ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মানবতার সেবায় অনন্য মানুষ

সাজ্জাদ কাদির
🕐 ৯:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০১৯

প্রাণিকুলের মধ্যে যখন থেকে মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে তখন থেকেই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত মানুষের আগমন ঘটছে। বেশিরভাগ মানুষই তাদের জীবন ব্যপ্তিকালের একটি নির্দিষ্ট সময় পার করে কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। তবে যুগ যুগ ধরে তাদের কর্মের মাঝে বেঁচে থাকেন বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় গুরু এবং বিশেষ কোনো কাজের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টিকারী কিছু মানুষ।

আমাদের এই দেশেও এমন কিছু মানুষ জন্ম নিয়েছেন, যারা তাদের কর্মের মাঝে বেঁচে আছেন, ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, নিজে সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং চারপাশটাকে আলোকিত করেছেন। গত ৮ নভেম্বর ঘুরে এলাম এমনই একজন ইতিহাস সৃষ্টিকারী মানবদরদী দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী কমপ্লেক্স থেকে।

১৫ নভেম্বর রণদা প্রসাদ সাহার ১২৩তম জন্মজয়ন্তী। প্রতি বছর জন্মদিন উপলক্ষে মির্জাপুরে তার গ্রামবাসী এবং কুমুদিনি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল দুই ভাগে স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। ৮ নভেম্বর ছিল গ্রামবাসীর স্মরণ অনুষ্ঠান এবং ১৫ নভেম্বর কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের স্মরণ অনুষ্ঠান। কুমুদিনি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের পরিচালক রণদা প্রসাদ সাহার অত্যন্ত স্নেহধন্য সহযোদ্ধা আর এক মহীয়সী নারী প্রতিভা মুৎসুদ্দী ও ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং রণদা প্রসাদ সাহার পৌত্র রাজীব প্রসাদ সাহার আমন্ত্রণে সেদিন ওই কমপ্লেক্সে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল।

এর আগে কখনও আমার যাওয়া হয়নি সেখানে। কমপ্লেক্সের গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই যেন এক ফালি শান্তি এসে ভর করল আমার পুরো দেহ মনে। সেখানে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কুমুদিনী নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ ছবির মতো সুন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে এবং ওইদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এক অসম্ভব ভালো লাগা নিয়ে সেদিনই ঢাকায় ফিরেছি।

একজন রণদা প্রসাদ সাহা বা সংক্ষেপে আরপি সাহার জীবন আগামী প্রজন্মের জন্য অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিত। কারণ এমন জীবনের কথা আমার জীবনে আর একটিও শুনিনি বা কোথাও পঠ করিনি। ‘দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার জন্ম ইংরেজি ১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাভারের অদূরে শিমুলিয়ার কাছৈড় গ্রামের মাতুলালয়ে।

পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ পোদ্দার, মাতা কুমুদিনী দেবী। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ দ্বিতীয়। রণদা প্রসাদ সাহার পৈতৃক নিবাস বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা সদরে। পিতা দেবেন্দ্রনাথের স্থির কোনো পেশা ছিল না। রুটি-রুজির সন্ধানে বারবার তাকে পেশা বদল করতে হয়েছে। বেশির ভাগ সময় দলিল লেখকের কাজ করেছেন তিনি।

জীবনের গতি ফেরাবার জন্য কিছুদিন লগ্নি ব্যবসাও করেছেন। নিয়ত জীবনসংগ্রামে দেবেন্দ্রনাথ জীবনের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হননি। কিছুটা লেখাপড়া জানতেন। চলতি আইন ও আইনের ব্যাপার স্যাপার ভালোই জানা ছিল। তার আগের কয়েক পুরুষ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও যতদূর জানা যায় দেবেন্দ্রনাথের ব্যবসায়ী মন-মানসিকতা ছিল না।’ (সূত্র : ‘রণদাপ্রসাদ সাহার জীবনকথা’, লেখক : হেনা সুলতানা পৃষ্ঠা-১১)। তাই খানিকটা অভাব অনটনের মধ্যেই জীবন কাটছিল।

রণদা প্রসাদ সাহা ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত চালাক-চতুর, হাসিখুশি ও দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মির্জাপুর বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। তার বয়স যখন সাত বছর, তখন দারিদ্র্য আর অবহেলায় চোখের সামনে মায়ের অসহায় মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেন। এই মৃত্যুই তার জীবনে চরম প্রভাব ফেলে। হয়তো তখনই মনের মধ্যে দানা বাঁধে মানুষের জন্য, মানবতার জন্য একটা কিছু করতে হবে।

