ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শিশুরাই আমার ধ্যান-জ্ঞান

লাকী ইনাম
🕐 ৮:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৯

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে খোলা কাগজ মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনামের। দেশের নাট্যজগতের প্রথিতযশা এই অভিনয় শিল্পী প্রায় পাঁচ দশক ধরে আছেন থিয়েটারের সঙ্গে। পেয়েছেন একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদকসহ নানা সম্মাননা। সাইদ রহমান ও কাজী সায়েমের সঙ্গে আলাপে আলাপে মনের আগল খুলে দিয়েছেন। বলেছেন একাডেমির নতুন দায়িত্ব, শেখ রাসেল, নিজের অভিনয়, থিয়েটার, শিশুদের ওপর নৃশংসতা, বাংলা নাটক সম্পর্কে-

শিশু একাডেমির নতুন দায়িত্ব। আপনার অনুভূতি এবং পরিকল্পনা জানতে চাই...

বাংলাদেশে যতগুলো স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা আছে, আমি মনে করি শিশু একাডেমি তার মধ্যে অন্যতম এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে শিশুদের নিয়ে কাজ হয়। শিশুদের সাংস্কৃতিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে শিশু একাডেমি। সবচেয়ে বড় কথা, সব জেলায় একাডেমির শাখা আছে। উপজেলায়ও শুরু হয়েছে, ইতোমধ্যে ৬টিতে শাখা স্থাপন করা হয়েছে। তাই আমার দায়িত্বটা অনেক বড়। শাখাগুলো কেমন আছে, কাজ কেমন হচ্ছে, কীভাবে কাজ আরও বাড়াতে হবে, আমি শুরুতেই এই বিষয়গুলোতে নজর দিতে চাই।

ঢাকায় যে মেইন শাখা, সেখানে তো অনেক কাজ হচ্ছে। অনেক শিশু ইনভলভ হচ্ছে। নাচ, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, ইংরেজি শেখা, প্রতিবন্ধী বাচ্চাদেরকে তাদের পদ্ধতিতে শেখানো...। ভবিষ্যতে পথশিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করেছি। আমার মনে হয়, ঢাকায় কার্যক্রম ভালোই আগাচ্ছে, তাই এখন জেলা শাখার কার্যক্রমের দিকে একটু বেশি নজর দেব।

আপনি তো থিয়েটারের মানুষ। হঠাৎ শিশুদের নিয়ে কাজ করতে...
বটে। তবে একটা প্লাস পয়েন্ট হলো, আমার থিয়েটার স্কুল ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামা’র একটা শিশু শাখা আছে। নাম শৈশব। ওখানে দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের পর্যবেক্ষন করেছি। মূলত আমরা ওখানে অভিনয়টাই শেখাই; সঙ্গে নাচ, গান, আবৃত্তি, কথা বলাসহ আরও অনেক কিছু থাকে। তাছাড়া বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করতে আমার খুবই ভালো লাগে। অতীতে বাচ্চাদের জন্য অনেকগুলো নাটকও নির্দেশনা দিয়েছি। তো এই দায়িত্বটা নেওয়ার পর মনে হচ্ছে, আমি আমার ভালো লাগার জায়গাটা পেয়ে গেছি।

শিশু নির্যাতন রোধ বা তাদের সুরক্ষায় শিশু একাডেমি কী ভূমিকা নেবে?
এই জায়গাটায় আমাদেরই দায়িত্ব, অনেক বড় দায়িত্ব। আমাদের কাজ কিন্তু শুধু সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিষয়গুলো শেখানোই নয়। সেজন্য শিশুদেরকে ঠিক ট্রেনিং নয় এক ধরনের গ্রুমিংয়ের ব্যবস্থা করবো আমরা, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের নিরাপদ করতে শেখে। একটা কিশোর বা কিশোরী কী কী পদ্ধতিতে তাকে সেভ করতে পারে, সেটা শেখানোর ব্যবস্থা করবো। এমন একটা পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। সঙ্গে অভিভাবকদেরকেও অ্যালার্ট করার ব্যবস্থা করবো।

এখনকার অবস্থা তো খুবই খারাপ। ছোট ছোট শিশু ধর্ষিত হচ্ছে। দু’দিন আগে একটা শিশুকে নৃশংসভাবে মেরে ফেলা হলো। পত্রিকায় বেরিয়েছে, এর সঙ্গে নাকি স্বয়ং বাবাও জড়িত। কী ভয়ঙ্কর! তাই এই বিষয়ে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করতে চাই। অভিভাবকদেরকে খুব সাবধানের সঙ্গে বাচ্চার দেখাশোনা করতে হবে। বাচ্চাটা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, কাদের সঙ্গে খেলছে-এসব বিষয়ে নজর রাখতে হবে। বাবা-মা’র দায়িত্ব এখন অনেক বেশি, কারণ জানি না কেন, মানুষ অনেক বেশি হিংস্র হয়ে গেছে। আমাদের সময় তো এতটা ছিল না।

শেখ রাসেলের জন্মদিন ছিল গতকাল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে তাকেও রেহাই দেওয়া হয়নি...
বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হতো ৫৫। যারা এই হত্যাকা-টি ঘটিয়েছে তারা তো শেখ রাসেলকে মুক্তি দিলেও পারতো। সে তো একটা শিশু। কিন্তু পাষ-দের হাত কাঁপেনি। আমরা এখন যে শিশু হত্যাকা-ের কথা বলি, এর মধ্যে তো শেখ রাসেলও চলে আসে। তাই আমি মনে করি, শিশু রাসেলকে বারবার স্মরণ করা উচিৎ, যেন এর মধ্য দিয়ে আমরা একটা আলোকিত সমাজ গড়তে পারি, যে সমাজে শিশুরা ফুলের মতো ফুটবে, তাদের গায়ে কেউ একটা আঁচড়ও দেবে না।

এই জন্মদিনে শিশু একাডেমি কী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে?
গত ৭ তারিখ থেকে আমরা শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রী দেশে ছিলেন না বিধায় ৯ তারিখে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। ওইদিন তিনি শিশু একাডেমিতে এসেছিলেন এবং শেখ রাসেল গ্যালারি নামে একটি গ্যালারির উদ্বোধন করেছেন। বাবার কোলে, মায়ের কোলে কিংবা বাবার হাত ধরে কোথাও যাওয়া, শেখ রাসেলের এমন নানাবিধ ছবি আছে ওখানে।

জন্মদিন উপলক্ষে শেখ রাসেলের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি আমরা। বিশেষ করে বাচ্চাদের ছবি আঁকার আয়োজন করেছি আমরা, সবাই শেখ রাসেল ছবি আঁকবে। এটা একটা প্রতিযোগিতা, আঁকা শেষে ক্ষুদে আঁকিয়েদের পুরস্কার দেওয়া হবে। শেখ রাসেলকে যেখানে সমাহিত করা হয়েছে, বনানী কবরস্থান, সেখানে একাডেমির বাসে শিশুরা যাবে এবং ফুল দিবে। শিশুরা তো শেখ রাসেলকে দেখেনি, আমি চাই তারা ছবি দেখে কল্পনা করুক, ভাবুক।

শেখ রাসেল সম্পর্কে শিশুদের জানাতে কী উদ্যোগ আছে আপনাদের?
একটা বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি আমরা। সেটা হলো, শেখ রাসেলের ওপর একটা প্রামাণ্যচিত্র বানানো। ছবি তো অনেক আছে কিন্তু একটা ডকুমেন্টারি বানিয়ে সেটা শিশুদেরকে দেখানো। এর মধ্য দিয়ে একটা বৈচিত্র্য আসবে। গ্যালারিতে তো ছবি আছেই, আমরা আরও খুঁজছি। একটু সময় নিয়ে সুন্দর একটা প্রামাণ্যচিত্র বানাতে চাই।

প্রাথমিক লেভেলে পাঠ্যবইয়ে শেখ রাসেলের জীবনী সংযুক্ত করার বিষয়ে আপনাদের কোনো ভাবনা আছে কি?
এটা হতে পারে এবং এটা খুব ভালো হবে। এই শিশুটিই বোধহয় বাংলাদেশ জন্মের পর প্রথম শিশু যাকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। তাছাড়া সে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান। তাই তার ব্যাপারে এমন একটা উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ। আমরা বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই ভাববো। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, পাঠ্যবইয়ে শেখ রাসেলের জীবনী আসা উচিত।

আপনাকে এখন কেন স্ক্রিনে দেখা যায় না?
আমাকে স্ক্রিনে দেখা যায় না ব্যস্ততার জন্য। আগে তো সব কিছু করেছি, এখানে ওখানে ছুটেছি। সেই ছুটাছুটিটা এখন বিশেষ কিছু জায়গায় দিচ্ছি। যাতে সেখানকার কাজগুলো ভালো হয়। যেমন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কিছু প্রোগ্রামে সময় দিচ্ছি। রিসেন্টলি দুরন্ত টেলিভিশনে একটা ধারাবাহিকে অভিনয় করেছি। ওটা ছাব্বিশ বা ত্রিশ পর্বের মতো গেছে। সেখানে আমি একসঙ্গে দুটো ক্যারেক্টার করছি। একরূপে দাদি, আরেক রূপে নানী। তো সেখানে সকাল বেলা যাচ্ছি, সেই রাত পর্যন্ত শুটিং করছি। বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ তো, খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। যেতে হয় একদম ঠিক সময়ে। কারণ বাচ্চারা এসে থাকবে, আমি দেরিতে গেলাম, সেটা তো হতে পারে না। তাহলে তারা আমার কাছে কী শিখবে? আমি শুটিংয়েও এই কাজটা করি। সবার আগে যাই এবং বাচ্চারা চলে যাওয়ার আগে আমি আসি না। বাচ্চারা কীভাবে যাচ্ছে, সেটা দেখা হয়তো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু তারপরও সেটা আমি খুব নীরবে অবজার্ভ করেছি।

তো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওখানেই কেটেছে দীর্ঘ তিন চার মাস সময়। টানা কাজ করেছি। এই সময়ের মধ্যে অন্য কোনো কাজ হয়নি। আমার থিয়েটার স্কুলে পর্যন্ত ক্লাস নিতে পারিনি। এখন মিডিয়ার কাজগুলো এমন যে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত করতে হবে। আমি একটা পুরো দিন আমার পরিচালককে দিয়ে দিচ্ছি। তার বদলে উনি আমাকে পেমেন্ট দিচ্ছেন। এখন সব ডে সিস্টেমের হয়ে গেছে। আগে আমরা একটা ধারাবাহিকে পর্ব হিসেবে কাজ করতাম। হুমায়ূন আহমেদের বাহান্ন পর্বের নাটকে কাজ করেছি। পর্ব হিসেবেই সেখানে সব ডিল হলো। এখন সব ডে বেসিস।

আবার ডেট দিয়ে সেটা নষ্ট করাও ঠিক না। আমি নিজে একজন ডিরেক্টর। আমি অনেক প্যাকেজ, ধারাবাহিক নাটক তৈরি করেছি। আমি তো জানি, একজন শিল্পী যদি কমিটমেন্টে ফেইল করে, একজন ডিরেক্টরের তখন কী অবস্থা হয়। ফলে সবমিলিয়ে আমি দেখলাম, আমার কোনো কাজই হয় না। তাই টিভি নাটকে অভিনয় এক প্রকার বন্ধই করে দিয়েছি।

এখন আবার শিশু একাডেমির নতুন দায়িত্ব। তাহলে ব্যস্ততা তো আরো বাড়বে...
তা তো বটেই। তবে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে কাজ করার চেষ্টা থাকবে। আমার মেয়ে হৃদিও ওর নাটকে অভিনয় করার জন্য রিকোয়েস্ট করে, কিন্তু না করা ছাড়া আমার কিছু করার থাকে না। শিগগিরই ওর একটা ধারাবাহিক শুরু হচ্ছে এনটিভিতে। আমাকে বিভিন্ন চরিত্রে কাজ করার অফার দিয়েছে। ও বলে, তুমি কোনটা চাও। কোন চরিত্রটা তোমার ভালো লাগছে। বলি যে, আমার সবগুলোই ভালো লাগছে। বাট আমি সময়টা দিতে পারব না।

আপনি তো মঞ্চের মানুষ। ওইদিকটার কী অবস্থা?
মঞ্চ নাটক খুব ভালো চলছে। বেশির ভাগ সুপারভাইস করি। আমি লাস্ট ডিরেকশন দিয়েছি, ‘ক্রীতদাসের হাসি’তে। হৃদি এখন একটা নাটক করছে, নাম লেটো। আমাদের জাতীয় কবি নজরুল কিন্তু লেটোর দলে কাজ করতেন। তখন উনাকে বলা হতো ব্যাঙাচি।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচটি নাটক প্রযোজনা করতে দেওয়া হয়েছে পাঁচজন ইয়াং ডিরেক্টরকে। হৃদির ভাগে পড়েছে লেটো। উৎসব হবে, সেই উৎসবে এই নাটকগুলো দেখানো হবে।

