ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হা আর না কাহিনী

আলম তালুকদার
🕐 ১২:৩৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০১৯

অনেক দিন আগের কথা। মেলা সময় তো হবেই। তবে কত দিন বা কত সময় আগে তা ঠিক করে বলতে না পারলেও এটা ঠিক বহুত রাত আর দিন আগের ঘটনা। একদেশে ছিল এক ‘হা’। হাহা নয় বা হাহাকারও নয়। শুধু ‘হা’। এদিকে আরেকটা দেশ ছিল যেখানে শুধু ‘না’ নামে একটা শব্দ বসবাস করত। এই হা আর না ইচ্ছামতো বেড়াতো ইচ্ছা না হলে কিছুই করত না। নিজ নিজ দেশে একজন না না, না না করত আরেকজন হা হা, হা হা করত।

শব্দের তো কোনো ভিসা-পাসপোর্ট লাগে না, বুজলে কিনা, তো একদিন হা করছে কী, সে হা হা করতে করতে, পিং পং বলের মতো নাচতে নাচতে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। ওই দিকে না করছে কি, সেও যাচ্ছে। কে কোন দিক যাচ্ছে ওরাও জানে না আমিও জানি না। যেতে যেতেই বুঝলে কী না, হঠাৎ একবারে অকস্মাৎ এই হা এবং না-এর দেখা হয়ে গেল। আরে দেখা ঠিক নয়, ধাক্কা হয়ে গেল। এই ধাক্কা যেমন তেমন ধাক্কা নয়, একেবারে যাকে বলে রাম-ধাক্কা। রাম-ধাক্কা খেয়ে পাক্কা দুই ঘণ্টা দুই মিনিট ‘তবদা’ মেরে খাড়াইয়া একজন হাহা করতে করতে হ্যাঁ হ্যাঁ করতে থাকে। আরেকজনও কম নয়, নিজেকে সামাল দিয়ে সে আরেকটা গুতা মেরে তার না হয়ে গেল নানা, আর না না।

তো ‘হা’ যে দেশে বসবাস করত সে দেশে ‘হা’ ছাড়া কেউ কথা বলতে জানে না। এই যেমন-
-হা, তুমি কেমন আছ হা।
-হা আমি ভালো আছে হা।
-হা তুমি আমাকে পছন্দ কর হা।
-হা আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি হা। এই রমকের বাক্য দিয়ে তারা তাদের মনের ভাব প্রকাশ করত। আরও আছে যেমন;
-হা আমাকে ১০ টাকা ধার দেবে হা।
-হা দিব হা।
-তুমি যাবে হা।
-হা আমি যাব হা।

বুজলে কি না, সব বাক্যের শুরুতে শেষে বা মাঝকানে হা দিয়ে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। এভাবে হা হা করে হু হু করে দেশটার মানুষ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু যেদিন ‘না’ এর সাথে ‘হা’ এর আচমকা ধাক্কাটা লাগল আর কি সেদিন হতেই শুরু হলো মহা সমস্যা।

ঐদিকে ‘না’ তো এতিম। তার খবরে যাওয়া যাক। এই ‘না’ দেশের মানুষ ‘না’ দিয়েই তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। কেমন? একটু নমুনা দিই।
-তোমার নাম বলবে না?
-বলব না কেন?
-আমাকে ভালোবাসবে না
-না, বাসব না কেন?
-১০ টাকা দাও না।
-না দেব না কেন?
-একটা চকলেট দাও না
-না দেব না কেন?

এই রকমভাবে প্রশ্ন করা হতো আর জবাব দেওয়া হতো। এ দেশে ‘হা’ শব্দটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তারা জানতই না। এভাবে ‘হা’ আর ‘না’ দেশের লোক ভালোই চলছিল আর কী। কিন্তু যেদিন ‘হা’ আর ‘না’ এর সাথে ধাক্কা লাগল আর কি সে দিন হতেই সমস্যাটা শুরু।

সমস্যা আর কিছুই না। ‘হা’ শব্দটা ‘না’ এর দেশে আর ‘না’ শব্দটি ‘হা’ এর দেশে ভিসা পাসপোর্ট ছাড়াই চলে গেল, তাই না। যে যেটায় অভ্যস্ত নয় সে সেটার পাল্লায় পড়ে গেল। ‘না’ দেশের সমস্যা হলো না শব্দটি কমে হিয়ে হা শব্দটি হা হা করে তেড়ে আসে। তাতে অনেকের মাথা ঘুরতে থাকে। মাথা বো বো করে ঝিম ঝিম করে। ওই দিকে ‘হা’ দেশের সমস্যা হলো হঠাৎ করে ‘না’ ঢুকে যায়। তাতে অনেকের মেজাজ খিঁচড়ে গিয়ে বিগড়ে যায়। কারণ তাদের মাথা আর মন ঐভাবে তৈরি নয়। তারা সব কিছুতেই হোঁচট খায়। হা, নাকি না, নাকি হা হা নাকি না না? এমন একটা চক্রের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। একই ব্যক্তি হা বলে আবার না বলে। কখন যে হা বলে আর কখন যে না বলে সে এক ঘোরতর ব্যাপার হয়ে গেল।

একজন ব্যক্তিকে দুটো শব্দ নিপুণভাবে জব্দ করতে থাকে। উভয় দেশে একই সমস্যা দেখা গেল। শৃঙ্খলার জায়গায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। সকালে হা, বিকালে না বলে। এমন অবস্থায় সমস্যাটা সমুস্যায় রূপান্তরিত হয়। প্রথম দিকে উভয় দেশের মানুষের মধ্যে পাগল পাগল ভাব দেখা যায়। শেষে অনেকেই উন্মাদ হয়ে যায়। যারা উন্মাদ হয়ে যায় তারা ‘উন্মাদ’ পত্রিকাটা চালাচ্ছে বলে মনে করতে পার। আর যারা পাগল মানে পা কে গোলাকার মনে করে তারা পাবনা হেমায়েতপুরের বাসিন্দা হয়েছে বলে মনে করতে পার। এই ‘হা’ এর সাথে ‘না’ এর ধাক্কা না লাগলে ‘উন্মাদ’ পত্রিকার জন্মই হতো না। এই কারণেই সোজা বিষয়টা সমস্যার রূপ নিয়েছে!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper