ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্যারার কেজি ২৮০ টাকা

রাইয়ান পুণ্য
🕐 ৯:০০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯

প্যারা শব্দটি অতি পরিচিত। বিভিন্ন সময়েই আমরা বলে থাকি, এত প্যারা আর সহ্য করা যায় না। প্যারা দিস না রে ভাই। তুমি এতো প্যারা দাও কেন। আসলেই একটা প্যারা। খুব বেশি প্যারায় ছিলাম। খালি প্যারা, সব কিছুতেই প্যারা।

কষ্টে থাকার পর যখন খুব অসহ্য হয়, বিরক্তিতে তখন আমরা প্যারা কথাটা বেশি ব্যবহার করি। সময়, অবস্থা ও ব্যক্তি ভেদে এর বাক্যগত প্রয়োগ একেক রকম। কিন্তু ব্যবহার হয় একই অর্থে। মুলত কষ্ট, যন্ত্রণা ও উৎপাত বোঝাতে।

কথায় কথায় নেতিবাচক অর্থে প্যারা ব্যবহার করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেখা গেছে প্যারার খুব কদর। টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয় প্যারা। প্রতি কেজি প্যারার দাম ২৮০ টাকা। খুচরাও বিক্রি হয়, প্রতিটি প্যারা ১০ টাকা।

এটি এক ধরনের মিষ্টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেশ জনপ্রিয় মিষ্টি। দেখতে অনেকটা গাছের পাতার মতো। এই এলাকায় প্যারার আরেক নাম ‘দম মিশ্রি’। এটি কোথাও কোথাও হয় প্যারা সন্দেশ নামে পরিচিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেশির ভাগ মিষ্টির দোকানেই প্যারা দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা পার্শ্ববর্তী জেলা নওগাঁ এলাকাতেই নয়; রাজশাহী বিভাগের প্রায় সব জেলাতেই প্যারা পাওয়া যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শান্তির মোড়ে ওসমান হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী মো. ওসমান বলেন, এই মিষ্টি দুধের মেওয়া (দুধের সর ঘন করে হয় মেওয়া) ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। পাতার মতো এই নকশা কীভাবে করা হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার জন্য ছাঁচ (ডাইস) পাওয়া যায়। সেই ছাঁচে দিলেই এই পাতার নকশা হয়ে যায়। শুধু পাতা নয়, বিভিন্ন ধরনের নকশার প্যারা করা যায়। এলাকা ও দোকান ভেদে বিভিন্ন নকশার প্যারা আছে।

তিনি জানান, তাদের নিজেদের তৈরি আকৃতির প্রায় ২৮টি প্যারায় এক কেজি হয়। এটা একটু বড় সাইজের। প্রতি কেজির দাম ২৮০ টাকা। সে হিসেবে মিষ্টির দোকানে বসে যদি কেউ খেতে চান, সেক্ষেত্রে প্রতিটির দাম রাখা হয় ১০ টাকা। যদি একটু আকারে ছোট হয় তখন কেজিতে প্যারার সংখ্যা বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে শ’ হিসেবে খুচরা বিক্রি করা হয়। অতিথি আপ্যায়নে প্যারার চাহিদা রয়েছে। আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে অনেকে প্যারা নিয়ে যান।

এটা বিশেষ ধরনের শুকনো মিষ্টি। একটু শক্তও। যে কারণে দম মিশ্রিও বলা হয় বলে জানান মো. ওসমান। তিনি বলেন, এই মিষ্টি সহজে নষ্ট হয় না। দূরে কোথাও নিয়ে যেতে চাইলে নিশ্চিন্তে নিয়ে যাওয়া যায়। ফ্রিজে না রেখেও অনেক দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়।

ওই দোকানে বসে একজনকে প্যারা মিষ্টি খেতে দেখা যায়। তিনি বলেন, এটা আমি প্রায়ই খাই। খুব ভালো লাগে আমার।

মিষ্টিপ্রেমীদের অনেকের মতে, দেশের কোনো কোনো জেলায় এটাকে বলা হয় প্যারা সন্দেশ।

এ ব্যাপারে ক্যান্সার হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মো. মাহমুদুল হক বলেন, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীতে এটিকে প্যারা সন্দেশ বলা হয়। এই মিষ্টি আমারও বেশ পছন্দের।

ক্যান্সার হাসপাতালের আরেক ফার্মাসিস্ট মো. দিদারুল আলম বলেন, সাধারণত যে এলাকায় দুধের উৎপাদন বেশি সেই এলাকায় প্যারা সন্দেশ বেশি দেখা যায়। কারণ, এটার মূল উপাদানই হচ্ছে দুধ, সাথে চিনি। খেতে দারুণ।

তার কথার সত্যতা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় ঘরে ঘরে গরু-ছাগল পালন করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, আমরা তিনটি গ্রামে জরিপ করেছি। সে হিসেবে এ জেলায় গরু আছে ১২ লাখের মতো এবং ছাগল-ভেড়া আছে ১২ লাখের বেশি। সে হিসেবে দুধের উৎপাদনও ভালো।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আরেক মিষ্টির দোকানের স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার বলেন, এখানে প্যারার বেশ কদর। এই এলাকায় ঘুরতে আসা অনেকেই ফিরে যাওয়ার সময় প্যারা কিনে নিয়ে ফেরেন।

 
Electronic Paper