ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জে সরকার

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৫০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০১৯

বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনাতে চ্যালেঞ্জ নিতে চায় সরকার। ২০১০ সালের পর সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি অপচয়ও কমিয়ে এনেছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের ১০ বছরে সিসটেম লস কমেছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। বিদ্যুৎ বিল বাকির হার কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। মূলত ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।

২০১০ সাল নাগাদ মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় অংশ বিতরণ ও সঞ্চালনে অপচয় হয়। বিপুল এই বিদ্যুৎ চুরি, বিতরণে দুর্নীতি ও উৎপাদন-বিতরণ কার্যক্রমে নষ্ট হতো। অপচয় নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার কারণে ‘সিসটেম লস’ নাম দিয়ে মেনে নেওয়ার রীতি চালু হয়েছিল।

যুগ্ম সচিব এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের মুখপাত্র আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান জানান, ২০১০ সাল থেকে বিদ্যুতের অপচয় রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পর পুরোপুরি কমানো সম্ভব হয়নি। তবে সহনীয় পর্যায়ে ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে। বর্তমানে সিসটেম লসের হার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিতরণ অপচয় হতো ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং সঞ্চালনে ও বিতরণে মিলে অপচয় হতো ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ; ২০১০-১১ অর্থবছরে বিতরণে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং সঞ্চালন বিতরণে মোট অপচয় ১৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য হারে অপচয় কমে।

এ সময়ে বিতরণে অপচয় কমে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ; সঞ্চালনে বিতরণে অপচয় নামে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অপচয় আরও কমে। এ বছর বিতরণে অপচয় নামে ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং সঞ্চালন ও বিতরণে অপচয় নামে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

তবে প্রিপেইড মিটার বসানো প্রাক্কলন অর্জিত হলে আগামীতে সিসটেম লস আরও কমে আসবে বলে মনে করেন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বণ্টনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে সারা দেশে ১০ লাখ প্রিপেইড মিটার বসানো হবে। এর আগে বসানো হয়েছে ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮০৩টি। ২০২১ সালের মধ্যে সারা দেশে দুই কোটি প্রিপেইড মিটার বসানো হবে। এ সংযোগ হলে সারা দেশের সব মিটারের ৮৬ শতাংশের প্রিপেইড মিটারে স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন হবে।

বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মিটার রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে অনেক দূরে বণ্টন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কারণে অপচয় হওয়ার বিদ্যুৎ ক্ষতি কমানো যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়।

প্রিপেইড মিটারে স্থানান্তরের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিলের বাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। এ জন্য বাকি কমিয়ে আনতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের নানা চেষ্টার ফলে কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে। তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিলের গড় বাকির হার ছিল প্রায় আড়াই মাস।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিল বাকির হার কমে দাঁড়ায় ২ মাস। সর্বশেষ ২০১৯ সালের শুরুর দিকে এ হার কমে দাঁড়ায়। বিদ্যুৎ বিলের বাকির এ হার আরও কমাতে চায়।

১০ বছরে সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১৩৮ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো ৬ হাজার ৬০৬ মেগাওয়াট, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন উঠে ১০ হাজার ৯৫৮ মেগাওয়াট। বিতরণ ও সঞ্চালনে যে অগ্রগতি হয়েছে তা উৎপাদনের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বলে মনে করছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

 
Electronic Paper