ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এক থাপ্পড়ে দুই মশা!

শফিক হাসান
🕐 ৮:১৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০১৯

নতুন মুখ সিফাত উল্লাহর বাজিগর হয়ে ওঠা অবাক করেছে অনেককে। কেউ কেউ ধকল কাটিয়েছে মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায় বাক্য স্মরণ করে। যে কোনো কিছু নিয়েই বাজিতে মাততে পছন্দ করে সিফাত। কারও সঙ্গে গল্পের মাঝখানে হুট করে বলে উঠবেÑ ‘আজ বৃষ্টি হবে?’

অন্যজন হয়তো বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল- ‘হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে!’
‘একটা বলতে হবে!’
‘আচ্ছা, হবে!’
‘আমি বলছি, হবে না! কত টাকার বাজি?’

উত্তর যা-ই আসুক, সিফাত বাজি ধরবেই। উত্তর যদি না হওয়ার পক্ষে, তার অবস্থান হওয়ার পক্ষে। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফানে বাজির হেরফের হয় না। টাকার অঙ্কে বাজি ধরতে বাধ্য করে বলে অনেকেই বিরক্ত। তাতেও সিফাত নিজ অবস্থান থেকে নড়ে না। এলাকাবাসীকে গিনিপিগ বানানোর পর বাজির অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে ঘরের ভেতরেও। ছোট ভাই-বোনকে প্রশ্ন করে- ‘আম্মু আগামীকাল কী রাঁধবে- মাছ নাকি মাংস?’
উত্তর আসে অপ্রত্যাশিত- ‘সবজি!’

‘কত টাকার বাজি?’
‘টাকা পাব কোথায়?’
‘কেন, বাবার কাছ থেকে নেবে!’
সিফাতের কাছে কিছু টাকা জমা থাকেই। বেশির ভাগ বাজিতে কীভাবে যেন জিতেও যায়। ফান্ড থাকায় যে কোনো অংকের বাজি ধরতে পারে অনায়াসেই। স্কুলপড়ুয়া ভাই-বোনদের সঙ্গে ১০-২০ টাকার বেশি বাজি ধরার সুযোগ নেই। কাকতালীয়ভাবে ঘরেও অধিকাংশ বাজিতে জিতলে চাপ পড়ে বাবার পকেটে। প্রথমদিকে তিনি ছাড় দিলেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে বেঁকে বসেন। সিফাতের বকা না খেয়ে উপায় থাকে না। বকা খেয়ে বকেয়া খাতায় লিখে রাখে পাওনার হিসাব।

টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা চলাকালে সিফাতের প্রশ্ন- ‘কে জিতবে?’

দেখা যায়, সমর্থক হিসেবে কারও সঙ্গে বাজি ধরেছে বাংলাদেশ জিতবে, আবার অন্য কারও সঙ্গে বাজি ধরেছে হারার! দ্বিচারিতায় অন্যরা বিব্রত হলেও সিফাত ভ্রুক্ষেপহীন। বাজিটাকে ব্যবসাই বানিয়ে ফেলল! কলেজের শিক্ষকরাও সিফাতকে নিয়ে হতাশ। বেত্রাঘাত নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে প্রথম বর্ষের শিক্ষকদের হাত নিশপিশ করলেও কিছু করার থাকে না! সবচেয়ে খারাপ ছাত্র ঝন্টু কোনোদিনই পড়া পারে না। পড়া ধরলে মুখ নিচের দিকে রেখে বিড়বিড় করে কী সব বলে। একদিন ক্লাস চলাকালে সিফাত বলে উঠল- ‘স্যার, আগামীকাল ঝন্টু পড়া পারবে!’

‘তুমি কীভাবে জানলে?’
‘আমি জানি। বাজি ধরবেন!’
শিক্ষক বাজি ধরেননি। তবে পরদিন ঝন্টু পড়া না পারলে তিনি পাকড়াও করেন সিফাতকে। যথারীতি হাত নিশপিশ করে! সিফাতকে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন ছোড়েন- ‘এবার?’

সিফাত নির্বিকার- ‘কিছুই না স্যার। আপনি যদি ১০০ টাকার বাজি ধরতেন টাকাটা পেতেন! ধরলেন না কেন!’
সিফাতের ঔদ্ধত্যের খবর বাবাকে জানানো হলে কলেজে আসেন তিনি। শিক্ষকরা নিজেদের সঙ্গে এবং ছাত্রদের সঙ্গেও সিফাত যে বাজিগরি শুরু করেছে সেসব জানালেন। রাতে বাবা এসব বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করলে সিফাত হাঁটল উল্টোপথে- ‘আমার ধারণা, সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে আইসিসি। তুমি একমত?’

তার ইচ্ছা হলো, হাতে ব্যাট নিয়ে সিফাতকে বল বানিয়ে ছক্কা মারেন! আদরের ছেলে বলে নিজেকে সামলাতে হলো। অল্পদিনের মধ্যেই বাজি সংস্কৃতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে গেল ঘরেও। অফিসে কোনো সহকর্মীর সঙ্গে হয়তো বাবার মনোমালিন্য, সিফাতকে বললেন- ‘আগামীকাল কমল সাহেবের সঙ্গে আমার ঝামেলা মিটমাট হবে নাকি হবে না?’

বাজিতে সিফাত জিতে গেলে বাবা তাকে বাজির টাকার দ্বিগুণ দেন। এভাবে তিনি একের পর এক ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতায় সিফাতের শরণাপন্ন হয়ে ভালোই সুফল পেলেন। একপর্যায়ে মনে হলো, তার গুণধর পুত্র যদি পাকুন্দিয়ার কবিরাজের মতো কঠিন বিমারের লোকজনকে মাইকে ফুঁ দিয়ে পানি পড়া দেয়, উপকার পেতেও পারে!

মা একদিন সিফাতের সঙ্গে বাজিতে মাতলেন- ‘তোমার খালামণির বিয়ে হবে কার সঙ্গে- ডাক্তার নাকি ইঞ্জিনিয়ার পাত্র?’
রায় দেওয়ার তিন মাস পরেই প্রস্তাবিত ডাক্তারের সঙ্গেই বিয়ে হয়ে গেল খালামণির। সব শুনে নতুন খালু বললেন, ‘সিফাতকে জ্যোতিষ সমিতির সভাপতি বানিয়ে দেওয়া উচিত!’

খালামণি কটাক্ষ হেনে বললেন, ‘আরে নাহ! ওকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপদেষ্টা বানানো হোক। তাতে সঠিক হিসাবটা অন্তত পাওয়া যাবে!’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper