ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভেঙেছে সাধুর হাট

দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
🕐 ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০১৯

ভেঙেছে সাধুদের হাট। সাধুরা ফিরতে শুরু করেছেন যে যার আপন ঘরে। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া লালন আখড়াবাড়িতে ১২৯তম তিরোধান দিবসের আয়োজন তিন দিনের হলেও বাউলভক্তদের প্রথাগত নিয়মে পুণ্যসেবার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে শেষ হয়েছে তিরোধান আনুষ্ঠানিকতা। তবে মেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলেছে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত।

দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাউলরা নিজ নিজ আস্তানা ছেড়ে বিছানাপত্র গুছিয়ে রওনা হয়েছে। যাওয়ার আগে আখড়া বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। গুরুকে বারবার সালাম-প্রণাম ও নানারকম ভক্তি-শ্রদ্ধা জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। গুরুভক্তি আর সিদ্ধ মন নিয়ে বিদায় নেওয়ার সময় অনেক বাউল চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। মনে প্রত্যয়, আবার দেখা হবে সাঁইজির উদাসী ডাকের টানে। গুরু মহির শাহ জানান, সাঁইয়ের জীবদ্দশায় শুধু তার ভক্ত আর শিষ্যদের নিয়ে উৎসব করতেন। সে নিয়ম মেনেই বাউলরা ভাটায় আসে উজানে ফিরে যায় আপন নিবাসে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা মরা কালীগঙ্গায় স্নান সেরে মাছ-ভাত ও ত্রিব্যঞ্জন দিয়ে (তিন ধরনের সবজির তরকারি) পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। পুণ্যসেবা গ্রহণকে কেন্দ্র করে দুপুর ১টায় লালন একাডেমির প্রধান ফটক বন্ধ থাকে। ভেতরে লাইন দিয়ে কলাপাতা সামনে নিয়ে হাজার হাজার সাধু ফকিরের অপেক্ষা। একটু পরেই একযোগে শুরু হলো খাবার বিতরণ। তবে কোনো তাড়াহুড়ো নেই। সবাই খাবার পাওয়ার পর বিশেষ আওয়াজ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হলো বিতরণ শেষ। এবার খাওয়া শুরু হলো একযোগে। মাছ, ভাত ও সবজি দিয়ে প্রায় ৫ হাজার বাউল, সাধু ফকির পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনা সভার মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী তিরোধানের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

প্রকৃত বাউলরা সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজখবরও রাখেন না। তাদের মঞ্চে ডাকলেও আসন ছেড়ে ওঠেন না। ভোরে সূর্য ওঠার আগেই অহিংস মানবতা প্রতিষ্ঠায় আপন মোকামে গুরুর চরণ ছুঁয়ে দীক্ষা নিয়ে ভক্তি নিবেদন করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে অনেক বাউল। লালন আখড়ার আশপাশে ও একাডেমির নিচে যারা আসন গাড়েন তারা সাঁইয়ের ভক্তি আর আরাধনায় নিমগ্ন থাকেন। স্থান ত্যাগ করেন না।

বিদায় বেলায় লালন অনুসারীরা বলেন, সমাজ-ইতিহাসের ধারায় বিচার করলে বলা যায়, গ্রামবাংলার মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন লালন ফকির। সামাজিক ভেদনীতি, শ্রেণিবৈষম্য, বর্ণ, শোষণ, জাতপাতের কলহ ও সাম্প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। লালনের নাম আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে উচ্চারিত হয়।

একজন গ্রাম্য নিরক্ষর সাধকের এ অর্জন ও প্রতিষ্ঠা স্বভাবতই বিস্ময় জাগায়। মানুষের প্রতি মানুষের শোষণ-বঞ্চনা-অবিচারের চির অবসান কামনা করে সাধক লালন শ্রেণিহীন শোষণমুক্ত মানবসমাজের স্বপ্ন দেখেছেন।

 
Electronic Paper