জেলহত্যা দিবস আজ
ইতিহাসের বেদনাময় অধ্যায়
সম্পাদকীয়-১
🕐 ৯:১০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০৩, ২০১৯
বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক কালো দিন আছে। সেই কালো দিনগুলো আমাদের আচ্ছন্ন করে বেদনায়, মুহ্যমান করে শোকে। তেমনই বেদনার্ত এক শোকের দিন ৩ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মধ্যরাতে অশুভ শক্তির চক্রান্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী দেশের জাতীয় চার নেতাকে।
আজ আমরা পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।
জাতীয় এই চার নেতাকে হত্যার আগে একই বছরের ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ এই চার সহকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্যু-পাল্টা ক্যুর রক্তাক্ত অধ্যায়ে মানবতার শত্রু ও বঙ্গবন্ধুর হন্তারক ওই একই পরাজিত শক্তির দোসর বিপথগামী কিছু সেনাসদস্য চার নেতাকে হত্যা করে। সেই থেকে প্রতি বছরের মতো এ দিনটি জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জেল হত্যাকাণ্ড ইতিহাসের একটি নৃশংসতম ঘটনা। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কাজ করেছে সুদূরপ্রসারী হীন উদ্দেশ্য ও ষড়যন্ত্র। দেশকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা, দেশকে রাজনীতিহীন করার একটা অপচেষ্টা ছিল ঘাতকচক্রের। কেমন করে রাতের অন্ধকারে কারাগারের নিরাপত্তা ভেদ করে ঘাতকচক্র অস্ত্র হাতে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করল, সেটা আজো একটি বড় প্রশ্ন।
স্বাধীন দেশটিকে কোনোভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্রে আন্তর্জাতিক শক্তির সঙ্গে শুরু থেকেই হাত মেলায় এই স্বাধীনতা বিরোধীচক্র। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে ছিল যে গভীর ষড়যন্ত্র, তারই অংশ হিসেবে কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। জেল হত্যাকাণ্ডের পর ওই সময়ই লালবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার-প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়।
১৯৯৬ সালে জেলহত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করার পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ২০ আসামির মধ্যে ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাস্তি এবং অন্য পাঁচ জনকে খালাস দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে কেবল রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যদের মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফারুক রহমানের ফাঁসি হয়েছে। জেলহত্যা মামলার রায় কার্যকর করার ভেতর দিয়ে ইতিহাসের আরেক কলঙ্ক থেকে জাতি মুক্ত হবে-এটাই সবার প্রত্যাশা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228