ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সিঙ্গাপুরে বাজার থেকে প্রত্যাহার

ডায়াবেটিসের ওষুধে ক্যান্সারের উপাদান!

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯

ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফরমিনে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক এন-নাইট্রোসোডিমিথাইলামিনের (এনডিএমএ) বিপজ্জনক মাত্রার উপস্থিতির আশঙ্কায় এ ওষুধটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে।

বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ব্যবহৃত ডায়াবেটিসের এ ওষুধে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। মেটফরমিনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় এনডিএমএর উপস্থিতি পাওয়ার পর সিঙ্গাপুরের বাজার থেকে ইতোমধ্যে এ ওষুধটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। গ্লুকোফেইজ নামের মেটফরমিন গ্রুপের একই ক্যাটাগরির ওষুধটি যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) ব্রিটেনের বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া যায় কিনা; সে বিষয়ে বিবেচনা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ), হেলথ কানাডা এবং ইউরোপীয় মেডিসিনস এজেন্সি ডায়াবেটিসের এ ওষুধটির ব্যাপারে একই ধরনের তদন্ত শুরু করেছে। এনডিএমএ নামের রাসায়নিক এ উপাদান মানুষের দেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা রাসায়নিক এ উপাদান দফায় দফায় বিভিন্ন শ্রেণির প্রাণীর ওপর প্রয়োগের পর এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

কীটনাশক, ক্লোরিন ও শিল্প প্রক্রিয়া থেকে প্রাপ্ত একটি রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে এনডিএমএ। পানি, মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, শাক-সবজিসহ আরও বিভিন্ন ধরনের খাবারে স্বল্প মাত্রায় এনডিএমএ উপস্থিতি থাকে। তবে স্বল্পমাত্রার এনডিএমএ মানুষের শরীরে বড় ধরনের কোনো সমস্যা তৈরি করে না। গত সেপ্টেম্বরে গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় বহুল সেবনকৃত জ্যানট্যাক ট্যাবলেটে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী এ এনডিএমএর উপস্থিতির জেরে বিশ্ববাজার থেকে ওষুধটি তুলে নেওয়া হয়। সেই সময় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা জ্যানট্যাক ট্যাবলেটে ক্যান্সারের উপাদানের উপস্থিতির বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর বিশ্বের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ সংস্থা গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন (জিএসকে) ওষুধটি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়।

একই আশঙ্কায় বাংলাদেশেও একই গ্রুপের রেনিটিডিন উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। ডায়াবেটিসের রোগীদের স্বাভাবিক অন্যান্য ওষুধ সেবন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুরের বাজারে মেটফরমিন গ্রুপের ৪৬ ধরনের ওষুধের মধ্যে তিনটিতে বিপদজনক মাত্রায় এনডিএমএ পাওয়া যায়।

এরপর এই ওষুধটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ দেয় সিঙ্গাপুর। ব্রিটেনের বাজারে মেটফরমিনে স্বাভাবিক মাত্রার এনডিএমএর উপস্থিতি রয়েছে জানিয়ে যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) বলছে, এতে কোনো ঝুঁকি নেই। নিত্যদিনের খাদ্য এবং পানীয় থেকে যে পরিমাণ এনডিএমএ মানুষ পায়; তার চেয়েও কম মাত্রায় রয়েছে মেটফরমিনে। ডায়াবেটিসের রোগীদের আগের মতোই স্বাভাবিকভাবে ওষুধটি সেবনের পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্যের এ ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

ইউরোপ এবং ইউরোপের বাইরের বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফরমিন পাওয়া যায়। এ কারণে এই ওষুধটির ব্যাপারে নতুন করে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা; তা ঠিক করতে যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ), ইউরোপীয় মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) এবং অন্যান্য ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নিবিড়ভাবে কাজ করছে।

এমএইচআরএ বলছে, মেটফরমিনের ব্যাপারে তদন্তে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগীদের জানিয়ে দেওয়া হবে। যুক্তরাজ্যের বাজারে বহুল বিক্রীত ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফরমিন। শুধু ২০১৮ সালে দেশটির চিকিৎসকরা ডায়াবেটিসের রোগীদের ওষুধটি সেবনের জন্য প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন অন্তত ২ কোটি ২২ লাখ বার। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১০৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নির্বাচিত একটি ওষুধ মেটফরমিন। এটি ইনসুলিন ব্যবহার করে রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় নামিয়ে আনতে সহায়তা করে। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, শুধু যুক্তরাজ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীদের ৮৪ শতাংশকে এই ওষুধটি সেবনের নির্দেশ দেন চিকিৎসকরা।

সিঙ্গাপুরের দৈনিক দ্য স্ট্রেইট টাইমস বলছে, দেশটির বাজার থেকে গ্লুসিয়েন্ট এক্সআর (৫০০ এমজি) ও মিজুমেট (৭৫০ ও ১০০০ এমজি) প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ), কানাডার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ওষুধটিতে এনডিএমএর উপস্থিতি এবং ঝুঁকি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তবে ওষুধটি এখনই বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। সূত্র : ডেইলি মেইল।

 

 

 
Electronic Paper