আমি এখন লাইনে আছি। সুযোগটা পাচ্ছি না ইয়াংদের জন্য। নিজের লেখা একটা নাটক; সেটা অনেক দিন ধরে পড়ে আছে। সেটা করব শিগগিরই। বেশি ব্যস্ততা নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট নিয়ে। সপ্তায় দুই তিন দিন ক্লাস আছে। ছ’মাসের কোর্স। বছরে দুটো ব্যাচ বের হয়। পচিশতম ব্যাচ বেরুবার জন্য রেডি। ওদের আবার একটা প্রডাকশন হয়। নাটকগুলোতে বেশির ভাগ সময় আমিই ডিরেকশন দিই। তো সেটার কাজ চলছে। এগুলো নিয়ে খুব ব্যস্ত।

তাহলে থিয়েটার নিয়ে আপনার অনেক প্ল্যান...
হ্যাঁ। থিয়েটার নিয়ে আমার অনেক প্ল্যান। আমার খুব প্যাশনের জায়গা। তাছাড়া আমি খুবই এনজয় করি। প্রায় পাঁচ দশকের যাত্রা। ১৯৭২ সালের ১৭ই জুলাই থেকে যাত্রা শুরু। প্রথম মঞ্চে আমাদের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের যে প্রথম প্রযোজনা, তা ছিল ‘বুড়ো শালিকের ঘাঁড়ে রোঁ’ নামক প্রহসন। ওই যে মঞ্চে উঠেছিলাম, আজ পর্যন্ত মঞ্চের কাছেই আছি। উপরে আছি, নয় পাশে আছি, নয় সঙ্গে আছি, নয় পেছনে আছি। আমি কখনোই মঞ্চকে ছাড়িনি।

আপনার তো ফ্যামিলির সবাই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত...
মেয়ে বা জামাইরা শুধু নয়, যারা শিশু আছে তারাও। নাতিরা এখন থেকেই অভিনয় করে। ওদের যদি বলা হয়, কিছু করে দেখাও। ওরা এখনই এখানে মঞ্চ বানিয়ে ফেলবে। তাৎক্ষণিক স্ক্রিপ্ট রেডি করবে, সংলাপ নিয়ে পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করবে। সবমিলিয়ে আট-দশ মিনিটের মধ্যে একটা ছোটখাটো নাটক বানিয়ে ফেলবে।

টেলিভিশনগুলোতে এখন শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান কম হচ্ছে। রিয়ালিটি শো হচেচ্ছ হয়তো কিন্তু শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হচ্ছে কম। আপনার কী মন্তব্য?
হ্যাঁ, আরো কিছু অনুষ্ঠান হওয়া উচিত। বিটিভি কিছু করছে, আর বিশেষায়িত চ্যানেল দুরন্ত তো করছেই। দুরন্তের মতো আরও কয়েকটি শিশুদের চ্যানেল থাকলে ভালো হতো। তবে যে চ্যানেলগুলো আছে তারাও দু’একটা করে বাচ্চাদের অনুষ্ঠান করতে পারে।

হবাংলা নাটকের মান ভয়ানকভাবে পড়ে যাচ্ছে...
এ বিষয়ে তোমার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমি তো টিভি নাটকে অভিনয় করা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। অথচ এখনও মানুষ আমাকে বলে, নক্ষত্রে রাতে আপনার অভিনয়, কাদের ভাইয়ের আমার কিছু দৃশ্য আছে চোখে লেগে আছে। আমি অবাক হয়ে ভাবি, কত আগের কাজ অথচ মানুষ এখনও মনে রেখেছে।

এখন তো শুধু কমেডি হচ্ছে, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কী বিচ্ছিরি করে কথা বলছে! ভাবছে লোকে এতেই হেসে গড়াগড়ি খাবে। অথচ রীতিমতো বিরক্ত হচ্ছে দর্শক। তাই আমারও প্রশ্ন এখনকার নাটকগুলোতে কী হচ্ছে এসব? এই প্রশ্ন শুধু আমার না, সাধারণ দর্শকরাও বলছে এমন কথা। এখন যারা নাটক করে তাদের কাউকে আমাদের আলাদা করে মনে থাকে না। সবার মেকাপ যেন ঠিক এক রকম। ডায়লগও যেন একই। মর্ডান মেয়েরা কথা বলছে অকথ্য অশ্রাব্য ভাষায়!

আপনারা যারা সিনিয়র শিল্পী আছেন, এ নিয়ে আপনারা তো ভূমিকা রাখতে পারেন।
তা তো বটেই। যেখানে সুযোগ পাই সেখানেই তো বলি। মঞ্চে উঠলে, মাইক পেলেই তো এসব বলি। কয়েকদিন আগে ডিরেক্টরস গিল্ডের একটা অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন, কথা বলতে গিয়ে আমি এসবই বলেছি। আমি পরিস্কার ভাষায় বলছি, আপনি যে-ই হোন না কেন, আপনার কোনো অধিকার নেই ভাষাকে বিকৃত করার, ভাষাকে নষ্ট করার। আঞ্চলিক ভাষার দোহাই দিয়ে ভাষাটাকে যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ইদানীং।

আপনি তো চলচ্চিত্রে খুব একটা অভিনয় করেননি...
হ্যাঁ, ওই অর্থে করিনি। তবে একটা সময় যখন শর্ট ফিল্মের খুব প্রচলন ছিল, তখন অনেকগুলো শর্টফিল্মে কাজ করেছি। প্রথম করেছি ‘দুরন্ত’ নামের একটা ফিল্মে। শিশু একাডেমির সামনে যে স্টাচুটা আছে দুরন্ত নামে, তার স্থপতি সুলতানুল ইসলামকে নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাটা। আমি আর আল মামুন অভিনয় করেছিলাম। আখতার বলে একটি ছেলে তৈরি করেছে।

জহির রায়হানের গল্প অবলম্বনে তার বড় ছেলের পরিচালনায় একটা ফিল্ম করেছিলাম ‘দেয়াল’ নামে। ‘আবর্তন’ নামে আরেকটা সিনেমা করেছিলাম যেটা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। ওটা ছিল আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘ছাতা’ গল্প অবলম্বনে। অভিনয় করেছিলাম আমি আর হায়াৎ ভাই। ছাতা একটা, বাবা বাজারে নেবে নাকি ছেলে স্কুলে নেবে, এই নিয়ে গল্প। এরকম অনেকগুলো ভালো ভালো শর্ট ফিল্ম করেছি ওই সময়। বড় ফিল্মে অভিনয় করার জন্য অনেকে ধরেছিল কিন্তু করিনি।

দীর্ঘ কর্মজীবনের স্বীকৃতি...
মানুষের ভালোবাসার জন্যই সব সময় কাজ করেছি এবং সেটা পেয়েছিও। এটাই আমার সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। তবে একুশে পদক পাওয়াটা ছিল আমার জন্য খুবই গর্বের। এই পুরস্কার পেয়ে আমি ভীষণ সম্মানিত বোধ করেছি। তাছাড়া শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কারও আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আরেকটা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছি কলকাতা থেকে শ্রেষ্ঠ নারী নির্দেশক হিসেবে। ওখানে কলকাতারও অনেক নির্দেশক ছিলেন। সবাই নিজের কাজ নিয়ে গেছেন। দু’দেশ মিলিয়ে আমার কাজই শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছে।

আপনি নিজ থেকে কিছু বলতে চান?
আমি তো অনেক কিছু বলতে চাই। কোনো অসঙ্গতি দেখলে আমি মনে খুব ব্যাথা পাই। এই যে একটা শিশুকে বাবা-চাচা মিলে খুন করলো, এটা কেন হবে? আমাদের মানবিক বোধ এত নিচে নেমে গেছে! আমি এটা নিয়ে খুব দুঃখ পাচ্ছি। কাকে কী বলবো বুঝতে পারি না। নুসরাত মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারা হলো। ছোট ছোট মেয়েগুলোও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

আমি প্রত্যেককে বলবো, প্লিজ আপনারা সচেতন হোন। নিজেকে নিয়ে একটু ভাবুন। আপনি সমাজের জন্য কী করতে পারেন তা নিয়ে চিন্তা করুন। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে ভাবুন, তাদের সুরক্ষা দিন। আমি আসলে শিশুদের নিয়ে খুব ভাবি। শিশুরাই আমার ধ্যান-জ্ঞান।

 

 

 
Electronic Paper