ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তৈরি পোশাক রপ্তানি

বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

জাফর আহমদ
🕐 ১০:২৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০১৯

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের স্বপ্ন ভঙ্গ অবস্থা তৈরি হয়েছে। লক্ষ্য স্থির ছিল ২০২১ সালে বাংলাদেশ ৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করবে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি কমিয়ে আনবে প্রথম থেকে দ্বিতীয় দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ব্যবধান। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সে স্বপ্নভঙ্গ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুতেও বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় দেশ ছিল। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০১৯ প্রতিবেদন অনুযায়ী পঞ্জিকা বর্ষ ২০১৮-এ শীর্ষ ১০ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রথম ছিল চীন। এ বছর চীন রপ্তানি করেছিল ৩১ শতাংশ, বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ রপ্তানি করে দ্বিতীয় এবং ৬ দশমিক ৩ শতাংশ রপ্তানি করে তৃতীয় দেশ ছিল ভিয়েতনাম। আর কাছাকাছি ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত।

চীন শ্রমঘন শিল্প থেকে সরে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানকার ক্রেতারা অন্যদেশে যাওয়ার পথ খুঁজছিল। সে সময় বাংলাদেশে নতুন ক্রেতা পাওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানির উন্নতি আশা করেছিল। সে জন্য ধাপে ধাপে তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য পরিকল্পনাও করেছিল। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর প্রথম চার মাস তৈরি পোশাক রপ্তানি ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এখন অনেকটাই হতাশ।

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে ভিয়েতনামের নয় মাসের রপ্তানি আয়ের তথ্যচিত্র। তথ্য অনুযায়ী চলতি ২০১৯ সালের প্রথম নয় মাসে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি-জুন ছয় মাস রপ্তানি মোটামুটি ভালো থাকলেও পরবর্তী মাসগুলোতে কমেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার ৬১০ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

অন্যদিকে একই সময়ে ভিয়েতনাম থেকে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারের পোশাক। অর্থাৎ ৯ মাসে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনাম ৩২০ কোটি ডলারের পোশাক বেশি রপ্তানি করেছে। তৈরি রপ্তানিতে ভিয়েতনামের এই অগ্রগতি দেশটিকে এগিয়ে যাওয়া আর বাংলাদেশের পিছিয়ে যাওয়ার লক্ষণ হিসাবে বিবেচনা করছে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, চীন থেকে পশ্চিমা তৈরি পোশাক ক্রেতারা চলে যাওয়া ও যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা দেখেছিল, সেটা হচ্ছে না, সেখানে ভিয়েতনাম ভালো করেছে।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্স) তথ্যমতে, ভিয়েতনাম চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৩৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪৫৬ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। আবার বাজারটিতে শীর্ষ রপ্তানিকারক চীনের রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে চীন রপ্তানি করেছে ২ হাজার ১০ কোটি ডলারের পোশাক।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে কৌশলগত ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করছেন নীট রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী থাকা; বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে লিট টাইম বেশি লাগা; শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দেওয়া; ব্যাংকঋণে অতিরিক্ত সুদ এবং ইউরোপে অর্থনীতিতে মৃদু মন্দা বিরাজ করার কারণে বাংলাদেশ সুবিধা করতে পারছে না। জুলাই-অক্টোবর চারমাসে কমেছে।

তৈরি পোশাক খাতে এমন মন্দা কোনো দিনই হয়নি। আগামীতে মন্দা কাটলেও দুই থেকে তিন মাস সময় লেগে যাবে। তারপর রপ্তানি ট্যাকে ফিরলেও ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। এমন অবস্থায় রপ্তানি বাড়িয়ে প্রত্যাশা পূরণ অনেকটাই কঠিন হবে।

 
Electronic Paper