ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চোরের হাতে কয়েকটি পেঁয়াজ

মুহা. তাজুল ইসলাম
🕐 ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯

তার নাম মোখলেস। নবাবপুর গ্রামের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি। গ্রামের বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত এমন কেউ নেই যে তাকে চেনে না। না চিনে যাবেই বা কোথায়, দুই-চার-দশ গ্রামের এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে তার পদধ্বনি পড়েনি। তার যে মানুষের বাড়িতে অবাধ এই যাতায়াত, সেটা অবশ্য ভালো কোনো কাজের জন্য নয়, চুরির জন্য। চুরি বিদ্যায় তিনি হলেন চোর সমাজে অনুকরণীয় ব্যক্তি। এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূর ইসলামের পেঁয়াজের আড়তে গভীর রাতে চুরি করতে গিয়ে মোখলেসের আজ বিচার হচ্ছে।

চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন আগুন চোখে মোখলেসের দিকে তাকিয়ে আছেন।

চেয়ারম্যান : এই নিয়ে টানা তিনদিন পেঁয়াজের গুদামে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লি। এই বছরে সব মিলিয়ে পঞ্চাশ বার তোকে নিয়ে বিচার হয়েছে। আগের দুইদিন কিছু না বলে ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু আজকে তোকে আর ছাড় দেওয়া হবে না।

মোখলেস : চেয়ারম্যান সাহেব, কথাটা ঠিক না। এই বছরে মোটেই আমাকে নিয়ে পঞ্চাশবার বিচার হয়নি। সব মিলিয়ে এই বছরে আমায় নিয়ে বিচার হয়েছে বিয়াল্লিশবার। জীবদ্দশায় সব মিলিয়ে তিন শত সাতাশবার। যদি একবারও আমাকে আপনারা চোর প্রমাণ করতে পারেননি। বিশ্বাস করেন, আমি পেঁয়াজের গুদামে মোটেই চুরি করতে ঢুকিনি।

চেয়ারম্যান : তাহলে বারবার গভীর রাতে পেঁয়াজের আড়তে কেন ঢুকিস?
মোখলেস : আসলে প্রথম রাতে গাঁজা খেয়ে ভুল করে পেঁয়াজের গুদামকে নিজের বাড়ি মনে করে ঢুকে পড়েছিলাম। হুঁশ ছিল না।

চেয়ারম্যান : আচ্ছা মানলাম। তাহলে, দ্বিতীয় রাতেও কি গাঁজা খেয়ে নিজের বাড়ি মনে করে পেঁয়াজের আড়তে ঢুকেছিলি?
মোখলেস : মোটেই না। আসলে পেঁয়াজের আড়ত থেকে ফিরে আসার পর যখন আমার হুঁশ এলো, তখন মনে পড়ল, গাঁজার পোটলা তো দুইটা ছিল! একটা তো খেয়েছি, আরেকটা গেল কোথায়? অবশেষে পোটলাটা কোথাও না পেয়ে তাই পেঁয়াজের আড়তে খুঁজতে গেলাম আর তখনই না আমাকে আপনারা ধরলেন।

চেয়ারম্যান : আচ্ছা। মানলাম তোর কথা। তাহলে এরপর আবার কেন পেঁয়াজের আড়তে ঢুকলি! গাঁজার পোটলা খুঁজতে?
মোখলেস : মোটেই না। গাঁজা খেলে রাজা হয়, তাই গাঁজা খেতাম। এখন দেখি পেঁয়াজ খেলে বাদশা হয়। তাই গাঁজা খাওয়া ছেড়ে পেঁয়াজ খাওয়া শুরু করেছি।
সোমবার রাতে পঞ্চাশ গ্রাম পেঁয়াজ কিনতে আড়তে এসেছিলাম আর আপনারা আমাকে ধরে এখন বিচার শুরু করেছেন।

তিনবার জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত মোতাহার হোসেন গ্রামবাসীর একদফা এক দাবি মেনে নিয়ে পেঁয়াজ চোর মোখলেসকে পুলিশে ধরিয়ে দিলেন। মোখলেসের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৮০ ধারায় পেঁয়াজ রিকভারি দিয়ে মামলা হলো। জাতীয় পত্রিকার প্রথম পাতায় মোখলেসের পেঁয়াজসহ ছবি উঠল।
তিন মাস পর।

মোখলেস ছাড়া পেয়ে জেল গেটে আসতেই তার দেখা হয়ে গেল চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন এবং পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নূর ইসলামের সঙ্গে। তারা অবশ্য মোখলেসকে বরণ করতে আসেননি; চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন এসেছেন স্বল্পমূল্যের পেঁয়াজের ডিলারশিপ পেয়ে সেগুলো আমজনতার কাছে পৌঁছে না দিয়ে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নূর ইসলামের কাছে গোপনে বিক্রি করতে।

মোখলেস তাদের বিষণ্ন মুখপানে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘হায়রে পেঁয়াজ! গাঁজার সঙ্গে তোর বড্ড মিল। দুইটাই দুর্গন্ধ ছড়ায়; কখনো বাতাসে আর কখনো বা চরিত্রে!’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper