আট টন ডিজেল কর্ণফুলীতে
চট্টগ্রাম ব্যুরো
🕐 ৮:১৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ডলফিন জেটি সংলগ্ন এলাকায় জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি তেলের ট্যাঙ্কার ফুটো হয়েছে। এতে ট্যাঙ্কারে থাকা জ্বালানি তেল নদী ও সংযুক্ত খালে ছড়িয়ে পড়ছে। গত শুক্রবার ভোরে ট্যাঙ্কারটি ফুটো হয়ে প্রায় ১০ টন ডিজেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত আট টনের মতো তেল নদী থেকে তোলা হয়েছে বলে দাবি বন্দর কর্তৃপক্ষের।
জানা যায়, গত শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে কর্ণফুলীর ডলফিন জেটি-৩-এর কাছে নদীতে ‘দেশ-১’ নামক তেলের ট্যাঙ্কারটি ‘সিটি-৩৪’ নামক একটি জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে ফুটো হয়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘দেশ-১’ নামের তেলবাহী জাহাজটি অবস্থান পরিবর্তনের সময় অপর জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগে।
এতে ‘দেশ-১’ ফুটো হয়ে তা থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ে। ওই ট্যাঙ্কারে ১২০০ টন ডিজেল ছিল। পদ্মা জেটি থেকে তেল নিয়ে সেটির খুলনা যাওয়ার কথা ছিল। দুর্ঘটনার পর আট টনের মতো তেল নদীতে চলে যায়। পরে নদী থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ তেল তুলে নেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপরই তেল অপসারণ শুরু করা হয়েছিল জানিয়ে বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেন, “শুক্রবার ভোরে ঘটনার সময় কাছাকাছি ছিল আমাদের তেল অপসারণকারী জাহাজ ‘বে ক্লিনার-২’। ফলে ছড়িয়ে পড়া তেল ‘স্ক্রিনিং’ পদ্ধতিতে অপসারণ সম্ভব হয়েছে। এরপর দ্রুততম সময়ে বে ক্লিনার-১ এবং সাপোর্ট ভেসেল হিসেবে কাণ্ডারি-৮, ১০ ও ১১ কাজ শুরু করে। আট টন তেল অপসারণ সম্ভব হয়েছে। কাজ চলছে। শেষ ফোঁটা পর্যন্ত অপসারণের চেষ্টা করব।”
গতকাল বিকেলে বন্দর চ্যানেলে আর কোনো ভাসমান তেল নেই দাবি করেন ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘জোয়ার-ভাটার কারণে কিছু তেল বিভিন্ন জেটিতে জাহাজের গায়ে লেগে যায়।’
তবে, নাম প্রকাশ না করে বন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জোয়ারের সময় তেলের কিছু অংশ নদীর ভাটিতে এবং সংলগ্ন খালগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আবার ভাটার সময় মোহনা হয়ে কিছু তেল সাগরেও ছড়িয়েছে।’
এদিকে নদীতে তেল ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সংযুক্ত দাশগুপ্তা বলেন, ‘ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। পরিবেশ দূষণের আলামত পাওয়া গেছে। দুটি জাহাজের মালিকপক্ষকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। তাদের আগামীকাল (আজ) শুনানির জন্য হাজির হতে বলা হয়েছে।’
এদিকে, জাহাজ দুটি আটক করা হয়েছে জানিয়ে বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘কোস্টগার্ড তাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’ অন্যদিকে এভাবে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে কর্ণফুলী দূষণে সেখানকার পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ইদ্রিস আলী।
তিনি বলেন, ‘পানির উপরিভাগে জ্বালানি তেল ছড়ানোয় তা মাছ, নদীতে থাকা ক্ষুদ্র প্রাণী এবং বাস্তুসংস্থানের মারাত্মক ক্ষতি হবে। যতক্ষণ তেল থাকবে ততক্ষণ জোয়ার-ভাটায় এগুলো নদীতে বারবার আসতে থাকবে। কর্ণফুলী নদীতে বছরে এ রকম দু-চারটা ঘটনা ঘটছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।’