বৈশ্বিক ইন্টারনেট ডাউনলোড স্পিড
পেছন সারিতে বাংলাদেশ
সৈয়দ ফয়সাল
🕐 ৬:২৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখযোগ্য হলেও সেবা বাড়েনি মোটেও। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোবাইল কিংবা ব্রডব্যান্ড সংযোগে ইন্টারনেট ডাউনলোড স্পিডে এখনো পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ব্রডব্যান্ড ডাউনলোড স্পিডে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। আর মোবাইল ডাউনলোড স্পিডে পঞ্চম। বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে এ অবস্থান আরও তলানিতে। ইন্টারনেট ডাউনলোড স্পিড বিশ্লেষণকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ওকলার সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন দিয়েছে ওকলা। ওকলা জানিয়েছে, এ সময় মোবাইলে বৈশ্বিক গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল ২৯ দশমিক ৫ মেগাবাইট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস)। আর বাংলাদেশে এর পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৩১ এমবিপিএস। ডাউনলোড স্পিডে আগের তুলনায় তিন ধাপ এগিয়ে ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩২তম। তালিকায় থাকা দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।
এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে মোবাইলে ডাউনলোড স্পিডে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে দুই ধাপ এগিয়ে দেশটির অবস্থান এখন ৮১তম। গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মোবাইলে গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল ২২ দশমিক ৫৩ এমবিপিএস।
বৈশ্বিক তালিকায় ১১২তম অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে এর পরিমাণ ১৪ দশমিক ৩৮ এমবিপিএস। সর্বশেষ তালিকায় দেশটি ছয় ধাপ এগিয়েছে। নেপাল সেপ্টেম্বরে ১২ দশমিক ৯৬ এমবিপিএস গড় ডাউনলোড স্পিড নিয়ে বৈশ্বিক তালিকায় ১১৯তম অবস্থান থেকে ১১ ধাপ এগিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত চতুর্থ এবং মোবাইলে ডাউনলোড স্পিডের বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে অবস্থান ১২৮তম। গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মোবাইলে গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল ১১ দশমিক ১৮ এমবিপিএস।
এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক তালিকায় দেশটি তিন ধাপ এগিয়েছে। তালিকায় বাংলাদেশের পরে অবস্থান করা একমাত্র দক্ষিণ এশীয় দেশ আফগানিস্তান। সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মোবাইলের গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল ৬ দশমিক ৫৫ এমবিপিএস। বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে আফগানিস্তানের অবস্থান ১৪০তম। অবশ্য এ তালিকায় জায়গা পায়নি ভুটান ও মালদ্বীপ।
বাংলাদেশ মোবাইলে ডাউনলোডের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও ব্রডব্যান্ড সংযোগে ডাউনলোড স্পিডে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ওকলা জানিয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে ব্রডব্যান্ডে বৈশ্বিক গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল ৬৯ দশমিক ১০ এমবিপিএস। আর বাংলাদেশে এর পরিমাণ ছিল ২৪ দশমিক শূন্য ২ এমবিপিএস। এর মধ্য দিয়ে আগের তুলনায় পাঁচ ধাপ পিছিয়ে ১৭৫টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৯৯তম অবস্থানে নেমেছে।
এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ব্রডব্যান্ড ডাউনলোড স্পিডে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত। বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে দেশটির অবস্থান ৭২তম। গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে ব্রডব্যান্ডে গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ৭ এমবিপিএস। বৈশ্বিক তালিকায় ৮২তম অবস্থানে থাকা ভুটানে তা ছিল ২৮ দশমিক ৭০ এমবিপিএস।
সর্বশেষ তালিকায় দেশটি ১৯ ধাপ এগিয়েছে। সেপ্টেম্বরে ২৭ দশমিক ৬২ এমবিপিএস গড় ডাউনলোড স্পিড নিয়ে তিন ধাপ পিছিয়ে বৈশ্বিক তালিকায় ৮৪তম অবস্থানে নেমেছে শ্রীলঙ্কা।
এদিকে ব্রডব্যান্ড ডাউনলোড স্পিডে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পর পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে নেপাল। সেপ্টেম্বরে দেশটিতে গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল ২১ দশমিক ২১ এমবিপিএস। ফলে দুই ধাপ পিছিয়ে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে নেপালের অবস্থান ১০৫তম।
১২৭তম র্যাংকিংয়ে থাকা মালদ্বীপে গড় ব্রডব্যান্ড ডাউনলোড স্পিড ছিল ১৫ দশমিক ৭৩ এমবিপিএস। এদিক দিয়ে বৈশ্বিক তালিকায় পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৯তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সপ্তম। সেপ্টেম্বরে দেশটিতে গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ এমবিপিএস।
সর্বশেষ তালিকায় পাকিস্তান অবস্থান হারিয়েছে দুই ধাপ। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে তলানিতে রয়েছে আফগানিস্তান। সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক শূন্য ৫ এমবিপিএস গড় ডাউনলোড স্পিড নিয়ে দেশটি বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ১৬৮তম অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে ওকলা।
বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ এখনো সূচনা পর্যায়ে আছে, দেশকে আরও সামনে এগোতে হলে কার্যকরভাবেই ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের মতে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কারন মূলত বেশি দামে কম সুবিধা পাওয়া, অদক্ষ লোকের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান, ব্যবসায়িদের এলাকাভিত্তিক মনোপলি বাজার এবং সর্বোপরি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব।
তারা মনে করেন, ইন্টারনেটের গতিকে আরো দ্রততর করতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরকারের আরো নজরদারি বাড়ানো দরকার।