দুই শতাংশ হারে ঘোষণা
প্রণোদনার ছোঁয়া প্রবাসী আয়ে
জাফর আহমদ
🕐 ১০:২৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০২, ২০১৯
বিদেশের শ্রমবাজারে কাজ করা শ্রমজীবীরা তাদের রোজগারের অর্থ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ পথে পাঠান। এতে রেমিট্যান্সের অর্থ দেশে পরিজনের কাছে এলেও তা রিজার্ভে যোগ হয় না। রিজার্ভে যুক্ত হয় শুধু বৈধপথে পাঠানো অর্থ। এজন্য সরকার বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে। প্রবাসী আয়ের তিন মাসের হিসাবে প্রণোদনা ঘোষণার প্রভাব মিলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৪ দশমিক ৫১১ বিলিয়ন ডলার। এই রেমিট্যান্স আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪১ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন ডলার বেশি। যা ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল ৩ দশমিক ৮৬৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বরের চেয়ে বেশি এসেছে প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি এসেছে। ওই বছর রেমিট্যান্স এসেছিল ৩ দশমিক ৩৯১ বিলিয়ন ডলার।
দেশের বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎসটি হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো আয়। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখ যায় প্রতি বছর রেমিট্যান্স বেড়েছে। ২০০৮-৯ অর্থবছরের পর থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ১০ বিলিয়ন অতিক্রম করে। ওই বছর রেমিট্যান্স এসেছিল ৯ দশমিক বিলিয়ন ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০ দশমিক ৯৮৭ বিলিয়ন ডলার।
এরপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ১৬ হাজার ৪১৯ বিলিয়ন ডলার। মাঝে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক মন্দা, প্রবাসীদের আয়ে আয়কর বসানো ও রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ির কারণে রেমিট্যান্স কমে যায়। এরপর রেমিট্যান্স পাঠানোতে সরকারের বিভিন্নমুখি উদ্যোগের ফলে আবার রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যায়। কিন্তু যেভাবে প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেভাবে বাড়েনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে যে পরিমাণ টাকা দেশে আসে, তার চেয়ে বেশি অর্থ আসে হুন্ডির মাধ্যমে। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা এলে সরাসরি বিদেশে অবস্থানরত হুন্ডি কারবারিরা বিদেশে অবস্থান করে। সেখান থেকে তারা অর্থ সংগ্রহ করে বিদেশেই রেখে দেয়। আর দেশে অবস্থানরত তার প্রতিনিধিরা প্রবাসীদের কাছে অর্থ পৌঁছে দেয়।
এক্ষেত্রে প্রবাসীরা স্বজনদের কাছে টাকা পাঠালেও তা দেশে আসে না, বিদেশেই ওই টাকা থেকে যায়। দেশে প্রবাসীর স্বজনের কাছে পৌঁছে দেশে থেকেই। অন্যদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধপথে অর্থ এলে ওই ডলার বা বিদেশি মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রেখে তার স্বজনের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। এর ফলে একদিকে ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলারের মাধ্যমে রিজার্ভ ভারী হচ্ছে। পাশাপাশি প্রবাসীর স্বজনের কাছে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। এজন্য সরকার প্রবাসীদের বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
সর্বশেষ চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় সরকার বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে। এবং এক হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্স দেশে আনার ক্ষেত্রে তার টাকার উৎস জানতে চাওয়া হবে না। পাশাপাশি আগের বছরগুলো বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে সরকারের যেসব প্রণোদনা-কার্যক্রম চালু ছিল সেগুলোও চলমান থাকবে।
এর উদ্যোগের ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহে কিছুটা ইতিবাচক সাড়া পড়ে। যদিও যে হারে প্রত্যাশা করা হয়েছিল সে হারে সাড়া পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকেরই একটি অনুসন্ধানে পাওয়া গিয়েছিল প্রবাসীদের কাছে টাকা পাঠানোর সময় ধারে কাছে সহজ কোনো মাধ্যম না পাওয়া এবং এর উল্টো দিকে হুন্ডি কারবারীরা ধারে কাছে থাকার কারণে বৈধ এর চেয়ে অবৈধ পথে বেশি উৎসাহী হয়।