশু-পাখি থেকে মানুষে ছড়ায়। বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাস মূলত ছড়ায় বাদুড়ের মাধ্যমে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ সময়টাতে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়, আর বাদুড় গাছে বাঁধা হাঁড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে।

পাশাপাশি বাদুড় হাঁড়িতে মলমূত্র ত্যাগ করায় ও রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যাওয়ায় ভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা থাকে। কাঁচা রস খেলে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

গবেষকরা বলছেন, নিপাহ ভাইরাসের কোনো ওষুধ আবিষ্কার না হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে ৭০ থেকে ১০০ ভাগ। আর বেঁচে যাওয়া রোগীদের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ ভাগ স্নায়বিক দুবর্লতায় ভুগতে থাকেন। তাই সচেতনতাই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

এ বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে আসছি। এই রোগে আক্রান্ত হলে কোনো চিকিৎসা নেই। ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিপাহতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার শতকরা ৭০ ভাগ।

আইইডিসিআরের গবেষণা থেকে জানা যায়, শুধু রস পান করে নয় বরং ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীদের প্রায় অর্ধেক আক্রান্ত হয়েছে রোগীদের সেবা করার সময়।

তিনি বলেন, খেজুরের রস না খাওয়ার পাশাপাশি বাদুড়ের খাওয়া কোনও আংশিক ফল খেলেও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসার পর সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত সম্ভব সরকারি হাসপাতালে নিতে হবে।

গত ৯ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত নিপাহ ভাইরাস বিষয়ক এক সম্মেলনে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি মারাত্মক মহামারির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

রয়টার্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিপাহ আক্রান্তদের চিকিৎসায় কোনও ওষুধ কিংবা টিকা উদ্ভাবন না হওয়ায় এতে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৯০ শতাংশ। স্বাস্থ্যঝুঁকি সামলানোর পর্যাপ্ত উপকরণ এখনও বিশ্বে নেই। এই ভাইরাসের প্রার্দুভাব এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সীমাবদ্ধ হলেও এটি মারাত্মক মহামারিতে রূপ নিতে পারে বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।

আইইডিসিআরের তথ্যমতে, ২০০১ সালে প্রথম মেহেরপুরে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা চিহ্নিত হয়। এখন পর্যন্ত নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের ৩১টি জেলায় নিপাহর সংক্রমণ দেখা গেছে। নিপাহ ভাইরাসে ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৩ জন, আর মৃত্যুবরণ করেছেন ২১৭ জন।

 
Electronic Paper