সন্তানদের লালন পালনের জন্য পিতা দেবেন্দ্রনাথ আত্মীয়-পরিজনের পরামর্শে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। সৎ মায়ের আশ্রয়ে বহু দুঃখ-কষ্ট ও অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে রণদার শৈশবকাল অতিবাহিত হয়। পরিশেষে তাকে মাতুলালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানকার সীমাবদ্ধ জীবন তার ভালো লাগেনি। ১৪ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে যান। অপরিচিত শহর কলকাতায় তার কোনো আশ্রয় ছিল না। জীবন-জীবিকার তাগিদে কুলিগিরি, রিকশা চালানো, ফেরি করা, খবরের কাগজ বিক্রির মতো বিচিত্র কাজ করেছেন রণদা। কলকাতায় তখন সারা বাংলা থেকে কাজের সন্ধানে ছুটে আসা ভুখা মানুষের ভিড়। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে এরই মধ্যে স্বদেশি আন্দোলনে যোগদান করে কয়েকবার কারাবরণ করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোরে যোগ দিয়ে ইরাকে যান। সেখানে তিনি হাসপাতালে এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিজের জীবনবাজি রেখে রোগীদের জীবন বাঁচালে সাহসিকতার পুরস্কারস্বরূপ তাকে নবপ্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন প্রদান করা হয়। ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমিশন অফিসার রণদাপ্রসাদের সঙ্গে সহকর্মী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সখ্য গড়ে ওঠে। যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯১৯ সালে সম্রাট পঞ্চম জর্জ ইংল্যান্ডে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাকে পুরস্কৃত করেন। দেশে ফেরার পর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রণদাপ্রসাদকে অভিনন্দন জানান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেনাবাহিনী ত্যাগ করে রেলওয়ে বিভাগের টিকিট কালেক্টরের চাকরি নেন। ১৯৩২ সালে এই চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। নিজের সঞ্চয় করা ও অবসরের এককালীন অর্থ দিয়ে শুরু করেন কয়লার ব্যবসা। বছর চারেকের মধ্যেই ব্যবসায়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠেন। তারপর সে সময়কার সর্ববৃহৎ নৌ-পরিবহন সংস্থা বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানি গড়ে তোলেন। যেখানে সম্পৃক্ত ছিলেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়।

এছাড়া পূর্ব বাংলার প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পরিচালনা করেছেন রণদা প্রসাদ। তার পরবর্তী জীবনে একদিকে ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা দিয়ে নানা ধরনের ব্যবসায় জড়িয়ে বিপুল সম্পদ গড়েছেন আবার অন্যদিকে অকাতরে সম্পদ দান করেছেন মানুষের জন্য মানবতার কল্যাণে।

শৈশব থেকে মানবকল্যাণের যে স্বপ্ন নিজের মনে লালন করেছিলেন তার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৩৮ সালে মাতামহীর নামে শোভাসুন্দরী ডিস্পেন্সারি ও মায়ের নামে কুমুদিনী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে আড়াই শতাধিক লঙ্গরখানা পরিচালনা করেন তিনি। রণদা প্রসাদের আহ্বানে ১৯৪৪ সালে অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড আর জি কেসি কলকাতা থেকে নদীপথে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এক অজোপাড়া গাঁয়ে এসে কুমুদিনী হাসপাতাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সংকটময় সময় রণদা রেডক্রসকে আড়াই লাখ রূপি দান করেন। ওই টাকায় সে সময়ে ঢাকা শহরের একটি বিশাল অংশ কিনে ফেলা যেত।

অবহেলিত নারী সমাজকে পাদপ্রদীপের আলোয় আনতে ও স্বাবলম্বনে ১৯৪০ সালে তার প্র-পিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করেন নারী শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান ভারতেশ্বরী হোমস। শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার জন্য ভারতেশ্বরী হোমসের নাম দেশজুড়ে সুবিদিত। পূর্ববাংলার প্রথম মহিলা ডিগ্রি কলেজ কুমুদিনী মহিলা কলেজ, মানিকগঞ্জে পিতার নামে দেবেন্দ্র কলেজ, মির্জাপুর কলেজ, মির্জাপুর এস কে হাইস্কুল ভবন নির্মাণ, মাগুরার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রতিষ্ঠায় মোটা অঙ্কের আর্থিক অনুদান, ঢাকার কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটালের (সিএমএইচ) প্রসূতি বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এছাড়া আরও নানা জনহিতকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ভারতবর্ষের কলকাতা, দার্জিলিং, ঝাড়খণ্ড, বর্তমান পাকিস্তানের হরিপুর ডিস্ট্রিক্ট, সমগ্র পূর্ব বাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশের নানা স্থানে রণদা প্রসাদ সাহা বিভিন্ন জনহিতকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং অসংখ্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা করেন।

১৯৪৭ সালে যে সময়টিতে শুধুমাত্র ধর্মের কারণে অসংখ্য মানুষ এই অঞ্চল থেকে স্রোতের মতো দেশান্তরি হয়ে পশ্চিম বাংলায় যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় কলকাতার ব্যবসা-বাণিজ্যের পাঠ চুকিয়ে সেখানকার অঢেল সম্পদের মায়া ত্যাগ করে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখি রণদা নিজ মাতৃভূমিতে পাকাপাকিভাবে ফিরে আসেন। রণদা প্রসাদ সাহা শৈশবে মানবকল্যাণের যে দীক্ষা নিয়েছিলেন, সেই আদর্শ বাস্তবায়ন ও প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পূর্বে ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’ নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করে তার সমুদয় সম্পত্তি এই ট্রাস্টের অধীনে লিখে দেন।

বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত জনহিতকর প্রতিষ্ঠানগুলো এই ট্রাস্টের অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- কুমুদিনী হাসপাতাল (মির্জাপুর), কুমুদিনী নার্সিং ইনস্টিটিউট, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমস, ট্রেড টেনিং স্কুল, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাপটস, কুমুদিনী ফার্মাসিউটিক্যালস, আরপি সাহা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি। প্রতিষ্ঠানগুলো টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। এই সংস্থা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত এই অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত এই ট্রাস্ট মানবতার সেবায় অনন্য অবদার রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়।

মানবতাধর্মী কাজে সম্পৃক্ত থাকায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার রণদা প্রসাদ সাহাকে রায় বাহাদুর খেতাব প্রদান করে। পূর্ববাংলার প্রতি পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেতাব হেলাল-ই-পাকিস্তান ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার মানবসেবায় অসামান্য অবদান রাখায় তাকে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে রণদা প্রসাদ সাহার শুভাকাক্সিক্ষরা দেশত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে এই অকুতোভয় মানুষটি কোথাও যেতে রাজি হননি। ১৯৭১ সালের ৭ মে আমাদের এদেশীয় রাজাকারদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে পাকিস্তানি বাহিনী রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ২৬ বছর বয়সী সন্তান ভবানী প্রসাদ সাহাকে (রবি) তুলে নিয়ে যায়। এরপর তারা আর কখনও ফিরে আসেননি। মিশে গেছেন এদেশের ইতিহাসের সঙ্গে। তাদের রক্তে আমরা পেয়েছি আজকের বাংলাদেশ।

ভেবে অবাক হই, একটি সাধারণ বিত্তবৈভবহীন পরিবার থেকে নিজ কর্মগুণে বিত্তবান হয়েছেন আবার সেই বিত্ত ভোগবিলাসে ব্যয় করেননি। অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন মানবতার সেবায়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান সময় পেরিয়ে গেছে। আজকে আমরা বাংলাদেশ সময় পার করছি। আমাদের পুরো উপমহাদেশে এত বছরে আর একজন আরপি সাহা কি জন্ম নিয়েছে? আমার জানা নেই।

আমি এটিও জানি না যে, একজন আরপি সাহা ঠিক কত শত বছর পর পর জন্ম নেয়? অথচ নির্মম পরিতাপের বিষয়- এমন একজন ক্ষণজন্মা মানবদরদী মহাপুরুষ যিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবকিছুর ঊর্ধ্বে তাকেও নিজ সন্তানসহ মানুষরূপী নরপশুদের হাতে ৭১-এ অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিতে হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের ইতিহাস রক্তের ইতিহাস; একজন মহৎ প্রাণ রণদা প্রসাদ সাহারও রক্তের ঋণ রয়েছে এদেশের জন্মের পেছনে। চোখ বন্ধ করে ভাবলেও গা শিউরে ওঠে; বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আজকে এত বছর পর হলেও যে রাজাকারের ইশারায় এই মহান মানুষটিকে গুম করে হত্যা করা হয়েছিল সেই ঘৃণ্য রাজাকারের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির আদেশ হয়েছে। আমরা চাইব অতি দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে।

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা একদা যে মানবকল্যাণের মশাল জ্বালিয়েছিলেন কুমুদিনী ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের মাধ্যমে, আজও সেই মশাল বহন করে চলেছেন তারই পৌত্র সুযোগ্য উত্তরসূরি ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহার নেতৃত্বে পরিবারের একদল সদস্য। তার সঙ্গে আছেন কুমুদিনী ট্রাস্টের সুখ-দুঃখের সাথী প্রতিভা মুৎসুদ্দী, ভবানী প্রসাদ সাহার স্ত্রী ও রাজীব প্রসাদ সাহার মাতা শহীদ জায়া শ্রীমতী সাহা, কন্যা মিসেস জয়াপতির সুযোগ্য সন্তান মহাবীর পতি প্রমুখ।

বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের হাত দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভষ্যিতে তাদের আরও কিছু জনহিতকর প্রতিষ্ঠান গড়বার পরিকল্পনা আছে বলে জানা যায়। এমন একটি অনন্য প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও অগ্রগতিতে প্রতিটি বিবেকবান মানুষ মাত্রেরই এক অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি জাগে। কারণ, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার গড়া প্রতিষ্ঠান ভালো চললে তার আত্মা শান্তি পাবে। ১২৩তম জন্মজয়ন্তীর এই মহেন্দ্রক্ষণে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সাজ্জাদ কাদির : কলামিস্ট, লেখক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও তথ্যচিত্র নির্মাতা
[email protected]

 
Electronic Paper