কী অপরাধ ইলিয়াস কাঞ্চনের
সুবর্ণ অনার্য
🕐 ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৯
ইলিয়াস কাঞ্চন। সড়ক দুর্ঘটনার নির্মম স্মৃতির সাক্ষ্য বয়ে চলেছেন বছরের পর বছর। ১৯৮৯ সালে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় তার জীবন। কিন্তু ১৯৯৩ সালে সড়ক কেড়ে নেয় তার স্ত্রীর জীবন। প্রিয় হারানোর শোক শক্তিতে পরিণত করেন বাংলা চলচ্চিত্রের এই জনপ্রিয় নায়ক।
অব্যবস্থাপনা আর নৈরাজ্যেভরা সড়কে আর যাতে প্রাণহানি না হয়, হারাতে না হয় স্বজনকে সে জন্য শুরু করেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন। স্ত্রীকে যে বছর হারিয়েছিলেন সেই বছরের ১ ডিসেম্বর এফডিসির গেট থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত শোভাযাত্রার করেন। সেই শুরু।
এরপর গত ২৬ বছর ধরে বাংলাদেশের সড়ক নিরাপদ করতে বিরুদ্ধ স্রোতের বিরুদ্ধে নিঃসঙ্গ শেরপার মতো লড়ে যাচ্ছেন তিনি।
নতুন যে পরিবহন আইন হয়েছে সেটা প্রণয়নের জন্য সোচ্চার ভূমিকায় ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এ আইন বাস্তবায়নে যেন কোনো টালবাহানা না করা হয় সে জন্য সরকারের কাছে অনুরোধও জানান তিনি।
পুরানো সড়ক আইনের যে দুর্বলতা আর গলদ আর ফাঁকফোকর তাতে বেপরোয়া চালক আর অতিমুনাফালোভী মালিকরা যে শত অপরাধ করে পার যাচ্ছিলেন তা নানা সময়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন নিজের প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই বা নিসচার এই চেয়ারম্যান। শুধু দাবি তুলেই কিংবা জনসাধারণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি। চালক ও সহকারীদের মাঝে সচেতনা বাড়াতে এবং তাদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। তার প্রচেষ্টাতেই প্রতিবছর ২২ অক্টোবর
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হচ্ছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৬ সাল থেকে দেশে প্রতিবছর ২২ থেকে ২৯ এপ্রিল পালন করা হয় নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ।
সমাজসেবায় ইলিয়াস কাঞ্চনের অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব একুশে পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে তার অবদানের স্বীকৃতি যেখানে রাষ্ট্র দিয়েছে সেখানে পরিবহন নেতাদের রোষানলে বারবার পুড়তে হচ্ছে তাকে। নানা উসকানি দিয়ে শ্রমিকদের তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছে। ২০১২ সালে ইলিয়াস কাঞ্চনকে প্রকাশ্যে পিটানোর উসকানি দেন পরিবহন নেতা শাজাহান খান। তার বিরুদ্ধে বিষোদগার থামেনি।
নতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন মালিক নেতাদের কৌশলী আন্দোলনে গতকাল বুধবার কুশপুতুল দাহ করা হয়েছে ইলিয়াস কাঞ্চনের। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড চত্বরে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের এই যোদ্ধার কুশপুতুলে জুতার মালা পরানো হয়। তাকে সরকারের দালাল বলে দাবি করেন তারা।
ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রতি এই অবমাননাকর আচরণের পেছনের কারণ আসলে কি? যে মানুষটা নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলার জন্য নিজের জীবনের একটা বড় অংশ উৎসর্গ করেছেন তার দোষটা কি? সড়ককে দুর্ঘটনামুক্ত ও নিরাপদ করার যে আন্দোলন ইলিয়াস কাঞ্চনের তা বাস্তবায়ন হলে এর বড় সুফল পাবেন পরিবহন শ্রমিকরাই।
নৈরাজ্য আর দানবীয় প্রতিযোগিতা থেকে সড়ক মুক্ত হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসবে। বাংলাদেশের সড়কে প্রতিদিন যে দুর্ঘটনা ঘটে তাতে চালক ও সহকারীদেরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হতাহত হচ্ছেন। পরিবহন মাফিয়াচক্র থেকে সড়ক মুক্ত হলে দেশের নাগরিকদের জীবন যেমন নিরাপদ হবে, শ্রমিকদেরও জীবন নিরাপদ হবে। শ্রমিকদের প্রতিপক্ষ ইলিয়াস কাঞ্চন নন। এ উপলব্ধি তাদের আসা দরকার।