কচ্ছপের বংশবিস্তারে বাধা সৈকত দূষণ
মহেশখালী (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
🕐 ১২:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
সোনাদিয়া ও সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতে আসে বৃহদাকার সামুদ্রিক মা কাছিম। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের সাগর সৈকতে দু’একটি কচ্ছপ চোখে পড়লেও কক্সবাজার, হিমছড়ি, পেঁচার দ্বীপ ও ইনানির সাগর সৈকতে সামুদ্রিক কচ্ছপ আর ডিম দিতে আসে না। অপরিকল্পিত আবাসন, সৈকতে আলোর ঝিলিক ও পর্যটকের অনিয়ন্ত্রিত পদচারণায় কাছিমের ডিম দেবার পরিবেশ গত পাঁচ বছরে পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উপকূলের সৈকতে মা হতে এসে মারা যাচ্ছে কচ্ছপ।
সামুদ্রিক কচ্ছপ গবেষক জহিরুল ইসলামের গবেষণায় প্রতিবছর উপকূলবর্তী এলাকাতে ছয়শত থেকে আটশত মৃত কচ্ছপ সৈকতে ভেসে আসে। আগত পর্যটকরা জানতেও পারেনা, কেন তারা মারা পড়ে। অথচ উপকূলীয় এলাকায় উন্নয়ন, হোটেল-মোটেলের আলোর ঝলক, প্রবাল ধ্বংস, সৈকত দূষণ কচ্ছপের বংশ বিস্তারে বড় প্রতিবন্ধকতা।
সৈকতে আলো জ্বালালে এরা সহজে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ডিম না দিয়ে ফিরে চলে যায়। কখনও আবার বালুচরে উঠতে না পেরে পানিতে ডিম দিয়ে দেয়। তবে সে ডিমগুলো থেকে কখনও বাচ্চা ফুটে না। মা হবার আকাঙ্খা অপূরণ রেখে ফিরে যেতে হয় অন্য জায়গায়।
স্ত্রী কচ্ছপ প্রজাতি ভেদে বছরে তিন থেকে সাতবার ডিম দেয়। শুকনো বালু সরিয়ে ৫০-৬০ সেমি. বা ১০০-১১০ সেমি. গভীর কলসী আকারের গর্ত করে ১০০ থেকে ১৫০টি গোলাকার সাদা ডিম দেয়। সামুদ্রিক কচ্ছপের বাচ্চা প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ফুটে বের হয়ে সমুদ্রে চলে যায়। জীবন বাঁচাতে সাগরে নেমেই টানা ৪৮ ঘন্টার মতো সাঁতরে গভীর সাগরে যায়। বাচ্চা কচ্ছপ যে সৈকতে জন্মেছিল বয়স প্রাপ্তির পর সে বালুচরেই তারা আবার ডিম দিতে আসে। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন কীভাবে সাগরের কচ্ছপ নির্দিষ্ট সৈকত খুঁজে নিতে পারে। খাদ্য তালিকায় কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, জেলিফিশ, সাগর শসা, চিংড়ি, লবস্টার, শ্যাওলা ও সামুদ্রিক ঘাস খেয়ে থাকে।
সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষণের উদ্দেশে সারা বিশ্বে হুমকিসমূহ কমানোর চেষ্টা চলছে। পরিযায়ী বলে কচ্ছপ সংরক্ষণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় প্রয়োজন। ২০০১ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলো সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষণের জন্য একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে IOSEA ÔMarine Turtle Mou’ হিসেবে পরিচিত। মূলত সাগরের কচ্ছপ বিষয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৪ সালে IOSEA সামুদ্রিক কচ্ছপ সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় এলাকতে সামুদ্রিক কচ্ছপ রক্ষার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত নেই কোন পর্যবেক্ষণ।
বর্তমানে সাগর সৈকতে মেরিন লাইফ অ্যালাইন্স নামের একটি সংস্থা সাগরের কচ্ছপ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু করেছে। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় তারা কচ্ছপের ডিম সংরক্ষণসহ কচ্ছপের জীবন বৃত্তান্ত আরও রহস্য উদঘাটন করছে।