দুই বাংলার মিলন মেলা
হাসান বাপ্পি ও জসিমউদ্দিন
🕐 ১:১৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯
সীমান্তের শক্ত কাঁটাতার এতটুকু আলাদা করতে পারেনি রক্তের বাঁধন। পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছেন। কুশল বিনিময় করেছেন। কেউ কেউ কাঁটাতারের উপর দিয়ে বিস্কুট, চানাচুর ছুড়ে দেন একে অপরকে। কেউবা আত্মীয়স্বজনের উদ্দেশে ঠাণ্ডা পানীয় বোতল ছুড়ে দেন। এমন আবেগঘন পরিবেশে স্বজন ও পরিচিতদের দেখে অনেকেই কেঁদে ফেলেন। তবে সে কান্না বিরহের নয়, ছিল মধুর মিলনের।
প্রতি বছরের মতো এবারও ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর সীমান্তে অনুষ্ঠিত হলো দুই বাংলায় বাস করা মানুষের মিলনমেলা। এ মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান প্রিয়জনকে দেখতে। মনের ভাব আদান-প্রদান করতে। গতকাল শুক্রবার হরিপুর উপজেলার চাঁপাসার ও কোচল সীমান্তে অবস্থিত গেবিন্দপুর শ্রী শ্রী জামর কালীমন্দিরে পূজা উপলক্ষে অস্থায়ী এ মেলার আয়োজন করেন স্থানীয়রা। বিচ্ছিন্ন দুই দেশের স্বজনদের কিছু সময় কথা বলার সুযোগ করে দেয় বিজিবি ও বিএসএফ। মিলনমেলায় উপচেপড়া ভিড়েও পুরো এলাকা ছিল কঠোর নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে।
সকাল থেকেই হরিপুরের কুলিক নদী পার হয়ে বাংলাদেশের চাঁপাসার, কোচল এবং ভারতের মাকড়হাট ও নারগাঁও সীমান্ত এলাকা থেকে ৩৪৪/৪৫-নং মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকার কাঁটাতারের দুই প্রান্তে ভিড় করেন দুই বাংলার হাজারো নারী পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ। সীমান্তবাসী জানান, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী যেসব সাধারণ মানুষ অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেন না, তারা এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। এ দিনে তারা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন।
হরিপুরের নীপেন্দ্র নাথ বলেন, বোনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। দেখাও হয়েছে। কিন্তু বোনকে আদর করতে পারিনি। তারপরও অনেক খুশি।
দিনাজপুরের রমনি বালা বলেন, মেয়ে ও জামাই ভারতে থাকে। তাদের দেখতে মিলনমেলায় হাজির হই। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাদের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়। কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের ননি রানী আসেন মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে। শিলিগুড়িতে থাকা মেয়ে রিনা রানীকে ১১ বছর ধরে দেখেন না তিনি। একই গ্রামের জমির উদ্দিন আসেন ছেলে ও ছেলে বউয়ের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু এবার দেখা না হওয়ায় হতাশ হয়েই দাঁড়িয়ে থাকেন কাঁটাতারের দেয়াল ধরে।
এদিকে মেলা কমিটির সভাপতি নগেন কুমার পাল জানান, প্রতি বছর দুই দেশের মিলনমেলার জন্যই পাথরকালী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলা উপলক্ষে বিজিবি-বিএসএসফ দুদেশের মানুষের মধ্যে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়।
হরিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আমিরুজ্জামান জানান, মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে আগেই। স্থানীয়ভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তির সহায়তায় মেলাটি সুনামের সঙ্গে প্রতি বছরই বসে থাকে। তাই অন্যবারের মতো এবারও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই মেলা শেষ হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও ৫০-বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল সামিউন নবী চৌধুরী জানান, মেলাটি স্থানীয়ভাবে হয় এবং এবারও হয়েছে। এ মেলা উপলক্ষে দুই দেশের হাজারো মানুষ তাদের আত্মীয়স্বজনকে খুঁজে পান। সেটি দেখে ভালোই লাগে। মেলা উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার ছিল এবং বিজিবি ও বিএসএফ যৌথ সহায়তা ছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর এদেশের অনেকেই ভারতীয় অংশে পড়ে যান। ফলে অনেকেরই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে তারা উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অলিখিত সম্মতিতে প্রতি বছর এ সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান।