ঘ্যানঘ্যানানির বাজনা
গোলাম মোর্তুজা
🕐 ৮:১৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৯
জীবন মানেই যুদ্ধ। ঢাল, তলোয়ার, লাঠিসোঁটাবিহীন যুদ্ধ। জীবনের কাজ ফুল ফোটানো, ফুলের সৌরভ নেওয়া নয়। ফুল নাকি এমনিতেই সৌরভ ছড়ায় রাত-বিরাতে। এমনকি সকাল সাঁঝে, ধনী-নির্ধন, ইতর-ভদ্র সবার মাঝে।
চ্যাপটাপুর গ্রামের চাপাবাজ বিদিক। কাজ করেনি সময়মাফিক। বাবা দ্বীপ ছেলে বিদিকের বিয়ে দিয়েছেন পাশের খ্যামটাপুরে। বউ মাশাল্লাহ ভালো।
চেহারা শুধু একটু কালো। কালোই নাকি জগতের আলো। এক দিন বিদিক স্ত্রী শান্তিকে বলল, ‘বাপের বাড়ি যাও। কিছু টাকা চাও। তুমি তো এসেছো ফাও ফাও।’ স্বামী বিদিকের কথায়, স্ত্রী অশান্ত বেজায়। বলল, ‘লজ্জা করে না এমন কথা বলতে। বাবা আমার নাজেহাল দিতে দিতে। একটি পয়সাও পাবে না।
গতর খাটাও নইলে থাকব না।’ স্ত্রীর কথাতে মাথা গেল চেতে। বিদিক পারে না নিজেকে সামলাতে। স্ত্রী শান্তি শান্ত হতে জানে না। চলল তিন দিন ধরে একই ঘ্যানঘ্যানানির বাজনা।
অতিষ্ঠ বিদিক। কাজের সন্ধানে চলে চতুর্দিক। শিক্ষা সামান্য-দীক্ষা অসামান্য। এসব দিয়ে কাজ পাওয়া দুষ্কর, সময় এ কথায় বলে বারবার। তবুও বিদিক কাজ খুঁজে খুঁজে, চলল পথ বুঝে বুঝে। বৌ শান্তি তো দুনিয়া শান্তি। প্রয়োজন না মেটালেই খিস্তি। পেলেই প্রশান্তির ব্যাপ্তি। খুঁজে খুঁজে পেল এক কাজ। এ এক আজব সমাজ। অটোরিকশার চালক। গাড়ির নাম আলোর পালক। মালিক চমক।
চালাতে চালাতে চালক হয়ে গেল বিদিক। দিনের বেলায় অটো চালাতে লাগে লজ্জা, রাতের বেলায় তাই চালক সাজা। স্টিয়ারিং ধরলেই চালক হওয়া যায়। রাতে চলে গাড়ি বেড়ে যায় আয়। স্ত্রীকে করতে খুশি, এক দিন বলল, ‘তোমাকে ফোন দেব উপহার, কথা বলবে প্রীতিহার।’ শান্তির মনে বাতাস আসে আনমনে। শান্তি বলল, ‘তুমি খুব ভালো, এবার থামো। কবে দিচ্ছ বলো?’
স্বামী বিদিক বলল, ‘এই তো দেব সামনের মাসে, রাতের বাজার খুব কালচে।’ অভিযোগের সুরে স্ত্রী বলল, ‘শুধু তোমার বাহানা। রাত কালচে ওসব বুঝি না। আমার ফোন চাই।’ মাস গেল চলে। ফোন পেল শান্তি। এক রাতে বিদিক ভাবল গাড়ি চালাতে যাবে না। বাড়িতেই থাকবে, স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাবে। না তা হলো না। স্ত্রী ব্যস্ত ফাস বুকে (ফেসবুকে)। বিদিকও ক্লান্ত জীবনযুদ্ধে!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228