ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

খেলা চলে, চলে না রে...

অয়েজুল হক
🕐 ২:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৯

সতের বছর বয়সী তারিক চৌকস ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ। পড়াশোনা না করার দায়ে প্রায় দিন তাকে মার হজম করতে হয়। সবকিছু হাসি মুখে বরণ করে ফুরসত পেলেই টিভি রুমে ছোটে সে। তার সবচেয়ে বড় সঙ্গী ছোট মামা আনোয়ার হোসেন। চাকরির সুবাদে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা এসেছেন। থাকছেন বোনের বাড়িতে। আনোয়ারের সঙ্গে তারিকের বিরোধ একটাই, খেলা দেখতে দেখতে তিনি ঘুমিয়ে পড়বেন। ঘুমিয়েই ক্ষান্ত হবেন না, হড়বড় করে নাকও ডাকবেন। বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ নিয়ে তারিকের দাপাদাপির পরিমাণ বেড়ে যায়।

ইডেনে ফ্লাড লাইটের আলোয় হবে জমজমাট খেলা। শুধু দিন রাতের টেস্টই না, লাল বল হয়ে যাবে গোলাপি। পেপার, টেলিভিশন থেকে শুরু করে চায়ের স্টল পর্যন্ত মানুষের মুখে মুখে দিন রাতের গোলাপি বলের টেস্ট। পাঁচ দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে আগেই।

খেলার প্রথম দিন দুপুরের খাওয়া শেষ করে আনোয়ার ঘুম ঘুম চোখে টেলিভিশনের সামনে এসে বসেন। গোলাপি বল দেখেই বলেন, ‘ইস বল তো না, একেবারে পাকা টমেটো!’

‘মামা, খেলা দেখতে দাও।’

‘আমি কি তোর চোখ টিপে ধরেছি?’

তারিক কিছু বলতে গিয়েও বলে না। সময় যত গড়ায় তারিকের উজ্জ্বল মুখ ততধিক কালো হয়। শেষমেশ একেবারে ছাইবর্ণ। ফাস্ট বোলারের দুর্দান্ত বলে বাংলাদেশের দুজন প্লেয়ার পরপর আহত হয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই আনোয়ার বলেন, ‘এভাবে চলে না।’

‘কী চলে না!’

‘খেলা।’

‘খেলা তো চলছে।’

‘ধুর এটাকে চলা বলে?’

তারিক কিছুটা রুক্ষ কণ্ঠে বলে, ‘খেলা তো বাস গাড়ির মতো চলবে না। তুমি খেলার কিছু বোঝ না। কাম ব্যাক করবে।’

কাম ব্যাক আর হয় না, পাঁচ দিনের টেস্ট তিন দিনে ফিনিস। আনোয়ারের অবশ্য এ নিয়ে সুখ-দুঃখ নেই। বলেন, ‘একবার ব্যাট করে যা করে দুবার মিলিয়ে তা করতে পারে না। একেবারে পিঁপড়া মারা ফিনিস দিয়ে দিল!’

তারিক মলিন মুখে বলে, ‘দ্বিতীয় টেস্টে দল ঘুরে দাঁড়াবে।’

দ্বিতীয় টেস্টে একই অবস্থা। গোলাপি বল, গোলাপি বলের খেলা নিয়ে খেলার আগে বড় বেশি মাতামাতি। এখন সেই বলের আঘাতে হুড়মুড় করে পড়ে যাচ্ছে। আনোয়ার হোসেন বিদ্রুপ করে বলেন, ‘হ্যাঁ রে দল কোন দিকে ঘুরছে!’

‘আমি তো কম্পাস নিয়ে বসিনি।’ ‘ভেরি গুড কাম ব্যাক। ঘরের ছেলে দ্রুত ঘরে ফিরে আসছে। শোন, খেলা দেখা দরকার খেলা দেখ। মন খারাপ করিস না।’

কথা শেষ করে তিনি চোখ বন্ধ করেন। সামান্য পরেই নাকডাকা। তারপর হুড়মুড় শব্দ। আনোয়ার হুমড়ি খেয়ে টেলিভিশন রাখা ছোট টেবিলের ওপর পড়তেই টেবিলসহ টেলিভিশন পড়ে তার ঘাড়ের ওপর। হতচকিত আনোয়ার তার, টেলিভিশন, টেবিলের ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে বলেন, ‘খেলা চলে?’

তারিক বিদ্রুপ করে বলে, ‘খেলা চলে না রে...।’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper