দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণে অনিয়ম
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
🕐 ৬:২৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯
লালমনিরহাটে সরকারি ‘দুর্যোগ সহনীয় বসতঘর’ নির্মাণে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নগদ টাকা, কাঠ, রড, বাঁশ ও বালু নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। সরকারি ঘর পেতে গুনতে হয়েছে ১৫-৪০ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকদের খাওয়ার দায়িত্বও নিতে হয়েছে এসব সুবিধাভোগী দুস্থদের। এরপরও যে ঘর তৈরি হয়েছে তার মানও ভালো নয়।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় দুস্থ পরিবারের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়। দুস্থ ও অসহায় ভূমিহীন (যার ৫ শতাংশের কম জমি) পরিবারগুলো এ সুবিধা পাবে। এ জন্য প্রতিটি ঘরের জন্য দুস্থ ও ভূমিহীনদের কাছ থেকে ১৫-৪০ হাজার পর্যন্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে তালিকায় স্বজন প্রীতির অভিযোগও করেছেন স্থানীয়রা।
এ প্রকল্পের আওতায় অসহায়, দুস্থ ও ভূমিহীনদের জন্য প্রতিটি ঘরের জন্য বারান্দাসহ দুই কক্ষ ঘর, করিডোর, রান্নাঘর, টয়লেট নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় জনপ্রতি দুই লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা। একজন সুবিধাভোগীকে একটি প্রকল্প ধরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এটি বাস্তবায়ন করছে। তদারকির দায়িত্বে আছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)।
এ প্রকল্পের তালিকা প্রণায়নে আত্মীয়করণ ও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপনের বিরুদ্ধে। তালিকায় আপন চাচা আনোয়ার হোসেন বসুনিয়া ও চাচি আফরোজা বেওয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অথচ চাচির বড় ছেলে একজন প্রকৌশলী। শুধু আত্মীয়করণই নয়, অবৈধ সুযোগও নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বরাদ্দপ্রাপ্তরা।
সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউপির ধনঞ্জয় গ্রামের আনোয়ার হোসেন বসুনিয়ার অভিযোগ, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়ারম্যান তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। অন্যদের কাছ থেকে নিয়েছেন আরও বেশি। এরপর বাড়ির নির্মাণ শুরু হলে কাজের বালু, ভেটু বালু, রড, ছাউনির কাঠ, বাঁশ তাকেই সরবরাহ করতে হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের দুই বেলা খাওয়াতেও হয়েছে।
তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন, কাজ শুরু করেই বালু, রড, কাঠ দাবি করেন চেয়ারম্যান। না দেওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেন। তাই বাধ্য হয়ে দুই এনজিও থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এসব সরবরাহ করেছি।
সুবিধাভোগী আফরোজা বেওয়া বলেন, ‘আমার ছেলে বেসরকারি একটি ফার্মের প্রকৌশলী হলেও ঘরের নাম দিয়েছেন ভাতিজা (ইউপি চেয়ারম্যান) স্বপন। করিডোর ও বারান্দায় ইটের পিলার দিলে ভেঙে পড়ার সম্ভবনা থাকায় বাজার থেকে খুঁটি (সিঁড়ি) কিনে দেওয়া হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপন বলেন, টাকার বিনিময়ে বা আত্মীয়করণে নয়, মানবতার পরিচয় দিতে নামগুলো দেওয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার দায়িত্বে থাকা আদিতমারীর পিআইও মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্র তিনদিন আগে দায়িত্ব পেয়েছি। তাই এ বিষয়ে বলতে পারব না’।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বলেন, ঘর নির্মাণের সব খরচ সরকার বহন করছে। সুবিধাভোগীদের কাছে কোনো কিছু নেওয়া অন্যায়। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।