ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পোশাক রপ্তানিতে বিপর্যয়

জাফর আহমদ
🕐 ১০:১৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৫, ২০১৯

তৈরি পোশাক রপ্তানি হ্রাস সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যেখানে অব্যাহতভাবে রপ্তানি বেড়ে যাচ্ছিল সেখানে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর চার মাসে রপ্তানি কমে গেছে প্রায় ৭ শতাংশ। এ অবস্থা তৈরি পোশাক শিল্পে নজিরবিহীন বিপর্যয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবস্থা উত্তরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জরুরি বৈঠক ডেকেছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ১০ দশমিক ৫৭৭ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছিল ১১ দশমিক ৩৩৩ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রভাব ফেলেছে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ওপর। গত বছরের জুলাই-অক্টোবর চার মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ১৩ দশমিক ৬৫১ বিলিয়ন ডলার। এ বছর আয় কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭২১ বিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি হ্রাসের হার ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। রপ্তানি হ্রাসে করণীয় নির্ধারণে জরুরি বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে তৈরি পোশাক খাতের দুই উদ্যোক্তা সমিতি বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ, রপ্তানিকারক সমিতি, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ অন্যান্য অংশীজনরা উপস্থিত থাকবেন।

তৈরি পোশাক শিল্পের এই দুঃসময় থেকে উত্তরণে বড় ধরনের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসা জরুরি বলে মনে করছেন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা নেতা শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে অঘোষিত অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। মন্দা মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিরা নিজস্ব মুদ্রা অবমূল্যায়ন করেছে।

বিশেষ করে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার আমাদের সম্ভাব্য কার্যাদেশগুলো নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের বাড়তি কাজগুলো হারিয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপে মানুষ তৈরি পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে এ কারণে আমাদের যে প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল সেটা হচ্ছে না।

মোট রপ্তানির ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ আসে তৈরি পোশাক থেকে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই শিল্পে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ রয়েছে নারী। যারা এসেছে গ্রাম থেকে। কর্মসংস্থানের এই ভৌগোলিক বিভাজন দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নারী ক্ষমতায়নেও ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প। পাশাপাশি ব্যাংক, বিমা, পরিবহন, শিক্ষা খাত, নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতকে প্রভাবিত করেছে এই শিল্প।

সরকারী বিনিয়োগ ছাড়াও এলাকাভিত্তিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে এ খাত। ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানির এই নেতিবাচক ধারা সূচিত হওয়ার কারণে অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। তারা মনে করছে তৈরি পোশাক রপ্তানির নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে উন্নয়নের যে ধারা অব্যাহত আছে, তা হোঁচট খাবে। যদিও শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দেওয়ার ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাত নিয়ে সমালোচনা আছে। বলা হয় শ্রমিকদের অব্যাহতভাবে শোষণ করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

তৈরি পোশাক রপ্তানির এই নেতিবাচক ধারাতে চিন্তিত নীট তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এ ব্যাপারে বিকেএমইএ-এর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক যাত্রা শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় চার দশকে কখনো রপ্তানি আয়ে এমন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়নি।

২০০৮-৯ অর্থবছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রপ্তানি কমলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক হয়নি। সে বছর রপ্তানি আয় হয়েছিল দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু এ বছর ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ রপ্তানি আয় হ্রাসের বিষয়টি নজিরবিহীন। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারানো, ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার কারণে রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে। আবার কম দামে তৈরি পোশাক ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে না পারার কারণেও ক্রেতারা বিদেশে চলে যাচ্ছে। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তৈরি পোশাকে মূল্য সংযোজনে সর্বনিম্ন মাত্রা ২০ শতাংশের ওপর ১০ শতাংশ হারে টাকার অবমূল্যায়ন করতে হবে। তাহলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখনো শ্রমঘন শিল্প। পুরোপুরি যন্ত্রায়ন হয়নি। চীনে ১০০ শ্রমিক যে উৎপাদন করে, একই উৎপাদন করতে বাংলাদেশে লাগে ২৫০ জন। বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তৈরি পোশাকের এই ক্রান্তিকাল মোকাবেলা করার জন্য শ্রমিকদেরও ধৈর্য্য ধরতে হবে। আবার উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন মান ও ফ্যাশনের স্যাস্পল তৈরি করে ক্রেতাদের কাছে যেতে হবে। মার্কেটিংয়ে আরও দক্ষ হতে হবে।

 
Electronic Paper