ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ইতিহাস গড়ার আসর

ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ১২:৩৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯

মাস শুরুর দিন পর্দা উঠেছিল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞের। কাল পর্দা নামল এসএ গেমসের ত্রায়োদশ আসরের। মাঝের এই সময়টায় বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মুখরিত ছিল নেপালের দুই শহর কাঠমান্ডু ও পোখরা। ৭টি দেশের ৬টি দলই পেয়েছে স্বর্ণপদকের স্বাদ। পারেনি শুধু ভুটান। কুড়িটি পদক জিতলেও কোনো ইভেন্টেই শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারেনি ভুটানিজরা।

এদিক থেকে মালদ্বীপ নিজেদের কিছুটা ভাগ্যবান ভাবতে পারে। অন্তত একটি স্বর্ণপদক হলেও দেশে নিয়ে যেতে পারলেন তাদের ক্রীড়াবিদরা। সদ্য সমাপ্ত আসরে তাদের সাফল্য বলতে পাঁচটি পদক। পদক জয়ের লড়াইয়ে এই দুই দেশের ওপরে অবস্থান করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সংখ্যার হিসেবে ভুটান ও মালদ্বীপের সঙ্গে যোজন-যোজন দূরত্ব লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।

১৯৮৪ সালে প্রথমবার এসএ গেমসের আয়োজন করেছিল নেপাল। পরেরবার গেমসের মঞ্চ বসাতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দেড় দশক। এবার দুই দশক পর এসএ গেমসের স্বাগতিক হয়েছে নেপাল। তবে এবারের আসরটাই বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকতে তাদের কাছে। প্রতিযোগিতায় ৫১টি স্বর্ণ ও সবমিলিয়ে ২০৬টি পদক জিতে রানার্সআপ হয়েছে নেপাল। ১৭৪টি স্বর্ণ ও সর্বমোট ৩১২টি পদক জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। তাদের পেছনে থেকে আসর শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। লঙ্কানরা ৪০টি এবং পাকিস্তান পেয়েছে ৩১টি সোনা। পদক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচে।

সার্বিকভাবে হিসেবে করলে সাফল্যটা অনেক বড় নয়। তবে নিজেদের ইতিহাসে এটাই লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের স্বপ্নের আসর। নেপালের ক্রীড়াযজ্ঞে ১৯টি স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে পদক ১৩৮টি। পদক সংখ্যায় অবশ্য এটা পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের চেয়ে ৭টি পদক কম পেয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশ ৩২টি রুপার সঙ্গে পেয়েছে ৮৭টি ব্রোঞ্জ। পাকিস্তানের ঘরে গেছে ৪১টি রুপা ও ৫৯টি ব্রোঞ্জ পদক। সদ্য সমাপ্ত আসরে সর্বমোট ২৭১৫ জন ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছে। যা গেমসে অংশ নেওয়া ক্রীড়াবিদদের নতুন রেকর্ড। স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ইভেন্টেও।

বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে মোট ৩০৮টি স্বর্ণের জন্য লড়াই করেছেন ২৬ খেলার আড়াই হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদরা। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই অংশ নিয়েছেন ৪৭০ খেলোয়াড়। অংশ নেওয়াদের তালিকায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা চতুর্থ। বাংলাদেশের ওপরে আছে যথাক্রমে নেপাল (৫৯৬), শ্রীলঙ্কা (৫৬৪) ও ভারত (৪৮৭)। এ ছাড়া পাকিস্তান থেকে ২৬৩, মালদ্বীপ থেকে ২১৬ এবং ভুটান থেকে অংশ নিয়েছে ১১৬ জন।

১১ দিন ব্যাপী এই আসরে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে নিজেদের। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ৭টি স্বর্ণ জিতেছিল ১৯৯৫ সালে মাদ্রাজ আসরে। আর নিজেদের আঙিনায় ২০১০ সালে এসএ গেমসে সর্বোচ্চ ১৮টি স্বর্ণপদক ঝুলেছিল বাংলাদেশের গলায়। ইতিহাস গড়ত সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা রেখেছেন দেশের তিরন্দাজরা। বিস্ময়কর হলেও আচারির দশ ইভেন্টের সবকটিতেই সোনা জিতেছেন রোমানরা। ক্রিকেটের দুই ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন সৌম্য-সালমারা। প্রত্যাশিত পদক এসেছে ভারোত্তলন, কারাতে, অ্যাথলেটিক্স, ফেন্সি থেকেও। তবে হতাশ করেছে ফুটবলার, শ্যুটার ও সাঁতারুরা। আসরের দ্বিতীয় দিন দিপু চাকমার হাত ধরে তায়কোয়ান্দো থেকে প্রথম পদক পেয়েছিল বাংলাদেশ। শেষটা হয়েছে সৌম্যদের দিয়ে। কয়েকটা দিন হতাশা কাটলেও অষ্টম দিনে এসে তা পুষিয়ে দিয়েছে আর্চারি ফেডারেশন। এদিন সর্বোচ্চ ৮টি সোনা উপহার দিয়েছেন ক্রীড়াবিদরা। যাদের নেতৃত্বে ছিলেন তিরন্দাজরা।

কাল ইতিহাসের সেরা সাফল্য নিয়ে গেমসের মার্চ পাস্টে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এদিন দশরথ স্টেডিয়ামে লাল-সবুজ পতাকা ছিল গত আসরের স্বর্ণকন্যা সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলা। তাতে কিছুটা হলেও দুঃখ কমল তার। উদ্বোধনী দিনেই তো মার্চ পাস্টে পতাকা তার হাতে ওঠার কথা ছিল। তা হয়নি। শীলাকে সম্মান জানাতেই কাল প্রথা ভেঙেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন। গেমসে অংশ না নেওয়া সত্ত্বেও তার হাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের দেশের পতাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।

 
Electronic Paper