অনুসন্ধান
আবুল কালাম আজাদ
🕐 ৬:০৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯
পুরো এলাকা পুরুষশূন্য। যুবতী ও বয়সী সরে গেছে নিরাপদ স্থানে। এলাকার শান্তি কমিটির প্রধান মিনহাজ মুন্সী পড়েছে মহাবিপদে। মুক্তিযোদ্ধারা দিনকে দিন শক্তি বৃদ্ধি করছে। আঁতকা আঁতকা হামলা চালিয়ে আর্মিদের নাজেহাল করে তুলছে। আবার আর্মিদের ফূর্তি করার জন্য কোনো যুবতী মেয়ের জোগানও দিতে পারছে না। আর্মিরা মিনহাজ মুন্সিকে গাদ্দার ভাবতে শুরু করেছে।
মিনহাজ মুন্সির বাড়ি থেকে বেশ একটু দূরে সরাফত হোসেনের বাড়ি। তার এক ছেলে দুই মেয়ে। মেয়ে দুটি কলেজে পড়ে। ওরকম রূপবতী মেয়ে এ এলাকায় আর নেই। ছেলেটা পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাপ-ছেলের টিকির নাগাল পাওয়ার আগেই তারা যুদ্ধে চলে গেছে। মেয়ে দুটিকে কোথায় পাঠিয়েছে তার হদিস মিলছে না। মিনহাজ মুন্সি মেয়ে দুটির খোঁজে প্রতিদিনই সরাফত হোসেনের বাড়িতে ঢুঁ মারে। কিন্তু মেয়ে দুটিকে দেখা পায় না। দেখে শুধু সরাফত হোসেনের বৃদ্ধা মাকে।
ছুটতে ছুটতে ভুল করে ঢুকে পড়ে সরাফত হোসেনের গোয়াল ঘরে। পাগলা ষাঁড়টা মারে এক গুঁতা। গুঁতায় রক্ষা পেলেও চোখা শিঙে তার লুঙ্গি যায় ফেঁড়ে। কোনো মতে লুঙ্গি ধরে বাইরে এসে রাস্তা দিয়ে ছুটতে থাকে।
সামনে পড়ে তার দুই রাজাকার সাগরেদ। লিডারকে এভাবে ছুটতে দেখে তারা জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে? সমস্যা কী?
মিনহাজ মুন্সির কথা বলার ক্ষমতা নেই। আগে চোখে পানি দিতে হবে। সে তার মতো ছুটতে থাকে।
সাগরেদ দুজন ভাবে, হয়তো মুক্তিবাহিনী তাড়া করেছে। তারাও প্রাণপণ দৌড় দেয়। এক ঝোপের কাছে এসে পেছনের সাগরেদ হোঁচট খেয়ে গিয়ে পড়ে সামনের জনের ওপরে। দুজন গড়াতে গড়াতে চলে যায় ঝোপের নিচে ডোবায়। ঝোপের পাশে মার্বেল খেলছিল তিন কিশোর। তারা চিনতে পারে, এই দুজন রাজাকার। ওরা ছুটে গিয়ে ওদের রাইফেল কেড়ে নিয়ে আচ্ছামতো পিটুনি দেয়। তারপর রাইফেল ফেলে দেয় ডোবার ভেতর। স্লোগান দিয়ে ওঠে- জয় বাংলা।
এদিকে মিনহাজ মুন্সি ছুটতে ছুটতে কোনোমতে তাকিয়ে দেখে সামনে একটা ছোট পুকুর। সে চোখে পানি দিতে পুকুরে নামে। নামতে গিয়ে পা ফসকে চলে যায় গলা পানিতে। পুকুর ছিল কৈ আর শিং মাছে ভর্তি। একটা শিং মাছ মিনহাজ মুন্সির লুঙ্গির ভেতর ঢুকে যায়। তার বিশেষ অঙ্গে প্রচণ্ড এক কাঁটা ফুটিয়ে দেয়। সে কী ব্যথা! এ যে চোখের মরিচের চেয়েও বেশি।
অঙ্গ চেপে ধরে মিনহাজ মুন্সি বাড়ি ফেরে। বউকে বলে, চুলা জ্বালাও, আগুনের ছ্যাঁকা দিতে হবে।
বউ বলে, তোমার ঐখানে আবার কী হইল?
: ঝামেলাটা বাঁধাইছে সরাফত হোসেনের মা বুড়িটা।
: তুমি প্রতিদিন সরাফত হোসেনের মেয়েদের খোঁজে সেই বাড়িতে যাও। মেয়েদের না পেয়ে শেষে বুড়ির কাছেই গেছিলা! এত জঘন্য তুমি! আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।
: আসল কথা শোনো...।
: কোনো শোনাশুনির ধার ধারি না।
বউ রান্নাঘর থেকে চেলাকাঠ এনে মিনহাজ মুন্সির পিঠে ঠাস ঠাস কয়েকটা বাড়ি বসিয়ে দেয়। এদিকে নিচে ভীষণ জ্বলা। অঙ্গটা ফুলে সাগর কলার থোড় হয়ে গেছে। চেলাকাঠের বাড়িতে পিঠ জ্বলতে শুরু করে। চোখের জ্বলাটা একটু কমলেও এখনও আছে।
মিনহাজ মুন্সি যখন নানাবিধ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, তখন খবর আসে মেজর মখদুম তাকে ডাকছে। মিনহাজ মুন্সির বউ বলে- যাও, তোমার বাপ ডাকতেছে। মেজর মখদুম বলে, কী ব্যাপার মুন্সি, একটা লাড়কিও এর মধ্যে আনতে পারলা না। আমি নিরস দিন যাপন করতেছি। এদিকে মুক্তিরা আঁতকা আঁতকা অ্যাকশন চালাচ্ছে।
আমার মনে হচ্ছে, তুমি আমার সঙ্গে গাদ্দারি করতেছ। কালকের মধ্যে যদি কোনো লাড়কি না এনে দিতে পারো, তোমাকে গুলি করে মারব। শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে শুরু হয় দুশ্চিন্তা। লাড়কি কোথায় পাবে? গ্রামে তো কোনো মেয়ের ছায়াও দেখা যায় না।
রাতে শুয়ে ঘুম আসে না। চিন্তায় মিনহাজ মুন্সি দিশাহারা। কাল লাড়কি না দিতে পারলে গুলি খেয়ে মরতে হবে। শেষমেশ একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, যদি কোনো লাড়কির ব্যবস্থা করতে না-ই পারে তো নিজের বউটাকে নিয়ে দেবে। বউ তার যথেষ্ট সুন্দরী। মেজর সাবের পছন্দ হবে। তবু তো জানটা বাঁচুক।
আগে নিজের জান, তারপর পেয়ারের পাকিস্তান, তারপর বউ। ঘুমের মধ্যে মিনহাজ মুন্সি বলতে লাগল, লাড়কি কোথায় পাই। লাড়কি কোথায় পাই। লাড়কি কোথায় পাই। এরকম কথায় মিনহাজ মুন্সির বউয়ের ঘুম ভেঙে গেল। সে উঠে বসল। মিনহাজ মুন্সির মুখে তাকিয়ে রইল। মিনহাজ মুন্সি বলেই চলেছে, লাড়কি কোথায় পাই, লাড়কি কোথায় পাই।
: তোর লাড়কি পাওয়া ছুটাচ্ছি- বলে বউ ধুম করে মিনহাজ মুন্সির পিঠে এক লাথি লাগায়। মিনহাজ মুন্সি খাট থেকে পড়ে অক্কা পায়।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228