গবেষণার বাতিঘর আইবিএস
আলী ইউনুস হৃদয়
🕐 ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০১৯
বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও মানুষের জীবনধারা সম্পর্কিত বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস)। দীর্ঘ চার দশক ধরে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ইতিহাস, সমাজ, অর্থনীতি, বাণিজ্য, মানববিদ্যা ও জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইনস্টিটিউটটি দেশে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও দক্ষ গবেষক তৈরির কাজ করছে। এর ফলে দেশে-বিদেশে আইবিএস গবেষণার বাতিঘর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
আইবিএস সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ আগ্রহে ১৯৭৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের আওতায় আইবিএস প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক খান সারোয়ার মুরশিদ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের তৃতীয় তলায় আইবিএস আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ইনস্টিটিউটের প্রথম পরিচালক হিসেবে অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল কাদের দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৮২ সালে বিনোদপুর গেটের পূর্ব দিকে আইবিএসের নিজস্ব জায়গায় হোস্টেল ভবন নির্মিত হলে লাইব্রেরি থেকে অফিস স্থানান্তরিত হয়। পরে ১৯৯০ সালে আইবিএস ভবন নির্মাণ শেষ হলে হোস্টেল থেকে আইবিএস অফিস সেখানে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে ইনস্টিটিউটের যাবতীয় কার্যক্রম এখান থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে আমেরিকার বিখ্যাত ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় অধ্যাপক ক্লারেন্স মেলোনি, ডেভিড কফ গবেষণা ও শিক্ষকতা করেছেন। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রফেসর আব্দুল করিম তার দুই খণ্ডের ‘বাংলার ইতিহাস (মোঘল আমল)’ এখান থেকেই রচনা করেছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কলা, সামাজিক, বাণিজ্য, ভূগোল, মনোবিজ্ঞান, কৃষি ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৭৬ জন এমফিল ও ৩৪৭ জন পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। এরমধ্যে অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ, অধ্যাপক আব্দুল খালেক, অধ্যাপক পিসি সরকার ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এখানে গবেষণা করেছেন। আইবিএস-এ বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন।
তারা হলেন পরিচালক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, অধ্যাপক ড. স্বরোচিষ সরকার, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজিমুল হক, সহযোগী অধ্যাপক ড. এম. মোস্তফা কামাল ও ড. এম. কামরুজ্জামান। প্রতি বছর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ৩০ জন গবেষক ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। এমফিল গবেষক প্রতি মাসে চার হাজার ও পিএইচডি গবেষক পাঁচ হাজার টাকা ফেলোশিপ পান। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও ফেলোশিপ পেয়ে থাকেন। নিয়মিত ফেলোশিপের বাইরে রয়েছে গবেষণা পুরস্কার ও প্রণোদনা। গবেষকদের জন্য হোস্টেলে আবাসনের সুবিধা রয়েছে। ইনস্টিটিউটে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগসহ কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। অ্যালামনাসদের অংশগ্রহণে গঠিত আইবিএস অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়। আইবিএস পরিচালনার জন্য ইনস্টিটিউট কমিটি, বোর্ড অব স্টাডিজ ও পরিচালকম-লী রয়েছে। এখানে ভর্তিপ্রাপ্ত গবেষকদের বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষণার কাজ শেখানো হয়। এমফিল, পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য প্রত্যেক গবেষককে এক বছরের বাধ্যতামূলক কোর্সওয়ার্কে অংশগ্রহণ করতে হয়। এই কোর্সওয়ার্কে বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশের ইতিহাস, বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতির পাশাপাশি গবেষণা পদ্ধতির বিভিন্ন দিক শেখানো হয়।