অপ্রয়োজনে সিজার: ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:২৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০১৯
স্বাভাবিক প্রসব না করিয়ে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম হওয়ার পর শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করা হয়েছে হাইকোর্টে। রিটে সংশ্লিষ্টদের অবহেলার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেও আরজি জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিবসহ ৮ জনকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।
বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানার গোরারবাগ গ্রামের জামাল হোসেন বিপুর মেয়ে রিমা সুলতানা নিপার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন এ রিট করেন।
দেশে সিজারিয়ান পদ্ধতির হার আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে। কোনো প্রসূতি পেলেই প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর এক শ্রেণীর চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবাই বিভিন্ন অজুহাতে রোগীকে নরমাল ডেলিভারির ব্যাপারে কৌশলে মানসিকভাবে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলেন। এমনকি সিজারের প্রয়োজন না হলে মা কিংবা নবজাতকের ক্ষতি হওয়ার ভয়ও দেখানো হয় অনেক ক্ষেত্রে। নিরুপায় হয়ে প্রসূতি ও তার স্বজনরা নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুস্থ সন্তানের স্বার্থে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে বাধ্য হন।
এদিকে এ ঘটনায় ৪ সেপ্টেম্বর প্রসূতির শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠানো হলেও তারা জবাব দেননি। জবাব না পেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করলেন আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন।
আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন জানান, জামাল হোসেন বিপুর মেয়ে রিমা সুলতানা নিপা গত ৮ জুন সন্তান প্রসবজনিত বেদনার কারণে নোয়াখালীর ট্রাস্ট ওয়ান হাসপাতালে ভর্তি হন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন জানায়, রোগীর অস্ত্রোপচার বাধ্যতামূলক। ৯ জুন চিকিৎসকের পরামর্শে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। যদিও আলট্রাসনোগ্রাম প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রসূতির জটিলতা ছিল না, এমনকি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল না।
১২ জুন প্রসূতিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে তিনি বাড়িতে ফিরে যান। এরপর প্রসূতির শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়লে ১৪ জুন আবার একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সেলাইয়ের জায়গায় ক্ষত দেখা দেয়।
চিকিৎসকরা প্রসূতিকে অবস্থা খুবই আশংকাজনক বিবেচনায় রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। পরে ২০ জুন বিআরবি হাসপাতালে ভর্তির পর দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। বিআরবি হাসপাতালে সুস্থ হন প্রসূতি।
এদিকে এ ঘটনায় আরও ভোক্তভোগীরা বলছেন, সিজারিয়ান সেকশন এখন বেশিরভাগ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ প্রবণতা রোধ তো করা যাচ্ছেই না, বরং দিন দিন প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নরমাল ডেলিভারির চেয়ে সিজারিয়ানে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অনেক বেশি টাকা পান। হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষেরও এতে ব্যবসা বেশি। কারণ প্রসূতি মাকে বেশি সময় হাসপাতালে থাকতে হয়, ওষুধ বেশি লাগে, অপারেশন থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচও বেশি আদায় করা হয়।