ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কিপটের শোক

ইসমত জাহান লিমা
🕐 ৮:৪২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৪, ২০১৯

শফিক সাহেব পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। ছেলেমেয়ের পড়ালেখার সুবিধার্থে পরিবারসহ শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির জোরে সচ্ছল জীবনযাপন করেন। কিন্তু স্বভাবে কিপটে প্রকৃতির মানুষ। একটা টাকা এদিক-ওদিক হলে চিন্তায় ঘুম হয় না! এ কারণে ছাত্র-শিক্ষকরা তাকে কিপটে মাস্টার নামেই চেনেন। অন্যদিকে শফিক সাহেবের স্ত্রী আলফা বেগম দয়ালু। মানুষকে খাওয়াতে ভালোবাসেন।

সেদিন একটা বিশেষ কাজে তিনি গ্রামের বাড়িতে যান। পুরনো কাজের ছেলে মতিনকে নিয়ে গ্রামের বাজারে গিয়ে দেখেন শহরের তুলনায় কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে মাছ, দেশি মুরগি, দুধ, ডিমের মতো আমিষের দামও অনেক কম। মনে মনে হিসাব কষলেন- এখান থেকে বাজার করলে অনেক টাকা বাঁচবে! ভাবলেন, শহরে যাওয়ার আগে এখান থেকেই বাজার-সওদা কিনে নেবেন। ফ্রিজে রেখে অনেকদিন খাওয়া যাবে। বাজারের টাকা বাঁচবে, বাড়তি সময়ও নষ্ট হবে না।

মতিনকে নিয়ে অনেক বাজার করলেন। বাসায় এলে তার স্ত্রী আলফা বেগম বাজার দেখে থ বনে গেলেন। কিপটে মানুষের এত উন্নতি কীভাবে হলো! শফিক সাহেব স্ত্রীকে সব খুলে বললেন। ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে টিভি অন করলে স্ক্রল চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল! এ সময় কারেন্টও চলে গেল। তিনি স্ত্রীকে ডেকে বললেন, খবরে দেখলাম কারিগরি ত্রুটির কারণে আগামী চার দিন শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। আমি যে এতগুলো বাজার করলাম এসব তো এখন ফ্রিজে রাখা যাবে না। সব নষ্ট!
আলফা বেগম ভেবে বললেন, এতকিছু কষ্ট করে যখন আনলে, কারেন্ট না থাকায় ফ্রিজে রাখলেও পচে যাবে। তারচেয়ে এক কাজ করি, আমার বান্ধবী শায়লার বাসায় আমরা বেশ ক’বার খেয়ে এলেও ওদের একদিনও দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তোমার কলিগদেরও আসতে বল। কিপটে বদনাম ঘুচবে। এক ঢিলে দুই পাখি!

শফিক সাহেব অনেক ভেবেচিন্তে দেখলেন এছাড়া উপায় নেই। অগত্যা সবাইকে দুপুরের দাওয়াত দিলেন। শুক্রবার হওয়ায় দুপুরের দিকে সবাই উপস্থিত হলো। এত টাকা খরচ করে গ্রাম থেকে শহরে আনতে মতিনের আসা-যাওয়ার ভাড়া দেওয়া হলো, আবার ফোনের টাকা খরচ করে সবাইকে জানানো হলো। এখন সব অন্যদের খাওয়াতে হবে! ভাবতেই মাথা চিনচিন করছিল। এদিকে দীর্ঘদিন কাউকে খাওয়াতে না পারা আলফা বেগম বেজায় খুশি।

সবার খাওয়া যখন শেষের দিকে হুট করে কারেন্ট এলো! শফিক সাহেব তড়িঘড়ি করে দৌড়ে ডাইনিংয়ে এসে ফ্রিজে রাখার মতো আর রান্না করা কিছু অবশিষ্ট পেলেন না! মুখ অন্ধকার, বুক ফেটে পানি আসতে চাইল! কিছুক্ষণ পরে আলফা বেগম ড্রয়িংরুমের দরজায় এসে দেখেন, শফিক সাহেব টিভির দিকে তাকিয়ে আছে টিস্যু দিয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি মুছছেন! দেখে মুচকি হেসে পাশের রুমে গেলেন আলফা বেগম। তিনি নিশ্চিত, এত টাকা নষ্টের শোকে আজ রাতে শফিক সাহেবের ঘুম হবে না।
আসলে স্ক্রলে লেখা ছিল- কারিগরি ত্রুটির কারণে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper