ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সহজ শর্তে পুনঃতফসিলিকরণ

সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারছে না অনেক ব্যাংক

জাফর আহমদ
🕐 ১১:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯

দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ উঠেছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। খেলাপি ঋণের চাপে ব্যাংকগুলো একদিকে নতুন ঋণ দিতে পারছিল না। অন্যদিকে নানাভাবে চেষ্টা করেও সুদহার কমানো সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে নতুন করে বিনিয়োগেও ভাটা পড়েছিল। এ বন্ধাবস্থা কাটাতে দুই শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সুযোগের সুখবর আনতে পারেনি বেশি কিছু ব্যাংক। সার্বিক ব্যাংক খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বেড়ে গেছে খেলাপি ঋণ।

জুন প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৬২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। একই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তিন মাসের ব্যবধানে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তিন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির এই হার বিতরণ করা ঋণের হারের চেয়ে বেশি। কিন্তু খেলাপি ঋণ কমাতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ এবং বিভিন্ন রকম ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি গ্রাহকরা এগিয়ে না আসার বিষয়টিকে এই উদ্যোগ ও ছাড়ের ব্যর্থ ফলাফল বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। জুন প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল যথাক্রমে ৪ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, ৩ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, ১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক তিনটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা, ৩ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা ও ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ কমাতে খেলাপি গ্রাহকদের দুই শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্টে পুনঃতফসিলি করার প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পুনঃতফসিল করার পর ওই ঋণের সুদহার প্রযোজ্য হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। পাশাপাশি ওই গ্রাহক প্রয়োজন মনে করলে ও শর্ত পালন করে নতুন করে ঋণও নিতে পারবেন। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির পর বড় ধরনের সাড়া মেলেনি।

বিষয়টিকে ব্যর্থ প্রচেষ্টার পুনরাবৃত্তি বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে এগুতে চান তারা এই সুবিধা নিতে আসছেন না। এ সুযোগ নিলে ব্যবসাতে তারা চিহ্নিত হয়ে যাবেন। এর ফলে দুই শতাংশ হারে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা, পুুনঃতফসিল-পরবর্তী ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং নতুন করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও খুব একটা উৎসাহ পাওয়া যাবে না। এ সুযোগ কেউ কেউ নিলেও পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে, সুযোগ নেওয়ার পর আবার খেলাপি হয়ে যাবে। ২০১৪ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার জন্য ঋণ পুনঃগঠনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর এসব গ্রাহক আর ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করেননি। ফলে তারা ঋণ খেলাপি হয়ে যান।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও ব্যাংকিং কার্যক্রমে সব ধরনের প্রভাবমুক্ত না করা হলে কোনো উদ্যোগই কাজে লাগবে না।’

তবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ সফল হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করার পর পরই উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে পুনঃতফসিল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর খেলাপি গ্রাহকরা দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিল করার জন্য আবেদন করতে থাকে। সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে আগামী দুই মাসে ভালো ফল পাওয়া যাবে।’

এদিকে সরেজমিন বেশ কিছু ব্যাংক শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কিছু গ্রাহক আবেদন জমা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এ হার বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপকরা। তবে অনেক গ্রাহক আছেন যারা দেশেই নেই, তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।

 
Electronic Paper