ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সিস্টেম অব ভাঁওতাবাজি

ইরফান তানভীর
🕐 ৮:৩১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৪, ২০১৯

ঠোঙামারা খেলার মাঠে এসবি (সুবিধাবাদী) দলীয় নির্বাচনী প্রতীক আম মার্কার নেতাকর্মীরা মনোনয়ন পেপার পেয়ে উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিমায় পোজ নিচ্ছে। কেউ হাসতে হাসতে কেশেও দিচ্ছে। দলনেতা একটু বিব্রত। এদের নিয়ে ক্ষমতায় গেলে কী হবে! আল্লাহই জানে।

কিছুক্ষণ পর এক বিশাল সমাবেশের মতো শোরগোল পড়ে গেল মাঠে। দলীয় আম নেতা বিমল রায় চৌধুরী বিজয়ী হওয়ার পরের সব পরিকল্পনা একে একে ব্রিফিং করতে শুরু করলেন। এলাকার যা উন্নয়ন হয়েছে, এসবের কোনো দরকার নেই। শুধু শুধু অপচয়! আমরা ক্ষমতায় এলে সব রাস্তাঘাট খুঁড়িয়ে দেব। এতে যানবাহন ধীরে চলবে। যার ফলে রাস্তায় দুর্ঘটনাজনিত সমস্যার সমাধানও হবে। বাঙালি ফিরে পাবে তার হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ জীবন। এতটুকু বলতেই পেছন থেকে কর্মী টিকিট পাওয়া ৫-৬ ফুট লম্বা সাইজের শ্যাম চামড়ার ছেলেটা সহমত ভাই বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে সবাই ঠিক ঠিক শব্দ ছুড়ে দিল জনভর্তি মাঠে। নেতা গর্বোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে হাসলেন। ওদিকে নেতার বউ ফোন করে নতুন করে সংলাপের তারিখ নির্ধারণ করলেন। আজকের মধ্যে সমঝোতায় আসা চাই। বউয়ের সোজা কথা- হয় তুমি থাকবে, না হয় আমি! আমি বাপের বাড়ি চললাম। পাশের বাসার ভাবি আজ বিকেলে নতুন ফ্রিজ কিনেছে। আমাদের চেয়েও বড়। আর তুমি কিনেছো মনোনয়ন! ওটা ধুয়ে পানি খাও...। এত এত মানসিক প্রেশারের পরও নেতা তার ওয়াদামতো সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে চললেন। ওয়াদা বলে কথা। যদিও এ বাক্যচ্ছেদে পরবর্তী সময়ে স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ব্যবহার হবে। কোনোরকম টেনেটুনে নির্বাচনে জয়ী হতে পারলেই কেল্লাফতে। তবে আজকের মহান দিনে এর যথাযথ ব্যবহার চাই। মনোনয়ন পেয়েছে। এটা চাট্টিখানি কথা নয়। মানুষের ভাগ্য আর নদীর মাছ কখন কবে পক্ষে আসে, বলা ভার! সামান্য একটা বিষয় (আম নেতা) বিমল রায়ের রাজনৈতিক জীবনে যে এতটা প্রভাব ফেলবে, আগে বোঝেননি! সেদিন রাগ করেই তিনি বউয়ের কথা রাখেননি। তার সোজাসাপ্টা ভাষণ- তুমি দরকার হলে খাবারের মেন্যু আরও বাড়িয়ে নাও। টাকি মাছের ঝোলের সঙ্গে বেগুন ভর্তাও রাখতে পারো। তবে ফ্রিজ তুমি পাচ্ছ না। ঠিক এ বিষয়টা কীভাবে কখন পিসির (পলিটিক্স সিজার) গোড়া পর্যন্ত পৌঁছে গেল তা নেতা বিমল রায় বলতে পারেন না! আজ সকালে নেতা সুভাষের টং দোকানে আয়েশ করে চা খেতে খেতে বললেন- জানিস সুভাষ, আমি যখন এমপি হব তখন তোর দোকানটা রঙিন টিন দিয়ে সাজিয়ে দেব। দেখতে কী দারুণ দেখাবে। তাই না রে? সুভাষ মাথা ঝাঁকায়।


এরই মধ্যে ফোনকলে জালালের নামটা ভেসে উঠল। ছেলেটা কোনো না কোনো দুঃসংবাদ জানাতেই ফোন করে। ছেলেটা কোন রাশির ভাবতে ভাবতে ভয় গলা নিয়ে নেতা জানতে চাইল, কিছু বলবি রে? জালাল অপেক্ষা না নিয়েই জানিয়ে দিল- ম্যাডামকে আই মিন নেতা তার বউকে সময়ের মধ্যে ফ্রিজ কিনে না দেওয়া তার মনোনয়ন বৈধ হিসেবে মনোনীত হয়নি। তার মানে অবৈধ! নেতাজি বেচারা কাঁদতেও পারলেন না। হাসতেও পারলেন না। হেঁড়ে গলায় বললেন, কী বলিস জালাল! আমি তো কিনে দেব বলেছি। তাহলে...। চেঁচামেচি করে কে যেন বলে উঠল, এটা নির্ঘাত ষড়যন্ত্র। যাকে সিস্টেম অব ভাঁওতাবাজি বলে। আমরা এর সুরাহা চাই। বিমল রায় পেছন ফিরে দেখেন কর্মী ছেলেটা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কে জানে, সে এখন আর থাকবে কি-না।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper