ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাংলা ভাষা রক্ষায় অভিনব প্রচারণা

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৯

ভারতের কলকাতায় গত ক’দিন ধরে অনেক জায়গাতেই লাগানো হয়েছে বাংলা ভাষা নিয়ে বিভিন্ন ব্যানার। সেখানে দেওয়া আছে নানা হিন্দি-উর্দু শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। কলকাতার অনেক বাঙালি এখন তাদের প্রতিদিনের কথায় এসব হিন্দি-উর্দু শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। কোনোটাতে লেখা ‘বঙ্গাল এর চেয়ে বাংলা ভালো’, ‘সওরভের থেকে সৌরভ ভালো’, কোনোয় লেখা ‘জলেবির থেকে জিলিপি ভালো’, কিংবা পরাঠার থেকে পরোটা ভালো’।

গতকাল রোববার বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে কলকাতায় হিন্দি ও উর্দুর আগ্রাসন থেকে বাংলা ভাষার রক্ষায় এমন অভিনব প্রচারণার তথ্য জানানো হয়েছে। অনেক বাংলাভাষী মানুষ নিয়মিত কথোপকথনের সময়ে যেসব হিন্দি বা উর্দু শব্দ মিশিয়ে বাংলা বলেন, সেগুলোই তুলে ধরে হোর্ডিংগুলোতে লেখা হয়েছে ‘নিজের ভাষা নিজের থাক’। এ সব ব্যানার কারা লাগিয়েছে, তা কোথাও উল্লেখ নেই। তবে বাংলা ভাষার ওপরে কথিত হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রচার চালায়, এরকম একটি সংগঠন বাংলা পক্ষ অনেকটা এ ধরনেরই প্রচার চালিয়ে আসছে বেশ ক’বছর ধরে।

এই হোর্ডিং তাদের লাগানো কী না, তা নিয়ে সংগঠনটির প্রধান গর্গ চ্যাটার্জি বলেন, আমাদের চিন্তাধারাকে সমর্থন করেন, এরকম কেউ লাগিয়েছেন হয়তো। তবে আমরা হোর্ডিংয়ের বিষয়বস্তুকে সমর্থন করি। এই যে বানান বদলে যাওয়া, উচ্চারণ বদলে যাওয়া, ভাষার ওপরে আগ্রাসন- এগুলো আসলে বাংলার চাকরি, বাজার, পুঁজি আর জমি- তার ওপরে হিন্দি-উর্দুর আগ্রাসন। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই হোর্ডিংগুলোতে।

কলকাতায় রাস্তাঘাটে নিয়মিত শোনা যায়, বহু মানুষ বাংলার মধ্যে হিন্দি-উর্দু আর ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলছেন। কেউ অজান্তে, কেউ জেনে-বুঝেই বলছেন। কলকাতার বাসিন্দা সুজাতা ঘোষ বলছিলেন, বাংলার সঙ্গে হিন্দি বা উর্দু মিশিয়ে যে ভাষায় কথা বলতে দেখেন তিনি নিয়মিত, তা যথেষ্ট কানে লাগে তার।

তিনি বলেন, যখন রাস্তাঘাটে কথাগুলো কানে আসে, তার মধ্যে অনেক হিন্দি-উর্দু শব্দ দেখি অনেকে অবলীলায় বলে চলেন। যেমন ডানে-বামে না বলে ডাহিনে-বাঁয়ে বলেন, অথবা ‘কেননা’ শব্দটার বদলে হিন্দির অনুকরণে ‘কেন কি’ অথবা সরাসরি হিন্দিতেই ‘কিঁউ কি’ বলেন। ছোটরাও এই ধরনের জগাখিচুড়ি ভাষা বলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

সহেলী চক্রবর্তী বলছিলেন, শুধু ভাষার ব্যবহার নয়, বাইরের প্রভাব পড়েছে পোশাক থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাস, সব কিছুতেই। তার কথায়, বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক-আশাক, খাবার সব কিছুতেই যেন বাইরের একটা প্রভাব চলে এসেছে খুব বেশি করে। বাইরে থেকে যেন চাপিয়ে দিচ্ছে কেউ সব কিছু। আমরা আমাদের জায়গাগুলোই হারিয়ে ফেলছি। তার জন্যই সচেতন করতেই এ ধরনের হোর্ডিং লাগানো হচ্ছে।

অন্যদিকে কলকাতায় জন্ম নেওয়া, বড় হওয়া আর এখন ব্যবসায়ী মানিত সিং বলছিলেন, হিন্দিভাষী বন্ধুবান্ধবের থেকে বাঙালি বন্ধুর সংখ্যাই তার অনেকগুণ বেশি। সামান্য কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলেও মূলত স্পষ্ট বাংলাতেই তিনি বললেন, এই ব্যাপারটা আমরা টিভিতে দেখি, কাগজে পড়ি, কিন্তু সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে বলুন বা কাজের জায়গায় এই বাঙালি-অবাঙালি ডিভাইডটা কিন্তু নেই।

 
Electronic Paper