পাঠকের কলাম
কোন পথে বাংলাদেশ রেলওয়ে
মো. হৃদয় হোসেন
🕐 ৮:৪৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
স্থলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে উত্তম ও আরামদায়ক মাধ্যম হয়ে আমাদের সবার মনে জায়গা নিয়ে আছে রেলগাড়ি বা ট্রেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে হচ্ছে সরকারি রেল সংস্থা। ১৯৯০ সালে এই সংস্থা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিজের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। আসা যাক বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিনিয়োগ ও তা থেকে লাভ-লোকসানের খতিয়ানে। এখানে লাভ শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে নিতান্তই বাক্যের সৌন্দর্যবর্ধনে; তা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর জন্য ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চিত্র দেখলেই যথেষ্ট। যেখানে বিনিয়োগ হয়েছে কোটি কোটি টাকা কিন্তু তাতেও আসেনি নতুন গতি।
২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত রেলে আয় হয়েছে ৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যার পরিচালন ব্যয় ছিল ১৭ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা অর্থাৎ লোকসান ৯ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। যেখানে বিনিয়োগ ছিল ৫০ হাজার কোটি টাকা। অথচ এর মধ্যে রেলের ভাড়া বেড়েছে দুই বার। ২০১২ সালে একবার ও ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরও একবার, যেখানে ৭ থেকে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের র্যাংকিংয়ে ২০১১-১২ সালে বাংলাদেশের রেল অবকাঠামোর অবস্থান ছিল ১৪২টি দেশের মধ্যে ৭৩তম। যা ২০১৭-১৮ সালে হয়েছিল ১৪০টি দেশের মধ্যে ৬০তম।
এ সময় রেলের সার্বিক স্কোর ২ দশমিক ৫ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৯৪ হয়েছিল। অর্থাৎ অবকাঠামো উন্নয়নের র্যাংকিং বৃদ্ধি যেমন পেয়েছে তেমনি লোকসানের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। এত বিনিয়োগ তবুও লোকসান কেন?
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেলের এই করুণ দশার জন্য দায়ী অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতি। বলা যায় যে, দুর্নীতিতে তলিয়ে থাকা দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যে রেলওয়ের অবস্থান উচ্চতম। যেখানে রেল উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা বাজেট করেও ঠিক হয় না সিগন্যাল বাতি।
বাজেটকৃত অর্থ সম্পূর্ণ উত্তোলন করেও রেললাইনের দুপাশে কাঁটাতারের বেড়া পুরোটা করা হয়নি, করা হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। যেখানে ব্যালাস্ট পাথর বরাদ্দের দেড় লাখ ঘন ফুট কম কিনেও খরচ ৫৩ কোটি টাকা বেশি হয়, স্ট্যাটিক সুইচ, মাটি ভরাটের মতো প্রকল্পেও পুরো কাজ সম্পূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও খরচের অঙ্ক হয় বেশি। অনিয়মটাও এখানে হয় রোজ রোজ আর তাই এখান থেকে লাভ আশা করাটাও এক প্রকার দোষ। নিয়ম না মেনে এখানে দেখানো হয় বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে বেশি দামে পাথর ক্রয়ের চিত্র।
রেলে নিয়োজিত পুলিশ ও টিটি যখন বলেন, টিকিট কেটে ভাড়া বেশি দিয়ে যাবেন নাকি টিকিট না কেটে ভাড়া কম দিয়ে যাবেন? তখন অনিয়মের অবস্থান যে কোথায় পৌঁছাতে পারে সেটা বোধ করি বোঝার বাকি থাকে না। জাতি হিসেবে এই ধাঁচের কথা বলা তো দূরের কথা, শোনাও লজ্জার ব্যাপার। তাহলে ব্যবস্থাপনাটা কোথায়? অব্যবস্থাপনায় ডুবে আছে কি সব? সব কি গাফিলতিতে পরিপূর্ণ?
রেলওয়ে থেকে এই অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতি নামক অভিশাপ দূর করে সঠিক ব্যবস্থাপনা, যথার্থ পরিদর্শন ও সরকার কর্তৃক ঘোষিত বাজেটের সঠিক মূল্যায়ন ও প্রকল্পের পুরোটা বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকসানের এই ধারাকে পাল্টে দেওয়া সম্ভব।
মো. হৃদয় হোসেন : শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া