কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
শফিক হাসান
🕐 ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯
কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক- জল্পনা-কল্পনায় মেতে আছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে রাজনীতি-অনুসন্ধিৎসুরা। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতাসীন। বাস্তবিক কারণেই দলটির সাধারণ সম্পাদককে বিবেচনা করা হয় ‘সবচেয়ে ক্ষমতাধর’ হিসেবে। দলীয় সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেও ছোট-বড় সব কিছুরই নিয়ন্ত্রক সাধারণ সম্পাদক। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিংবা সুদৃষ্টি-বক্রদৃষ্টিকে কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদেরও আমলে না নিয়ে উপায় নেই।
দলে সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন- এ বিষয়ে সরাসরি উত্তর না মিললেও সম্প্রতি বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। অন্য যে কোনো পদে পরিবর্তন আসতে পারে। এমন বক্তব্যের মাধ্যমে কাদের পরিবর্তনের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিলেন কি না তা নিয়ে নানামুখী মত প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলছে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক। তবে সব প্রশ্নের জবাব মিলবে আগামী ২০ ও ২১ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের সম্মেলনে।
সম্মেলনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই সারা দেশে শুরু হয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। দেখা যাচ্ছে গ্রুপিং, লবিং ও পদ-পদায়ন আকাঙ্ক্ষা আকাক্সক্ষার গোপন তৎপরতা। সাধারণ সম্পাদকের মোহনীয় পরিচয়-পদের হাতছানিতে বুঁদ হয়ে আছেন কেউ কেউ।
ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠরা ধারণা করছেন, তিনিই পুনরায় দায়িত্ব পেতে পারেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের যে ভূমিকা তাতে দলের ভেতরে-বাইরে অনেকেই সন্তুষ্ট। বর্তমানে তিনি ঢাকা এবং বিভিন্ন জেলার সম্মেলনে যোগ দিয়ে নেতৃত্বকে মূলধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুর্বৃত্ত ও অসৎ শ্রেণির নেতাদের চিহ্নিত করে বাদ দেওয়ার বিষয়েও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন একের পর এক।
অন্যদিকে আরেকটি পক্ষ বলছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই কাদেরের ‘কাজের বোঝা’ কমাতে পারেন শেখ হাসিনা। তিনি শুধু সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী হিসেবেই দায়িত্ব পালন করলে এ খাতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে আরও মনোযোগী হতে পারবেন। সড়কের বিশৃঙ্খলা দূর করতে, পরিবহন মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে আনতে এ খাতে মনোযোগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে কাদের যে দায়িত্বই পালন করেন না কেন, প্রভাবশালী নেতা হিসেবেই থাকার সম্ভাবনাকে বিবেচনায় রাখছেন বিশ্লেষকরা।
কিছুদিন পরেই পালিত হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ। এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে নানা রকম পরিকল্পনা। সাধারণ সম্পাদক যিনিই হন, তিনি জাতির গৌরবোজ্জ্বল এ ইতিহাসের অংশীদার হবেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু বাংলাদেশের অভ্যুদয় সব কিছুই প্রাধান্য পাবে জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে। সেখানে থাকছে সাধারণ সম্পাদকের জন্য ‘পরীক্ষা’।
আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা ওবায়দুল কাদেরের বাইরেও গুঞ্জরিত হচ্ছে আরও কয়েকজনের নাম। সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ড. আবদুর রাজ্জাক, মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখের নাম। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নামই এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে। মাহবুবউল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক দলের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত নেতা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এরা আগেও অন্যান্য পদপ্রত্যাশী হলেও পাননি কাঙ্ক্ষিত মর্যাদা; অতীতের না পাওয়া পুষিয়ে দিতে এ দুজনের যে কোনো একজন স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তুলনামূলক নবীন হলেও দলের প্রতি তার নিবেদন এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণে অনেকেই ধারণা করছেন তিনিও পদটির যোগ্য দাবিদার।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চমক দিতে ভালোবাসেন। সদ্য সমাপ্ত যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মতো ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা পরিবর্তনে চমক দিয়েছেন তিনি। দলের ত্যাগী নেতাদের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত নতুন মুখ স্থান পেয়েছে বিগত সম্মেলনগুলোতে। একই পন্থায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে সেটা হবে বড় চমক!
গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে অনেক উত্থান-পতন ঘটে গেছে। দলের দুর্নীতিগ্রস্ত বাঘা বাঘা নেতা এক ধরনের আতঙ্কে রয়েছেন। জেল খাটছেন এমন কয়েকজন নেতা, যাদের এক সময় আওয়ামী লীগে ‘অপরিহার্য’ মনে করা হতো। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাস্তানির সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এখনো, এদের অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশে পালানোর পাঁয়তারা করলেও পারছেন না সরকারের কড়া নজরদারির কারণে। শুদ্ধি অভিযানের আলোকেই সম্পন্ন হয়েছে সদ্য সমাপ্ত সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন; আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনেও এ নীতিই স্থান পাবে।
অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের দু-একজন সদস্যও স্থান পেতে পারেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। আলোচিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার নাম। অন্যদিকে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির এক-তৃতীয়াংশ বাদ পড়তে পারেন। সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় সদস্য পদে হতে পারে রদবদল। ২০১৬ সালের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। এর আগে এ পদে ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতদের নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের বন্ধু সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আবদুল জলিল, আবদুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো প্রয়াত নেতার পরিবারের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন নতুন কমিটিতে- এমন আলোচনাও আছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এটা কারোরই অবিদিত নয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কুশলী নেতৃত্বের পর বর্তমানের আওয়ামী লীগ চলছে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ম্যাজিকে। তার নখদর্পণে রয়েছে দলের নাড়িনক্ষত্র। পাশাপাশি দেশেরও ভালোমন্দ অধিকাংশ বিষয়ে ওয়াকিবহাল তিনি। কৌশলগত কারণে কখনো কখনো নীরবতা অবলম্বন করতে হলেও সঠিক সময়ে মোক্ষম জবাবটি দিতে ভোলেন না রাজনীতির মাঠের দক্ষ প্রশিক্ষক শেখ হাসিনা। যার সর্বশেষ নজির চলমান শুদ্ধি অভিযান।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, যোগ্যতম মানুষকে ইতোমধ্যে মনে মনে ঠিক করে রাখার কথা প্রধানমন্ত্রীর। যেহেতু তিনি চমক দিতে পছন্দ করেন, সেই চমকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত!