চলন্ত বাসে চবি ছাত্রীকে যৌন হয়রানি
চট্টগ্রাম ব্যুরো
🕐 ১০:১০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে চলন্ত বাসে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটনায় খালি বাসে হেলপার ও চালকের সঙ্গে জীবনবাজি রেখে লড়ে নিজেকে রক্ষা করেছেন ওই ছাত্রী। নির্যাতিত ছাত্রী চবির মার্কেটিং বিভাগের ছাত্রী। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। পুলিশ এখন পর্যন্ত জড়িতদের কাউকে আটক করতে পারেনি।
জানা যায়, চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকায় আসার পথে সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে ওই ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন। গত বুধবার এ ঘটনা ঘটলেও তার পরদিন বৃহস্পতিবারে নিজের ফেসবুকে ওই ছাত্রী স্ট্যাটাস দেন। এরপর ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার মাধ্যমে জানতে পারে সবাই।
নির্যাতিত ছাত্রী বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে তার ফেসবুকে লেখেন- ‘হ্যাঁ, আর পাঁচটা মেয়ের মতো আজ আমিও মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি! পটিয়া গিয়েছিলাম বোনের বাসায় বেড়াতে... সাধারণত ট্রেনেই আসা-যাওয়া করি আমি; বাসে প্রবলেম থাকার কারণে ওঠাও কম হয়।
দুলাভাইয়ের বাসা মুন্সেফবাজার, গলি থেকে বের হলেই নাকি বাস পাওয়া যায় উনি বলেছিলেন, নতুন ব্রিজ কিংবা টার্মিনালের বাস। বাসা থেকে নেমে রিকশা নিয়ে মেইন রাস্তা অব্ধি এলাম। নেমে দাঁড়াতেই একটা সোহাগ বড় বাস আসছিল। হাত নাড়ালাম। থামল, বাস এ অতটা ভিড় ছিল না বললেই চলে। তবে খালিও কিন্তু ছিল না।
আমি কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করলাম, বহদ্দারহাট যাবে কি না! উনি বললেন, যাবে। জানালার পাশের সিট খুঁজছিলাম, মানুষ কম থাকলেও সবাই মোটামুটি জানালার পাশেই বসে ছিল। অতঃপর সিট না পেয়ে এক আন্টির পাশে গিয়েই বসলাম আমি।
প্রথম থেকে ৩ নম্বর চেয়ারে। বাস চলছে। কন্ডাক্টর ছিলেন দুজন। একজন দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল আরেকজন টাকা তুলছিল। ছিুুক্ষণ পর একজন আসে। বলে, ভাড়া দেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কত?
জিজ্ঞেস করে, কই যাবেন?
আমি বললাম, মামা, আমি ২ নম্বর গেট যাব। কোথায় নামলে সুবিধা হয়?
উনি বললেন, টার্মিনাল।
আমি বললাম, তাহলে টার্মিনালের ভাড়াই নেন।
উনি ৬০ টাকা নিলেন। জিজ্ঞেস করলেন একা কি না। আমি বললাম, জি। ভেবেছিলাম হয়তো ভাড়ার জন্য, বা ভাড়া নেওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করেছে।
এরপর থেকে বারবার তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। আমি অত পাত্তা না দিয়েই আবারো কানে হেডফোন গুঁজে বসে ছিলাম।
আমার পাশের আন্টি নতুন ব্রিজ নেমে যায়। আমি জানালার পাশে গিয়ে বসি। এরপর বহদ্দারহাট কি না জানি না, একটা জায়গায় এসে বাস দাঁড়ায় এবং অনেকজন নেমে যায়। আমি উঠে নেমে যাচ্ছিলাম। কন্ডাক্টর বলে, আপনি না ২ নম্বর গেট যাবেন? আপনাকে ওখানেই নামাই দিব বসেন।
আমি দরজার পাশে প্রথম সিটে আবারও বসলাম। বাস ড্রাইভার মিরর দিয়ে বারবার তাকাচ্ছিল আমার দিকে, আমার সন্দেহ হতে থাকে, আমি পিছে তাকাই দেখি একটা মানুষও নাই।
আমি বললাম, ভাই আমাকে নামাই দেন। আমি ২ নম্বর গেট যাব না। যিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন উনি দরজাটা খুব তাড়াতাড়ি আটকে দেন। আমি চিল্লিয়ে উঠে বললাম, ড্রাইভার বাস থামান। আমি নামব। উনি এমন ভান করছিলেন যেন শুনতেই পাচ্ছেন না।
আমি ৯৯৯ টাইপ করছিলাম, এ সময় কন্ডাক্টর এসে আমার ব্যাগ নিয়ে নেয়। আমি ব্যাগ আটকানোর জন্য উনার সঙ্গে টানাটানি করছিলাম আর সারাক্ষণ চিৎকার করছিলাম জানালা দিয়ে। কন্ডাক্টর আমাকে ধাক্কা দেয় আমি দরজার সঙ্গে খুব জোরে বাড়ি খাই। আমি পা দিয়ে দরজায় লাথি মারছিলাম, আর চিৎকার করছিলাম।
আমার হিজাব টানছিল দুজন কন্ডাক্টরের একজন। আমি কান্না করে করে লাথি মারছিলাম দরজায় আর নিজেকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলাম। রাস্তার কিছু মানুষ ব্যাপারটি হয়তো নোটিস করেছিল, আমি জানি না। ড্রাইভার বলে ছেড়ে দে, সুবিধা নাই।
বাস থামায় আমি জিনিস নিয়ে নেমে পুলিশ বক্স খুঁজছিলাম। ইভেন আমি চিনিও না জায়গাটা। বাসের নম্বর দেখতে পারিনি। সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছিল। একটা রিকশা নিলাম আর বাসায় এলাম। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি সুস্থ এবং আমার ক্ষতি করতে পারেনি।
জানি না হয়তো সুবিধা পায়নি বলে এই যাত্রায় আমি বেঁচে গেছি। কিন্তু অন্যদিন সুবিধা পেলে হয়তো অন্য একটি বোনের বা মায়ের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যাবে।
এদেশে মেয়েদের অনেক সম্মান! অনেক বেশিই। আলহামদুলিল্লাহ- আমি সুস্থ আছি।’
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী জানান, ঘটনাটি চান্দগাঁও থানা এলাকায়। ইতোমধ্যে ওই থানায় পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে। তার বাবা পুলিশের সঙ্গে এটি নিয়ে কাজ করছে। তবে বাসচালক, হেলপার কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল কালাম জানান, জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
