ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বৈদেশিক মুদ্রা থেকে কম সুদে ঋণ

স্বল্পমেয়াদি গ্রাহক পাচ্ছে না বিবি

জাফর আহমদ
🕐 ১০:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৯

বৈদেশিক মুদ্রা (রিজার্ভ) থেকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের স্বল্পসুদে ঋণ দিতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)। বিষয়টি পরিচালনা পরিষদের কাছে থেকে অনুমোদনও নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কম সুদ হওয়ার পরও স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে এ ঋণের গ্রাহক মিলছে না। উদ্যোক্তারা মনে করছে এ ঋণ স্বল্পমেয়াদে হওয়ার কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি বা কাঁচামাল আমদানি করে সময়মতো উৎপাদনে যেতে না পারলে এ ঋণ নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

অন্য দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ঋণ দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া হলে সে অর্থ প্রয়োজনের সময় না পাওয়া গেলে বৈদেশিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে।

বৈদেশিক মুদ্রার এর ধরনের স্বল্পমেয়াদি স্বল্প সুদের রপ্তানি উন্নয়ন ঋণ-ইডিএফ রপ্তানি বাণিজ্যের উদ্যোক্তারা ব্যবহার করছে। এ ধরনের তহবিলের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের। রপ্তানি কারকরা রপ্তানি প্রক্রিয়া কার্যক্রমের বিপরীতে নির্দিষ্ট কাগজপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো তদবির ছাড়াই ঋণ পেয়ে যান। এবং রপ্তানি আয় দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে আবার পরিশোধও হয়ে যায়। এ রকম পাঁচ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এজন্য চলতি বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থেকে অনুমোদনও সংগ্রহ করে। নয়া তহবিল থেকে মাত্র আড়াই শতাংশ সুদে মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালসহ কয়েকটি পণ্য আমদানির জন্য ঋণ পাবেন উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, স্বল্প মেয়াদের কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান খোলা কাগজকে, আমরা বিজিএমইএর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন প্রস্তাব করেছিলাম। ইডিএফের মতো এমন কম সুদের এ ঋণ দেওয়া হলে তৈরি পোশাকের পশ্চাৎ সংযোগমুখী শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব হতো। আজকে তৈরি পোশাক শিল্পে রপ্তানি হ্রাসচিত্র দেখা যাচ্ছে কম সুদের এমন ঋণ চালু করা গেলে এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হতো। তবে স্বল্পমেয়াদ নিয়ে আপত্তি আছে এই উদ্যোক্তার। তিনি বলেন, রপ্তানি কাজে আমরা ইডিএফ ব্যবহার করছি। এরপর যদি আবারও স্বল্পমেয়াদি ঋণ হয় আমরা ওই অর্থ কোথায় ব্যবহার করব! কমপক্ষে ৫/৭ বছর মেয়াদ ঋণ প্রয়োজন। তাহলে আমরা বিনিয়োগ করে উৎপাদনে যেতে পারব।

সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার। এ রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশের মুদ্রাতে রাখা হয়। এ রিজার্ভ থেকে নামমাত্র সুদ পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ওই সব দেশ বাংলাদেশের রিজার্ভ নিজ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ব্যবহার করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রাইভেট কোম্পানি ৬ থেকে ৮ শতাংশ হারে বিদেশি ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করে ব্যবসা বাণিজ্য করে। বিদেশি এ ধরনের ঋণের পরিমাণ প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। আবার ওই সব দেশেরই ব্যাংকের টাকা উঁচু হারে সুদ দিয়ে ঋণ হিসাবে নিয়ে আসছে। মেয়াদ শেষে এ ঋণের সুদে আসলে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর ফলে একদিকে বৈদেশি মুদ্রার ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করছে। স্বল্প সুদের এই ঋণ ব্যবহার করা গেলে শিল্পায়নের পথে সহায়ক হবে। তবে মেয়াদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রটি জানায়, যেহেতু বৈদেশিক বাণিজ্যে বাইরের দেশগুলো রিজার্ভকে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করে সেহেতু বৈদেশিক মুদ্রাকে কখনো দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এর মাধ্যমে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। রিজার্ভ জাতীয় সম্পদ। এটা রাখা হয় মুনাফা করার জন্য নয়, বিপদে-আপদে আমদানিতে ব্যবহারের জন্য। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার কথা আগে কখনো শুনিনি। এটা ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাকে ঝুঁকিতে ফেলবে।

এ উদ্যোগ ব্যাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষিতে বিচার করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াসিন আলী। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার কারণে অর্থনীতির বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক কিছুই করে। এ উদ্যোগ নিশ্চয়ই অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যা করছে তা নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে পরিধি আছে তা মেনেই এ ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে শিল্পায়নের অগ্রগতি সাধিত হবে।

 
Electronic Paper