ডেটিংয়ের নাম দেরিতে কফিপান
ফরিদুল ইসলাম নির্জন
🕐 ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
মন বেশ ফুরফুরে; চুলগুলো বাতাস ছাড়াই নড়ছে! দাঁড়িয়ে বসে অনেক স্বপ্ন দেখছি। আজ সুবর্ণার সঙ্গে দেখা করার কথা। পরিচয় ফেসবুকে, ছবি দেয়নি ইনবক্সে। তবে তার ছবি হৃদয়ে বনলতা হয়ে ভাসছে। এঁকে ফেলেছি। বুঝে ফেলছি তার চেহারা। সময় যেন ফুরাচ্ছে না। বিকেল পাঁচটায় তার সঙ্গে দেখা করার কথা। নীলক্ষেতে একা সাদা শাড়ি পরে আসবে।
মাস শেষে আমার কাছে তেমন টাকা নেই। রেজওয়ানার মায়ের কাছ থেকে ধার করেছি। পাঁচশ’ টাকা কাল ডেটিংয়ের জন্য বাজেট। সুবর্ণার জন্য একটি লাল গোলাপ। কম টাকায় ভালোবাসার বেশি আকর্ষণীয় উপহার। হয়তো দোকানে বসে ফুচকা খেলাম। একটু হাঁটাহাঁটি আর কথার পর বাসায় ফেরা।
বাসে উঠে দেখলাম এক মেয়ে আমার সিটের দিকে আসছে। কাছে এসে বলল- ‘ভাইয়া, এটা মহিলা আসন!’
লজ্জা পেলাম। সিট ছেড়ে বসলাম পেছনে। সে সিটে আবার এক বাউল। হাতে মাটির হাঁড়ি। লোকটির সঙ্গে ফ্রি হওয়ার জন্য বললাম, ‘আপনার হাঁড়িটি অসাধারণ।’
লোকটি বলল, ‘ধন্যবাদ। আপনি কোথায় যাবেন?’
‘এই তো নীলক্ষেতে। আপনার বাসা কোথায়?’
‘দেখতে চান নাকি শুনতে চান?’
‘দেখতে পারলে কি কেউ শুনতে চায়!’
‘বাড়ি দেখতে কিন্তু টাকা লাগবে।’
‘নো প্রবলেম। দেখান দেখি!’
লোকটি হাঁড়ি ভেঙে ফেলে বলল, ‘আমার বাড়ি হাড়িভাঙা, উল্লাপাড়া। ২০০ টাকা দেন।’ সে চেঁচামেচি করে আদায় করেই ছাড়ল ‘হাড়ি ভাঙার’ টাকা!
সুবর্ণা জানিয়েছে, সে বলাকা সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে। খুঁজে বের করলাম। সঙ্গে দু’বোন এবং এক চাচাত বোনকে এনেছে। ইতোমধ্যে ভাবতে শুরু করেছি, কী খাওয়াব- ফুচকা, নাকি কোল্ড ড্রিংকস। মেজাজ অনেকটাই খারাপ হয়ে গেল। আসবে একা, এত মানুষ আনার কী দরকার ছিল!
ফাস্টফুডে গেলাম। পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগ নেই! এটা সুবর্ণাকে বুঝতে দিচ্ছি না। হরেক রকমের খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। আমার কাছে তো টাকা নেই। অপমান হলে না হয় আজই হলাম। খেয়ে নিই আগে! টুকটাক কথাও হলো।
কী করা যায়! আল্লাহ রক্ষা করো। একটা বুদ্ধি এলো মাথায়। তাহলে কফি পান করব দেরিতে। এ সময় ফোনে কথা বলব। চিন্তামাখানো কথা বললে সবাই মনে করবে আমার বড় কোনো সমস্যা হয়েছে। অবস্থা সুবর্ণা হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে। বারবার বলল, ‘তোমার কোনো সমস্যা?’
‘না। মানে... এমনিতেই।’ এবার কফি নেওয়া যাক। একটু পর দেবে। এবারই বাঁচার সুযোগ। পকেটে একটা টাকাও নেই। নীলক্ষেত থেকে বাসায় হেঁটে গেলে ১ ঘণ্টা ত্রিশ মিনিট লাগবে। কফিতে চুমুক দেওয়া বাদ দিয়ে সুবর্ণার বোনদের সঙ্গে কথা বলতে লাগলাম। কে কোথায় পড়ে, কার নাম কী। আমার কফি অর্ধেকে এলে কল করলাম হুদাই এক নম্বরে। উত্তেজিত একটা ভাব নিয়ে বললাম, ‘তোকে এতবার বললাম, আমি বিকালে বাইরে থাকব। তুই কি-না বাসায় এলি! খালা কি জানে না আমি মিষ্টি পছন্দ করি না। আবার পিঠা রান্না করে পাঠিয়েছে!’
অনেকক্ষণ ‘কথা বলার’ পর সুবর্ণা উঠল। কাউন্টারে বিল দিল। আমি কফি পান করছিলাম। ভাব নিচ্ছি, কফি ফুরাচ্ছে না! জোরে চুমুক দিতে দিতে ফোন কানে নিয়ে বললাম- ‘এই, আমি বিল দেব!’ সুবর্ণা বিল পরিশোধ করল। যাক, ডেটিংয়ে কোনো খরচ হলো না। কফিটা দেরিতে পান করার জন্য। তাই তো কই, ডেটিংয়ের নাম দেরিতে কফিপান!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
